ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তিন শ’ সংসদীয় আসনের প্রত্যেকটিতে দশটি করে স্কুলের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে;###;একনেকে ১৪ হাজার ৪৮২ কোটি টাকার মোট ১৪ প্রকল্প অনুমোদন

নতুন ভবন পাচ্ছে ৩ হাজার বেসরকারী হাইস্কুল

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮

নতুন ভবন পাচ্ছে ৩ হাজার বেসরকারী হাইস্কুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের ৩০০ সংসদীয় এলাকার প্রত্যেকটিতে ১০টি করে মোট ৩ হাজার বেসরকারী হাই স্কুলের অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সর্বজনীন বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালুর ফলে মাধ্যমিক স্তরে (হাইস্কুল) ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কয়েক দশকে ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বৃত্তি কর্মসূচীর ফলে দেশব্যাপী মাধ্যমিক ছাত্রীদের সংখ্যাও বেড়েছে। তবে বর্ধিত শিক্ষার্থীর তুলনায় দেশজুড়ে বেসরকারী হাই স্কুলগুলোর অবকাঠামো বাড়েনি। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে কমপক্ষে ৩০০ শিক্ষার্থী রয়েছে এমন স্কুলের বর্ধিত অবকাঠামো চাহিদা পূরণ করতে চায় সরকার। এজন্য ১০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ‘নির্বাচিত বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। সভায় মোট ১৪টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন পায়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ১৮ হাজার ৪৮২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণে যোগ্য সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা বাড়ানো হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩২৭টি সরকারী ও ১৯ হাজার ৩৫৭টি বেসরকারী হাই স্কুল রয়েছে। এসব স্কুলে ৯১ লাখ ৬০ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ১৯৯৪ সালে ছাত্রীদের জন্য গৃহীত কর্মসূচী চালুর কারণে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়ন হয়নি সেভাবে। মন্ত্রী জানান, প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার হাই স্কুলের একাডেমিক ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য ভবন নির্মাণ এবং প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহ করা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করবে। প্রকল্পের সম্পূর্ণ ব্যয় সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে মেটানো হবে। প্রতি জেলায় ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র হচ্ছে ॥ বিভিন্ন দুর্যোগে ত্রাণসামগ্রী দ্রুত পৌঁছানোর লক্ষ্যে জেলা পর্যায়ে সংরক্ষণের জন্য কোন গুদাম নেই। প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অস্থায়ীভাবে অপর্যাপ্ত পরিসরে এবং কোন কোন জেলায় পরিত্যক্ত ভবনে ত্রাণসামগ্রী (ঢেউটিন, তাঁবু, কম্বল এবং অন্যান্য শীতবস্ত্র, শুকনা খাবার ইত্যাদি) সংরক্ষণ করা হয়। ফলে এসব ত্রাণসামগ্রীর গুণাগুণ নষ্ট ও চুরি হয়ে যায়। তাই দেশের ৬৪টি জেলায় ৬৬টি (ঢাকা ও পটুয়াখালী জেলায় ২টি করে) ত্রাণ গুদাম নির্মাণের লক্ষ্যে ‘জেলা ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র নির্মাণ’- শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ২৭৮ সংসদীয় আসনের গ্রামীণ এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সরকার সবার জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে চায়। এর অংশ হিসেবে প্রায় ৮৭৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ‘অগ্রাধিকারমূলক গ্রামীণ পানি সরবরাহ’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী ওয়াসাভুক্ত এলাকার বাইরে দেশের ২৭৮ সংসদীয় এলাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ এলাকায় গভীর ও অগভীর নলকূপ, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং এবং পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ডিসেম্বর ২০১৯ মেয়াদকালে প্রকল্পের কাজ শেষ করবে। অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্প ॥ সভায় ১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকায় বন্যাপ্রবণ ও নদী ভাঙন এলাকায় বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্প, ১৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় মহানন্দা নদী ড্রেজিং ও রাবার ড্যাম প্রকল্প ও ১ হাজার ২৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এছাড়াও বৃহত্তর ফরিদপুরের চরাঞ্চল এবং পার্শ¦বর্তী এলাকায় গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ও দুগ্ধের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতকরণ কারখানা স্থাপন প্রকল্প, যার সম্ভাব্য ব্যয় প্রায় ৩৪৪ কোটি কোটি টাকা; নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প, প্রাক্কলিত ব্যয় ৫৯৯ কোটি টাকা এবং বগুড়া উপজেলার সাথে সংযুক্ত চাপাপুরা-বগুড়া, নিমসার-বরুড়া এবং খাজুরিয়া-বরুড়া জেলা মহাসড়ক তিনটি যথাযথ মানে ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, যার ব্যয় ১৫৭ কোটি টাকা অনুমোদন পেয়েছে। অন্যদিকে ১১২ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বহুতল অফিস ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৫৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতটি র‌্যাব কমপ্লেক্স নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, ৩৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে এ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) শিল্প পার্ক (৩য় সংশোধিত) প্রকল্প, ১ হাজার ৬১৮ কোটি টাকার জরুরী ২০০৭ ঘূর্ণিঝড় পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসন প্রকল্প (ইসআরআরপি) : এলজিইডি অংশ (৩য় সংশোধিত) প্রকল্প এবং ইমারজেন্সি ২০০৭ ঘূর্ণিঝড় পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসন এবং প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেশন এ্যান্ড মনিটরিং ইউনিট প্রকল্প (তৃতীয় সংশোধিত) ১ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে অনুমোদন পেয়েছে। মন্ত্রী জানান, প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, সংস্থার নিজস্ব ব্যয় ৯৫ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ২ হাজার ১৭ কোটি টাকা পাওয়া যাবে।
×