ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একই পরিবারের চারজনের ব্যাংক পরিচালক হতে আর বাধা রইল না

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮

একই পরিবারের চারজনের ব্যাংক পরিচালক হতে আর বাধা রইল না

সংসদ রিপোর্টার ॥ একই পরিবারের চারজন সদস্য কোন ব্যাংকের পরিচালক হতে আর বাধা রইল না। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রবল আপত্তি মুখে পরিচালক পদে একই পরিবারের দুইজনের পরিবর্তে চারজনকে সুযোগ দিয়ে বহুল আলোচিত-সমালোচিত ‘ব্যাংক-কোম্পানি (সংশোধন) বিল, ২০১৮ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে পাস করা হয়েছে। প্রতিবাদে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা সংসদ থেকে ওয়াক আউট করেন। বিলটি পাসের ফলে একই পরিবারের চার সদস্য একটানা ৯ বছর কোন ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক পদে থাকতে পারবেন। জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। জাতীয় পার্টির ৭ সংসদ সদস্য বিলটির বিরোধিতা করে সংশোধনী ও জনমত যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাব দিলেও কণ্ঠভোটে তা নাকচ হয়ে যায়। এরপর বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হয়। বিলটির বিরোধিতা করে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বলেন, ব্যাংকিং খাতকে অবাধ লুণ্ঠনের ব্যবস্থা করতেই এই বিলটি আনা হয়েছে। অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের রীতিমতো সাগর চুরি হয়েছে, হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন হয়ে গেছে। ব্যাংকের প্রতি দেশের মানুষ ক্রমশ আস্থা হারাচ্ছে। কতিপয় ব্যক্তির লুণ্ঠনের সুযোগ দিতে আমরা সংসদে আইন করে কোন পারিবারিক করতে দিতে পারি না। দেশে যেন আর পাকিস্তানের ২২ পরিবারের সৃষ্টি না হয়। একই ব্যক্তি টানা ৯ বছর পরিচালক থাকলে সেখানে ব্যক্তি শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। তারা আইনটি পাস না করে প্রত্যাহারের জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি দাবি জানান। জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এই আইনটি কয়েক বছর ধরেই পর্যবেক্ষণ করছি। পর্যবেক্ষণের ফলে ব্যাংক কোম্পানির আইনটি সংশোধনীর প্রস্তাবটি গত দেড় বছর ধরে আলোচনা করছি। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর সংসদে আইন আকারে উত্থাপন করা হয়েছে। এটার জন্য আর যাচাই-বাছাই করার কোন সুযোগ নেই। তাই যারা এসব প্রস্তাব দিয়েছেন তাদের অনুরোধ করব তা যেন প্রত্যাহার করে নেন। এ সময় বিরোধী দলের সংসদ সদস্য একযোগে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। এ সময় ডেপুটি স্পীকার বলেন, বিলটি মাঝ পথে নতুন করে কোন বক্তব্য দেয়ার সুযোগ নেই। কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী অনুমোদন করে না বলেই কাউকে ফ্লোর দিতে পারছি না। সংশোধনী দিয়েছেন, তা নিয়েও কথা বলতে পারেন। অর্থমন্ত্রী সংশোধনীগুলো বিবেচনাও করতে পারেন। ফ্লোর না পেয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা সংসদ থেকে প্রতীক ওয়াক আউট করেন। বিরোধী দলের সঙ্গে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজীও ওয়াক আউট করেন। ওয়াক আউটের ফলে তাঁদের সংশোধনীগুলো সংসদে উত্থাপিত হয়নি। এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদে বিলটি উত্থাপন করেছিলেন। বিলটি সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রথম দিকে এক পরিবারের চারজন পরিচালক নিয়োগের বিরোধিতা করলেও পরবর্তীতে চারজন রেখেই বিলটি চূড়ান্ত করা হয়। বর্তমানে এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ দুজন একটি ব্যাংকের পরিচালক হতে পারেন। তিন বছর করে দুই মেয়াদে ছয় বছর পরিচালক থাকার পর তিন বছর বিরতি দিয়ে আবারও পরিচালক হওয়ার সুযোগ রয়েছে তাঁদের। কিন্তু মঙ্গলবার সংসদে পাসকৃত বিলে বলা হয়েছে- বিলটি কার্যকর হওয়ার পর কোন ব্যক্তি কোন ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক পদে একাধিক্রমে ৯ বছরের অধিক অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। বিলের আরও বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি একাধিক্রমে ৯ বছর কোন ব্যাংক-কোম্পানির পদে অধিষ্ঠিত থাকলে উক্ত মেয়াদ শেষ হবার পর তিন বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি উক্ত ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক পদে পুনঃনিযুক্ত হবার যোগ্য হবে না। ব্যাখা হিসেবে বলা হয়েছে, এ ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কোন ব্যক্তি পরিচালক পদে ৩ বছরের চাইতে কম সময় অধিষ্ঠিত না থাকলে একাধিক্রমে ৯ বছর গণনার ক্ষেত্রে উক্ত সময়ও অন্তর্ভুক্ত হবে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোন পরিবারের কেউ পৃথকভাবে ব্যবসা করলে এবং নিজেই করদাতা হলে তাঁকে পরিবারের ওপর নির্ভরশীল বলা যায় না। বর্তমান বিধানে একক পরিবার থেকে পরিচালক পদে নিয়োগযোগ্য সদস্যসংখ্যা দুজনে সীমিত। এতে করে পরিচালকগণ ধারাবাহিকভাবে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন না। একক পরিবার থেকে দুজনের স্থলে চারজনকে সুযোগ দেয়া হলে এ সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে। নতুন প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকগুলোর সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে সকল ক্ষেত্রেই যাতে ধারাবাহিকভাবে সর্বোচ্চ নয় বছর পর্যন্ত পরিচালক পদে থাকার সুযোগ সৃষ্টি হয় সেই লক্ষ্যে সংশোধনী প্রস্তাবটি করা হয়েছে।
×