ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৫ সদস্যের কমিটি

চিকিৎসক ও রোগীর সুরক্ষায় আইন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮

চিকিৎসক ও রোগীর সুরক্ষায় আইন হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রোগী ও চিকিৎসকদের সুরক্ষার জন্য আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। আগামী সাত দিনের মধ্যে আইনটি চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্যসেবা আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত সভায় সভাপতিত্বকালে তিনি এ নির্দেশ দেন। কমিটিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিবসহ বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, হাসপাতালে রোগী এবং চিকিৎসকদের সুরক্ষার লক্ষ্যে আইন প্রয়োজন। দ্রুত আইনটি মন্ত্রিসভা বৈঠকে উত্থাপনের জন্য প্রস্তুত করার নির্দেশ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বাংলাদেশে সরকারী ও বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ ও গ্রহণের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরের বিভিন্ন অনাকাক্সিক্ষত ঘটেছে, যা খুব উদ্বেগজনক। এরই ফল হিসেবে ‘রোগী এবং স্বাস্থ্যসেবা দানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন, ২০১৬’ এর খসড়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মতামত বিনিময়ের জন্যে প্রাথমিক বক্তব্য হিসেবে স্বাস্থ্য আন্দোলন মনে করে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান এবং রোগী উভয়ের স্বার্থ রক্ষা হয় এবং মানুষ সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসা পায় এটাই সবার কাম্য, তাই আইনে উভয়কে রক্ষার বিধান থাকতে হবে। এই আইন প্রথমে ২০১৪ সালে একটি খসড়া হয়েছিল ‘জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা দানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন, ২০১৪ এবং রোগী সুরক্ষা আইন, ২০১৪’ নামে। সে সময় স্বাস্থ্য আন্দোলন বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। অবশেষে ২০১৬ সালে নতুন করে খসড়া আসে এবং দুটি আইনকে এক করে ‘রোগী এবং স্বাস্থ্যসেবা দানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন, ২০১৬’ নাম রাখা হয়েছে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, চিকিৎসা অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের অপরাধ আমল অযোগ্য ও জামিনযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। অভিযুক্ত চিকিৎসককে ২ বছরের কারাদ- অথবা ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ে দ-িত করা হবে। অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দ-বিধির ৩০৪ ধারায় মামলা করা হবে। পক্ষান্তরে স্বাস্থ্যসেবা দানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি সহিংস কাজ করলে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। সে ক্ষেত্রে সেবাদানকারী ও প্রতিষ্ঠানের কোন সম্পত্তির ক্ষতিসাধন, বিনষ্ট করা, ধ্বংসের মতো অপরাধের শান্তি ৩ বছরের সশ্রম কারাদ- এবং সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ে দ-িত করা হবে। এ সংক্রান্ত অপরাধ আমলযোগ্য এবং জামিন অযোগ্য হবে। আইন দুটি প্রণয়নের প্রেক্ষাপট ॥ দেশের সরকারী-বেসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত-আধাস্বায়ত্তশাসিত হাসপাতাল, ক্লিনিক, চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বার এবং রোগ নির্ণয় কেন্দ্র, চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী চিকিৎসক ও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অবহেলার অভিযোগ উঠছে। একইসঙ্গে ভঙ্গ করা হচ্ছে চিকিৎসাসেবা, পেশার অঙ্গীকার ও আচরণবিধিও। রোগীকে করা হচ্ছে হয়রানি। আর্থিকভাবেও তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। রোগীদের হয়রানি, মানসিক ও আর্থিক ক্ষতিসাধনসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এতে দেশের চিকিৎসাসেবা প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোটা চিকিৎসা ব্যবস্থায় অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সে ক্ষেত্রে অবহেলার শিকার রোগীর সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে বেসরকারী টেলিভিশনের ক্যামেরা। এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার রোগী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি গ্রহণ করা হয় স্বাস্থ্যসেবা দানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন প্রণয়নের।
×