ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নেপিডো চুক্তির খবরে রোহিঙ্গা শিবিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮

নেপিডো চুক্তির খবরে রোহিঙ্গা শিবিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মঙ্গলবার মিয়ানমার-বাংলাদেশ ফিজিক্যাল এ্যারেজমেন্ট চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া প্রত্যাবাসনে রাজি না হওয়ার জন্য কিছু রোহিঙ্গা নেতা উস্কানিমূলক তৎপরতা শুরু করেছে। এতে করে অসহায় সাধারণ রোহিঙ্গারা বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে। পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ভ-ুল করতে চায়। এর নেপথ্যে রয়েছে বহুবিধ কারণ। মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে ফিজিক্যাল এ্যারেজমেন্ট নামের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম চালানোর এ চুক্তির কথা প্রচার হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পক্ষে উন্মুখ হয়ে আছে। অপরদিকে, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ২০১৬ সালের পরে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে বিবেচনা করা হবে। কিন্তু ২০১৬ সালের আগে বহু রোহিঙ্গা এদেশে এসেছে। তাদের বিষয়ে মিয়ানমার চুক্তিতে কিছুই উল্লেখ করেনি। এখানে উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের অক্টোবর ও আগস্টের পর বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে বাংলাদেশে। এ সংখ্যা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে বাংলাদেশ পাসপোর্ট এ্যান্ড ইমিগ্রেশন অধিদফতরের উপ পরিচালক আবু নোমান মোহাম্মদ জাকির হোসেন মঙ্গলবার জানিয়েছেন, ১২টি অস্থায়ী আশ্রয় ক্যাম্পে ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৪৬২ জন রোহিঙ্গার নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। নিবন্ধনে নতুন ও পুরনোরা মিশ্রিত। অপরদিকে, গত সোমবার থেকে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে দুদেশের ৩০ সদস্যের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের টানা ১৩ ঘণ্টা বৈঠকের পর মঙ্গলবার সকালে আবারও শুরু হয় বৈঠক। এ বৈঠকে ফিজিক্যাল এ্যারেজমেন্ট নামের চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়েছে। ইতোপূর্বে মিয়ানমার সরকার প্রত্যাবাসন প্রশ্নে যেসব শর্ত দিয়েছে এর বিপরীতে রোহিঙ্গারাও আট দফার শর্ত দিয়েছে। এসব শর্তের কি হবে তা এখনও ধারণা করা যাচ্ছে না। তবে বিশ্ব চাপের মুখে মিয়ানমার পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি হয়েছে। এ লক্ষ্যে রাখাইন রাজ্যে ৩০ হাজার রোহিঙ্গার বসতির জন্য ক্যাম্প নির্মাণ চলছে। এদিকে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে আলোচিত হচ্ছে যেখানে দশ লাখেরও বেশি বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, সেখানে মিয়ানমারের বক্তব্য অনুযায়ী দৈনিক ৩ শ জন হারে প্রত্যাবাসন করা হলে সময় নেবে দীর্ঘ। তবে মিয়ানমারের পক্ষে বলা হয়েছে চুক্তিতে প্রয়োজনে ৫ শ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়া হবে। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক শেষে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ২০১৬ সালের আগে এদেশে আসা রোহিঙ্গারা উদ্বিগ্ন অবস্থায় রয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে কুতুপালং এলাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে রাখাইনে যাদের জমিজমা রয়েছে তারা নিঃসন্দেহে ফিরে যাবে। কিন্তু পুরনো রোহিঙ্গাদের মধ্যে নেতৃত্বদানকারীরা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। সকালে কিছু রোহিঙ্গা নেতা উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালি এবং দুপুরে বাঘঘোনা ক্যাম্পে গিয়ে দাবি পূরণ ছাড়া রাখাইনে ফিরে যেতে নিষেধ করেছে। তবে সাধারণ রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা ফিরে যেতে রাজি। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় একদিকে মিয়ানমারে যওয়ার পর কি হবে, অন্যদিকে ফিরে যেতে চাইলে পুরনো রোহিঙ্গারা কোন বিপদে ফেলবে তা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত রয়েছে। এ বিষয়ে সাধারণ রোহিঙ্গাদের পক্ষে জানানো হয়েছে, সরকারী প্রোটেকশনে তাদেরকে প্রত্যাবাসন করা হলে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা ঘুরে যাওয়ার পর থেকে কিছু চেনা জানা রোহিঙ্গা যুবক প্রতিটি শেডে এসে কারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে, কারা যাবেনা এবং কারা দশজনের কথার ভেতর থাকবে ইত্যাদি যাচাই করতে শুরু করেছে। জানা গেছে, ওই যুবকদের ভয়ে আপাতত রোহিঙ্গাদের কেউই স্বদেশে ফিরে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্যাম্প কমিটির একাধিক নেতা বলেন, প্রত্যাবাসন শুরু করার আগে ষড়যন্ত্রকারীদের দমন করতে হবে।
×