ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার জিয়া ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তিতর্ক শেষ, আজ আদেশ হতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮

খালেদার জিয়া ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তিতর্ক শেষ, আজ আদেশ হতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। অন্য আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আজ আদেশ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মঙ্গলবার এ মামলার অপর দুই আসামি কাজী সালিমুল হক ও শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু হলেও তা আজ বুধবারের জন্য তা মুলতবি ঘোষণা হয়। এর পরই রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আইনী পয়েন্টে জবাব দেবেন। এ দিকে বেগম জিয়ার স্থায়ী জামিন ও ব্যক্তিগত কারণে আদালতে না আসার দুটি আবেদন নামঞ্জুর করেছে আদালত। মামলার পরবর্তী দিন আজ বুধবার আদেশের সম্ভাবনা আছে। রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালত মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এই দশ দিনে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে পাঁচ আইনজীবী যুক্তিতর্কে অংশ নিয়েছেন। এরা হলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, এ জে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন ও আব্দুর রেজ্জাক খান। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল জনকণ্ঠকে বলেন, আমি আশা করছি আজই মামলার আইনী পয়েন্টে যুক্তিতর্ক শেষ করতে পারব। আইনী পয়েন্টে যুক্তিতর্ক শেষ হলেই আজই মামলার আদেশ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ দিকে মঙ্গলবার বেগম জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ যুক্তিতর্ক বলেন, এটা কোন মামলাই না। বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক নেতাদের ঘায়েল করার জন্য এমন মামলা করা হয়ে থাকে। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। এতে আমাদের নেত্রীর কোন ক্ষতি হবে না। বরং তার জনপ্রিয়তা বাড়বে। তিনিই হবেন বাংলাদেশের আগামী প্রধানমন্ত্রী। এর আগে বেলা ১১টা ৩৭ মিনিটে রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে উপস্থিত হন খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় হাজিরা প্রদান করেন। বেলা ১১টা ৪৩ মিনিটে তার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন তার আইনজীবী। মওদুদ আহমদ আরও বলেন, দুদকের অধীনে মামলাটি করা হলেও এর প্রক্রিয়া, অনুসন্ধান ও তদন্তকাজে দুদক আইনের যথাযথ অনুসরণ করা হয়নি। তাই এ মামলা চলারই কথা না। এসব বিবেচনায় আদালত খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত ও সম্মানজনক খালাস দেবেন আশা করি। এ দিকে মওদুদ আহমেদ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া খালেদা জিয়াকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন জানান। এ সময় তিনি বলেন, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অসুবিধার কারণে খালেদা জিয়া আগামী দুদিন তার ব্যক্তিগত উপস্থিতি থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। এর আগে আদালত তার অস্থায়ী জামিন মঞ্জুর করেছিলেন। এবার স্থায়ী জামিনের আদেশ দেয়া হোক। এর বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল স্থায়ী জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন , এর আগে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না মর্মে হাইকোর্ট থেকে একটি আদেশ আনেন আসামির আইনজীবীরা। ওই আদেশ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, হাইকোর্ট এ মামলার সব কার্যক্রম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে পরিচালনার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তাই তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তি আছে। দুই আইনজীবীর শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি ও স্থায়ী জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে দেন আদালত। এর আগে, ১১ জানুয়ারি নবম দিনের মতো জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এ দিন তার যুক্তি উপস্থাপন শেষ না হওয়ায় পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ১৬, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত। অপরদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাতেও যুক্তি উপস্থাপনের জন্য একই দিন ধার্য করেন আদালত। ১৯ ডিসেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। এ দিন রাষ্ট্রপক্ষ খালেদা জিয়াসহ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। এরপর ২০, ২১, ২৬, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর এবং ৩ , ৪, ১০ ও ১১ জানুয়ারি খালেদার পক্ষে যুক্ত উপস্থাপন করেন তার আইনজীবীরা। মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি দশ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের তিন জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১০ সালের পাঁচ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন আর রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের আট আগস্ট তেজগাঁও থানায় আরও একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। খালেদা জিয়া, সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ এ মামলায় জামিনে আছেন। খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান গত নয় বছর ধরে দেশের বাইরে, তার বিরুদ্ধে এ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। এ ছাড়া কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
×