ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮

ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ১৬ জানুয়ারি ॥ মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মাদক, চাঁদাবাজি, শিক্ষকদের হুমকি, কর্মচারীকে কাজে যোগদানে বাধা এবং সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কতিপয় নেতার বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগ নেতাদের এসব অপকর্মের কেউ কোন প্রতিবাদ করতে গেলেই তাকে জামায়াত-শিবিরের লোক বলে নির্যাতন করা হয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত ১০ অক্টোবর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। দশ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে সজীব তালুকদারকে সভাপতি এবং সাইদুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কমিটি গঠনের বছরখানেক আগে থেকেই এরা ছাত্রলীগের নামে বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মসূচী পালন করে আসছিল। কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া সজীব তালুকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকার ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার। সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও সজীব তালুকদারকে এই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মাদক সিন্ডিকেটের মূল হোতা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি তার পক্ষের কর্মীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার উন্নয়ন কর্মকা-ে নিয়োজিত ঠিকাদার এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করেন। তাকে চাঁদা না দিলে অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক বা কর্মচারী তার কথা মতো কাজ না করলে তাকে জামায়াত-শিবিরের লোক বলে প্রচার করে নাজেহাল করেন। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা জানান, সজীব তালুকদারকে চাঁদা না দিয়ে কোন কাজই তারা করতে পারেন না। চাঁদা না দিলেই ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়। গত রবিবার দুপুরে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও গনিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. পিনাকী দে কে ছাত্রলীগ সভাপতির অনুসারী ইমরান মিয়া মুঠোফোনে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে পাশ করিয়ে দেয়ার জন্য বলেন। পিনাকী দে এ কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করলে ইমরান মিয়া তাকে হুমকি দেন। এ বিষয়ে পিনাকী দে জানান, ইমরান ফোন করে ছাত্রলীগ কর্মী রাজিকুর রহমানকে ফাইনাল পরীক্ষায় পাশ করিয়ে না দিলে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এ ঘটনায় তিনি টাঙ্গাইল সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষক সমিতিকে লিখিতভাবেও জানিয়েছেন। উপাচার্য এ বিষয়ে শিক্ষকদের সভা আহ্বান করেছেন। বিজ্ঞান অনুষদের ডিনকে হুমকি দেয়ার খবরটি স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ করায় বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাইমিনুল কাইয়ুমকে ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব তালুকদার রবিবার রাত ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু হলে তার কক্ষে ডেকে নেন। প্রায় চার ঘণ্টা সেখানে আটকে রেখে তাকে নানাভাবে মানুষিক অত্যাচার করা হয়। পরে প্রক্টর ও পুলিশে ফোন করে শিবিরকর্মী ধরা পড়েছে বলে জানানো হয়। ভোর চারটার দিকে প্রক্টর প্রফেসর ড. সিরাজুল ইসলাম পুলিশসহ বঙ্গবন্ধু হলে গিয়ে মোহাইমিনুল কাইয়ুমকে উদ্ধার করে আনেন। বিজ্ঞান অনুষদের ডিনকে হুমকি এবং মোহাইমিনুলকে নির্যাতনের বিষয়ে প্রক্টর প্রফেসর ড. সিরাজুল ইসলাম জানান, পাশ করিয়ে দেয়ার জন্য শিক্ষককে হুমকি দেয়ার বিষয়টি ভূক্তভোগী শিক্ষক লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। উপাচার্য এ বিষয়ে আগামী শনিবার শিক্ষকদের নিয়ে সভা করবেন। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রক্টরের কাছে এসে ক্ষমাও চেয়েছেন বলে জানান। তিনি মোহাইমিনুলকে সোমবার ভোর সকালে বঙ্গবন্ধু হলের অতিথি কক্ষ থেকে উদ্ধারের বিষয়টিও স্বীকার করেন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চতুর্থ শ্রেণীর এক নারী কর্মচারীকে প্রায় ১০ দিন ধরে ছাত্রলীগ সভাপতি অফিস করতে দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই নারী কর্মচারী তার স্বামীর নামে একটি মামলা করেছিলেন। ছাত্রলীগ সভাপতি মামলা তুলে নেয়ার জন্য ওই কর্মচারীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তার কথা না শোনায় অফিস করতে দিচ্ছেন না বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ এবং প্রক্টর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আলাউদ্দিন জানান, শিক্ষককে হুমকি দেয়ার বিষয়ে অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার গনিত বিভাগের ডিনের সঙ্গে যে সমস্যা হয়েছিল তা সমাধান হয়ে গেছে দাবি করে জানান, ছাত্রলীগের কেউ চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা বা অনৈতিক কোন কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত নয়।
×