ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শীত কুয়াশার আস্তরণ

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮

শীত কুয়াশার আস্তরণ

প্রবাদ রয়েছে, ‘মাঘের শীতে বাঘে খায়।’ এই মাসের অবস্থা তাই। বাঘের হামলার মতোই শীত হামলে পড়েছে সারাদেশে। শীতের এই মৌসুমে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। মাঘের শুরুতেই হামলে পড়েছে তীব্র শীত। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কুয়াশা। কুয়াশার চাদরে আবৃত দেশ দিনমান ধরে শুধু নয়, রাতভরও। এমনই আস্তরণ দিয়ে ঢেকে দিয়েছে বাংলার মাঠঘাট, নদ-নদী, প্রান্তর, শহর, নগর, গ্রাম-গঞ্জ, সড়ক ও জনপদ। কুয়াশার আঁচলের নিচে শীতবস্ত্রসমেত জবুথবু মানবকুল। হাড় হিম হয়ে আসে। সামনের কোন দৃশ্যপট দৃষ্টিতেও আসে না। ঘন কুয়াশায় ঢাকা দেশ। শিশিরে ভিজে যাচ্ছে সবকিছু। ‘শীতের নাচন আমলকীর ওই বনে বনে।’ কাঁপিয়ে তুলছে জনজীবন। ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তীব্র শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশার সাঁড়াশি আক্রমণ সর্বত্র। তার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে কনকনে শীত। ঠক ঠক করে কাঁপছে নানা বয়সী মানুষ। বাড়ছে জনজীবনে দুর্ভোগ। আবহাওয়া বিভাগ বলছে, এ মাসেই আরও কয়েকটি শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস রয়েছে। দেশের ছয়টি বিভাগে মৃদু থেকে মাঝারি এ শৈত্যপ্রবাহ ক্রমশ তীব্র হবে। শীতের তীব্রতা দেখে স্পষ্ট হচ্ছে, মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা দেখে অবশ্য শীতের তীব্রতা তেমন বোঝা না গেলেও তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীত ও ঘন কুয়াশার মাত্রা বাড়ছে। ক’দিন ধরেই দেশের সর্বত্র সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। কনকনে বাতাসও বইছে হু হু করে। সারাদেশ আজ শীতাক্রান্ত। তাপমাত্রার সঙ্গে তাল না রেখে শীতের তীব্রতা বাড়ায় বিপর্যস্ত হচ্ছে সবকিছু। তাপমাত্রা বাড়লেও সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য হ্রাস পাচ্ছে। এ পার্থক্য যতই হ্রাস পাবে, শীতের তীব্রতা ততই বাড়তে থাকবে। আর ঘন কুয়াশা, দিনের তাপমাত্রা হ্রাস এবং ঠা-া বাতাসের কারণেও শীতের তীব্রতা বেড়েছে। ঘন কুয়াশার ওপরে উঠতে পারছে না জলীয়বাষ্প। আর এসব কারণ মিলিয়ে বাড়ছে শিশু রোগ। প্রতিদিন ডায়রিয়া, আমাশার, নিউমোনিয়াসহ ঠা-াজনিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীদের ভিড়। মোকামে বন্ধ রয়েছে চালের চাতালগুলো। বোরো ধানের বীজতলা শীতাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহে হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে কাবু হয়েছে উত্তরের জনপদ। হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠা-ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে শ্রমজীবী হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের ধকলে বদলে গেছে ঋতুপ্রবাহ। বদলে গেছে আবহাওয়ার ধরন ধারণ। তাই তা ক্রমে চরমভাবাপন্ন হয়ে পড়ছে। শীতে ঠা-া যেমন বেশি পড়ছে, গ্রীষ্মে গরমও বেশি পড়তে পারে। হতে পারে বেশি বেশি ঝড়ঝঞ্ঝাও। বিশ্বব্যাপী সেই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপখাইয়ে চলার প্রস্তুতিও চলছে। বাংলাদেশেও সেই প্রস্তুতি চলছে। তবে খুবই ধীর গতিতে। শীতের মন্দভাবে মন্দাক্রান্ত আজ দেশ। দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের ভোগান্তি সর্বাধিক। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা। ছিন্নমূল, নদীসিকস্তি, ফুটপাথের বাসিন্দা, এমনকি বস্তিবাসী সবচেয়ে বেশি ধকলে আছে। বহু মানুষের নেই থাকার ভাল ঘরবাড়ি। আবার ভাঙ্গা বেড়ার ঘরে শীতের কনকনে বাতাস হু হু করে ঢুকে পড়ছে। গরম জামা-কাপড়ের অভাবও রয়েছে। তবে এবার বাজারে প্রচুর গরম কাপড় উঠেছে। দাম ও তেমন বেশি নয়। তবে শহরের ভাসমান ও গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কম্বলসহ গরম কাপড় সরবরাহ করছে। শীতার্ত মানুষের পাশে রাজনৈতিক দলগুলো এবং বিত্তবানরা সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। শীতের অসুখ-বিসুখ মোকাবেলায় জরুরী স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম দ্রুত নেয়া প্রয়োজন। বিনা চিকিৎসায় কেউ যেন মারা না যায় সে পদক্ষেপই কাম্য।
×