ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চশিক্ষায় অনিয়ম কাম্য নয়

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮

উচ্চশিক্ষায় অনিয়ম কাম্য নয়

উচ্চশিক্ষায় ভর্তি বাণিজ্য ও অনিয়ম সমকালে বেশ আলোচিত বিষয়। এই বাণিজ্যের স্তর এখন নেমে গেছে নিম্ন শ্রেণী পর্যন্ত। ভর্তি মৌসুমে দেশজুড়ে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। সম্প্রতি উত্তরা মেডিক্যাল কলেজে মেধা তালিকা উপেক্ষা করে ভর্তি নিয়ে যে নাটক মঞ্চস্থ হলো তা রীতিমতো শিক্ষা ক্ষেত্রে এক ধরনের ‘অবক্ষয়’ বলে ধরে নেয়া যায়। এ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়। এতে তুলনামূলক কম মেধার শিক্ষার্থী জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে যায়, যা মেধাবীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করে। অথচ বহু মেধাবী শিক্ষার্থীকে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াতে হয়, অন্যদিকে কম মেধাবীরা টাকার বিনিময়ে ভর্তি হয়ে যায়। বিষয়টি দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি রুখতে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরী। সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তিতে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে গঠিত তদন্ত কমিটি। গত বছর বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন, ভর্তি নীতিমালা ভঙ্গ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া নির্ধারিত আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করায় ১২ মেডিক্যাল কলেজকে জরিমানা গুনতে হয়। এমনকি সরকারী নীতিমালা না মানায় ৫টি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে এ বছর এমবিবিএস কোর্সে (শিক্ষাবর্ষ ২০১৭-২০১৮) শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করে রেখেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। দেশের বেশিরভাগ বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠা, শিক্ষাদান, পরীক্ষা গ্রহণসহ নানা কর্মকা- নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কোন শেষ নেই। বেশিরভাগই অপরিকল্পিতভাবে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। হাতেগোনা দু-চারটি ছাড়া বাকিগুলো মেডিক্যাল কলেজকে ঘিরে চিকিৎসাশিক্ষা বাণিজ্যের যে বিস্তৃতি লাভ করেছে, তা দেশের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেক্টরের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেবল উত্তরা মেডিক্যালই নয়, নতুন শিক্ষার্থী ভর্তিসহ অনুমোদন নেয়ার সময় প্রদত্ত শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে অনেক বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষা আজ ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। অনেকেই নীতিমালা মানছে না। মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনে অনিয়ম ও দায়িত্বহীন কতিপয় অসাধু চক্র এই সেক্টর নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অর্থের বিনিময়ে সার্টিফিকেট নিয়ে এসব শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে কোথায় দাঁড় করাবে তা এখন ভাববার বিষয়। দেশে বর্তমানে ৩৫ সরকারী ও ৬৫ বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের সময় বাংলাদেশে সরকারী মেডিক্যাল কলেজ ছিল মোট আটটি। সাতটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পাকিস্তান আমলে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে নতুন আরও দু-একটি সরকারী মেডিক্যাল কলেজ এ তালিকায় যুক্ত হয়। নব্বইয়ের দশকে বেসরকারী পর্যায়ে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের অনুমতি দেয়া হলে স্থানে স্থানে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন শুরু হয়। বর্তমানে দেশে সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে একশ’র মতো মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৩৫ সরকারী এবং বাকিগুলো বেসরকারী। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকারী ও বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া রয়েছে একটি সরকারী ডেন্টাল কলেজ ও ৯ ডেন্টাল ইউনিট এবং বারোটির বেশি বেসরকারী ডেন্টাল কলেজ। অন্যদিকে চিকিৎসা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে চালু করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। দেশের প্রথম এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে সম্প্রতি অনুমোদনপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় দুটিকে যুক্ত করলে সরকারী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় তিন। চাহিদার তুলনায় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়লেও মান বাড়ছে না। বরং নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে স্বচ্ছতা হারাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। কোন দেশের উচ্চ শিক্ষায় এ ধরনের পরিস্থিতি কাম্য হতে পারে না। সবাই আশা করে, রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা সবাই দেশের শিক্ষা তথা স্বাস্থ্যসেবাকে সুস্থতা দিতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা প্রদর্শন করবেন।
×