ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবনের তিন দস্যু বাহিনীর প্রধানসহ ৩৮ সদস্যর আত্মসমর্পন

প্রকাশিত: ০২:৪৫, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮

সুন্দরবনের তিন দস্যু বাহিনীর প্রধানসহ ৩৮ সদস্যর আত্মসমর্পন

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনের অন্যতম সক্রিয় জলদস্যু “বড় ভাই, ভাই ভাই ও সুমন” বাহিনীর ৩৮ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পন করেছে। এরফলে গত ২১ মাসে মোট ১৭টি জলদস্যু বাহিনী র্যাব-৮ এর কাছে আত্মসমর্পন করলো। মঙ্গলবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে বরিশাল নগরীর রুপাতলীস্থ র্যাব-৮ এর সদর দপ্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে জলদস্যু “বড় ভাই, ভাই ভাই ও সুমন” বাহিনীর সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পন করেন। এরআগে সোমবার দিবাগত গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে র্যাবের বিশেষ অভিযানে কুখ্যাত জলদস্যু বড় ভাই বাহিনীর প্রধান আব্দুল ওয়াহিদ মোল্লা, ভাই ভাই বাহিনীর প্রধান ফারুক মোড়ল ও সুমন বাহিনীর প্রধান জামাল শরীফ সুমনসহ ৩৮ সদস্য আত্মসমর্পন করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে র্যাব-৮ এর উপ-পরিচালক মেজর সোহেল রানা প্রিন্স জানান, আত্মসমর্পনকারীদের মধ্যে রয়েছে বড় ভাই বাহিনীর প্রধান আব্দুল ওয়াহিদ মোল্লা (৪৯), সদস্য বাচ্চু শেখ (৩৫), মাহামুদ হাসান (২৩), রফিকুল ইসলাম (৪২), ওলি ইজারাদার (৩১), গোলাম মাওলা (৫০), অলিয়ার শেখ (৫০), বরকত আলী শেখ (৫০), রেজাউল মোল্লা (৪৫), রিপন শেখ (৩১), খালিদ ইজারাদার (৪০), মিকাইল ইজারাদার (৩১), বায়েজিদ মোল্লা (৩৪), লিটন আলী ইজারাদার (৩১), মাজেদ ইজারাদার (৫০), এসএম মেহেদী হাসান মিলন (৩১), আব্দুল মজিদ ভাঙ্গী (৫৫), ইউনুস আলী (৩২) সহ ১৮ জন। এদিকে ভাই ভাই বাহিনীর প্রধান ফারুক মোড়ল (৩০), রেজাউল সানা (৫০), অনিমেষ বাড়ৈ (২৪), কুতুব উদ্দিন গাজী (৩০), ইমদাদুল হক (২৮), আলমগীর হাওলাদার (৩২), আলামিন হাওলাদার (৩০), হাবিবুর রহমান সিকদার (৩২) সহ আট সদস্য। সুমন বাহিনীর প্রধান জামাল শরীফ সুমন (৪২), কাইয়ুম জোমাদ্দার (২৯), আলামিন মৃধা (৪০), জামাল তালুকদার (৩৫), রাজা ফরাজী (২৫), আলামিন খান (২৫), রফিকুল ইসলাম (৪১), আকরাম হোসেন গাজী (৩১), জুয়েল রানা (৩০), আবুল কালাম শেখ (৬০), মিলন হাওলাদার (২২), ছমির তালুকদার (৪৫) সহ ১২ সদস্য আত্মসমর্পন করেছেন। আত্মসমর্পনকারীরা সকলেই খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার বাসিন্দা। আত্মসমর্পনকারীদের কাছ থেকে দেশী-বিদেশী ৩৮টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং সকল প্রকার অস্ত্রের দুই হাজার ৯৬৯ রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। যারমধ্যে ১৪টি বিদেশী একনালা বন্দুক, নয়টি বিদেশী দোনালা বন্দুক, তিনটি পয়েন্ট ২২ বোর বিদেশী রাইফেল, ছয়টি বিদেশী এয়ারগান, পাঁচটি পাইপ গান ও একটি বিদেশী কাটা রাইফেল রয়েছে। মেজর সোহেল রানা প্রিন্স আরও জানান, “বড় ভাই, ভাই ভাই ও সুমন” বাহিনী সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের মংলা, শ্যালাগাং, হারবাড়িয়া, ভদ্রা, সুন্দরবনের পশুর নদী এবং বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন উপকূলবর্তী অঞ্চলে সক্রিয় জলদস্যু বাহিনী। এসব অঞ্চলের বনজীবি ও জলজীবী সাধারণ মানুষ তাদের টার্গেট ছিলো। ১৯৯৫ সাল থেকে বড়ভাই বাহিনী ও ২০০৮ সাল থেকে ভাই ভাই বাহিনী এবং ২০১০ সাল থেকে সুমন বাহিনীর আত্মসমর্পনকারী প্রধানদের নেতৃত্বে সুন্দরবনে দস্যুতা বৃত্তি করে আসছিলো। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জলদস্যু ও ডাকাত বাহিনীর বিরুদ্ধে র্যাব-৮ এর সদস্যরা একাধিক কঠোর অভিযান পরিচালনা করেন। যে কারণে কোনঠাসা হয়ে আতংকিত হয়ে পড়ায় দস্যুরা অনুধাবন করেন অধিক অর্থ উপার্জন ও কু-প্ররোচনার স্বীকার হয়ে তারা ভুল পথে পরিচালিত হয়েছিলো। তাই তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে একে একে আত্মসমর্পন করেন। জলদস্যু আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে র্যাব-৮ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার হাসান ইমন আল রাজীবের সভাপতিত্বে প্রধানঅতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)।
×