ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

কোলাবরেশন ছাড়া ছবি দেখানো যাবে না মেনে নিতে কষ্ট হয় ॥ অপর্ণা সেন

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮

কোলাবরেশন ছাড়া ছবি দেখানো যাবে না মেনে নিতে কষ্ট হয় ॥ অপর্ণা সেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘আমার মনে হয়েছে যদি পশ্চিমবঙ্গের ছবি বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের ছবি পশ্চিমবঙ্গে দেখানো যেত, তাহলে আমাদের সিনেমাটিক সেতুবন্ধন হতো। কিন্তু কোলাবোরেশন ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। কোলাবোরেশন ছাড়া ছবি দেখানো যাবে না, এটা মেনে নিতে আমার কষ্ট হয়। এই ওপেন মার্কেটের যুগে যদি আমরা পরস্পর ছবি পাঠাই, দর্শক গ্রহণ করবে অথবা বর্জন করবে এই তো। তাহলে অসুবিধাটা কোথায় আমি ঠিক বুঝতে পারি না’ সাংবাদিকদের সঙ্গে একথা বলেন ভারতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও নির্মাতা অপর্ণা সেন। ঢাকায় চলছে ‘ষোড়শ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-২০১৮’। সোমবার ছিল ৯ দিনব্যাপী উৎসবের চতুর্থ দিন। এদিন সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে দেখানো হয় অপর্ণা সেন পরিচালিত ছবি ‘সোনাটা’। মারাঠি সাহিত্যিক এলকুঞ্চওয়ারের ‘সোনাটা’ নাটক অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ছবিটি। এ ছবি প্রদর্শনের আগে পাবলিক লাইব্রেরির সেমিনার কক্ষে অপর্ণা সেন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। শুরুতে অপর্ণা সেন বলেন, কি দিয়ে আমার বক্তব্য শুরু করব ঠিক বুঝতে পারছি না। অনেকের কথাবার্তায় বুঝলাম, এখানের অনেকেই আমার কাজের সঙ্গে পরিচিত। আমি শুরু করি অভিনেত্রী হিসেবে। সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে আমার প্রথম অভিনয়। আমার তখন বয়স ১৪। তখন ছেলে মানুষ। স্কুলে পড়তাম ক্লাস নাইনে। পরে চার বছর গ্যাব গিয়েছে। বাবা-মা তখন আমার অভিনয়কে এ্যালাউ করেননি। তারপর মৃণাল সেনের ‘আকাশ কুশুম’। পরে সত্যজিৎ রায়ের এ্যাসিস্ট্যান্ট নিত্যানন্দ দাশগুপ্তের ‘হস্ত বদল’। এরপর আমার মূল ধারার ছবিতে পদার্পণ। ‘অপরিচিত’, ‘হংস মিথুন’সহ বিভিন্ন ছবিতে আমার অভিনয়। সেসব ছবি অনেক দিন করে আমার ভাল লাগছিল না। মনে হয়েছিল, যে ধরনের সিনেমাতে আমি বিশ্বাসী নই, সেই ধরসের সিনেমাতে আমার কাজ করে যেতে হবে সারাজীবন। এটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। পরে মনে হলো, আমি একটা গল্প লিখি। লিখতে গিয়ে দেখলাম যে গল্পটাই হয়ে উঠল একটি চিত্রনাট্য। আমার গুরু সত্যজিৎ রায় গল্পটা পড়ে বললেন ছবি বানিয়ে ফেল। তিনি আরও বললেন ভাল প্রযোজক লাগবে। শশী কাপুরকে উনি চিঠি লিখতে বললেন। তাকে লিখলাম। সত্যি এখন ভাবি, কিছু কিছু কাজ এত সহজে হয়ে যায়। তখন যত সহজে হয়েছিল, এখন ততটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। দিন-কাল-দর্শক পাল্টাচ্ছে, টাকা লগ্নি করার লোকজন পাল্টাচ্ছে। বাংলার দর্শক সীমিত। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। আমাদের ছবিগুলো সেখানে পৌঁছায় না। অপর্ণা সেন তার ছবি নির্মাণের প্রথম দিকের কথা প্রসঙ্গে বলেন, তখন পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসা এবং মুক্তিযুদ্ধ সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অনুকূলে ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা পুরনো রাজবাড়ী নদীর ধারে তো পশ্চিমবঙ্গে পেলামই না। শেষাবদি আমাকে কম্পিউটার গ্রাফিকস দিয়ে তৈরি করতে হলো। এখনও ছবি বানিয়ে যাচ্ছি। সম্পাদনা করেছি কিছুদিন। এখন সেটা বন্ধ করেছি। এখন শুধুই ছবি বানাচ্ছি, তাও অনেক দিন পরে। ‘সোনাটা’ ছবি সম্পর্কে তিনি বলেন, তিন জন মধ্যবয়সী নারীর জার্নি। যারা কারও ওপর নির্ভরশীল নয়। তিনি বলেন, আমার কাছে ফ্যামিনিজম, আমার নারীবাদ মানবতাবাদেরই অংশ। তার কারণ নারীরা মানব সমাজের অর্ধাংশ। সেই অর্ধাংশ কে যদি অবদমিত করে রাখা হয়, তাহলে সমাজকেই অবদমিত করে রাখা হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সাবানা আজমীর সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রসঙ্গে অপর্ণা সেন বলেন, ছোট করে বলা যায় না, আর আমার দীর্ঘদিনে বন্ধু তো। তার সঙ্গে আমি সব কিছু নিয়ে সেয়ার করি। ছবি নিয়ে, ফিল্ম নিয়ে, পরিবার নিয়ে। চলচ্চিত্র উৎসব সম্পর্কে তিনি বলেন, একটা উৎসব চালনা করা যে কতবড় কঠিন তা আমি জানি। এরকম উৎসব আরও বেশি বেশি করে হলে চলচ্চিত্রের প্রতি মানুষের আরও আগ্রহ বাড়বে।
×