ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাইডিং শেয়ার সার্ভিস নীতিমালার খসড়া মন্ত্রী সভায় অনুমোদন

এ্যাপনির্ভর সেবাকে সনদ নিতে হবে বিআরটিএ থেকে

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮

এ্যাপনির্ভর সেবাকে সনদ নিতে হবে বিআরটিএ থেকে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বছর পেরিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জনের পর এবার উবার, পাঠাওয়ের মতো স্মার্টফোন যানবাহন সেবার ক্ষেত্রে বিআরটিএ থেকে সেবাদানকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও মোটরযানের তালিকাভুক্তির সনদ নেয়ার বাধ্যবাধকতা রেখে একটি নীতিমালা অনুমোদন করেছে সরকার। এ লক্ষ্যে ‘রাইডিং শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালার’ খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই নীতিমালার খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। পরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। শফিউল আলম বলেন, রাইডিং-শেয়ারিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উবার বা বিভিন্ন এজেন্সি কার্যক্রম চালাচ্ছে, সেটাকে আইনী কাঠামোতে আনতে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। আট অনুচ্ছেদের এই নীতিমালার আওতায় রাইড-শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে সরকারের তালিকাভুক্ত হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। রাইড-শেয়ারিং সার্ভিস পরিচালনার জন্য বিআরটিএ থেকে রাইড-শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে ‘রাইড শেয়ারিং এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’ এবং মোটরযান মালিককে রাইড শেয়ারিং এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’ নিতে হবে। রাইড-শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের টিআইএন থাকতে হবে, পাবলিক বা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হলে পাবলিক বা প্রাইভেট কোম্পানির সব ধরনের শর্ত মেনে চলতে হবে। যাত্রী চাহিদা, সড়কের নেটওয়ার্কের ক্যাপাসিটি, রাইড-শেয়ারিং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা, সেবাদাতা মোটরযানের সংখ্যার ভিত্তিতে রাইড-শেয়ারিং সেবা এলাকা নির্ধারণ করবে বিআরটিএ। রাইড-শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস এলাকায় অফিস থাকতে হবে। রাইড-শেয়ারিং সেবায় যুক্ত হতে বিআরটিএ নির্ধারিত সংখ্যা অনুযায়ী মোটরযান নিয়োজিত করতে হবে। ঢাকা পরিবহন কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত এলাকার জন্য কমপক্ষে ১০০টি, চট্টগ্রাম মহানগরের জন্য কমপক্ষে ৫০টি এবং দেশের অন্যান্য শহর ও মহানগর এলাকার জন্য কমপক্ষে ২০টি বাহন থাকতে হবে একটি কোম্পানির। ব্যক্তিগত মোটরযান যেমন- মোটরসাইকেল, মোটরকার, জীপ, মাইক্রোবাস এবং এ্যাম্বুলেন্সর রাইড-শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় তালিকার্ভুক্ত হতে পারে। রাইড-শেয়ারিং সার্ভিসে ব্যবহৃত মোটরযানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন- রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, ইন্স্যুরেন্স এবং তালিকাভুক্তির সনদ হালনাগাদ থাকতে হবে। রাইড-শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তালিকাভুক্তির সনদ পাওয়ার পর রাইড-শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, মোটরযানের মালিক ও চালকের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি করতে হবে যেখানে সব পক্ষের অধিকার এবং দায়দায়িত্বের বিষয়ে উল্লেখ থাকবে। মোটরযান মালিক বা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এক মাস আগে লিখিত নোটিস দিয়ে চুক্তির সমাপ্তি ঘোষণা করতে পারবে। নির্ধারিত স্ট্যান্ড এবং অনুমোদিত পার্কিং স্থান ছাড়া কোন রাইড-শেয়ারিং মোটরযান যাত্রী তোলার জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করতে পারবে না। এই নীতিমালার অধীনে একজন মোটরযান মালিক একটি মোটরযান রাইড-শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় পরিচালনার অনুমতি পাবেন। ব্যক্তিগত মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পর এক বছর পার না হলে রাইড- শেয়ারিং সেবায় নিয়োজিত করা যাবে না। বিআরটিএর ওয়েব পোর্টালে রাইড-শেয়ারিং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর আওতাধীন সব মোটরযানের তালিকা একটি শ্রেণীতে রাখতে হবে, যাত্রীর অভিযোগ জানানোর সুযোগও সেখানে থাকবে। সনদ পাওয়ার পদ্ধতি ॥ বিআরটিএ থেকে তালিকাভুক্তির সনদ ছাড়া কোন রাইড-শেয়ারিং সার্ভিস পরিচালনা করা যাবে না। রাইড-শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্তির জন্য বিআরটিএতে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সঙ্গে তালিকাভুক্তির ফি হিসেবে এক লাখ টাকা, ট্রেড লাইসেন্স, ই-টিআইএন সনদ, ভ্যাট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। এই ফি’র পরিমাণ সরকার সময়ে সময়ে পরিবর্তন করতে পারবে। তালিকভুক্তির আবেদন পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ তা যাচাই-বাছাই করে এক বছর মেয়াদে রাইড-শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করে সনদ দেবে। ওই সনদের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগে নবায়নের আবেদন করতে হবে, প্রতিবছরের জন্য নবায়ন ফি ১০ হাজার টাকা। তালিকাভুক্তির সনদ হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে এক হাজার টাকা দিয়ে প্রতিলিপি সংগ্রহ করা যাবে। রাইড-শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা বা অন্য কোন পরিবর্তনের কারণে সনদে কোন সংশোধনী করতে হলে এক হাজার টাকা ফি দিতে হবে। রাইড-শেয়ারিং মোটরযান তালিকাভুক্তির সনদ একবারে সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য দেয়া হবে। মেয়াদ শেষে তা নবায়ন করা যাবে। নবায়ন ফি মোটারসাইকেলের জন্য ৫০০ টাকা এবং অন্যান্য মোটরযানের জন্য এক হাজার টাকা। এ ধরনের সেবায় ভাড়া ঠিক হবে ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন অনুযায়ী। তবে মোটরসাইকেলের ভাড়া কীভাবে নির্ধারিত হবে তা জানাতে পারেননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
×