ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলায় নতুন গ্যাস ক্ষেত্র পাওয়ার আশা বাপেক্সের

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮

ভোলায় নতুন গ্যাস ক্ষেত্র পাওয়ার আশা বাপেক্সের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভোলায় একটি নতুন গ্যাস ক্ষেত্র পাওয়ার আশা করছে বাপেক্স। প্রাথমিকভাবে গ্যাসকূপ খনন পর্যায়ে জেলার ভেদুরিয়ায় নতুন গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা জেগেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে নতুন আশার কথা জানান। এর আগে ২০০৯ সালের ১১ মে ভোলার শাহবাজপুরে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে বাপেক্স। এতে ভোলায় গ্যাসের মজুদ দেড় টিসিএফ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন এই গ্যাস ক্ষেত্রটির নাম হচ্ছে ভোলা উত্তর গ্যাস ক্ষেত্র। ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে ভোলা উত্তর গ্যাসক্ষেত্রটির দূরত্ব প্রায় ৩৭ কিলোমিটার। এটি হবে দেশের ২৭তম গ্যাসক্ষেত্র। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের আগে ২৬তম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে বাপেক্স। গত বছরের শেষ দিকে ভোলার শাহবাজপুরের একটি নতুন কূপে গ্যাস পায় বাপেক্স। গত ২৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে একজন মন্ত্রী ভোলার নতুন কূপে গ্যাস পাওয়ার কথা জানান। তখন বাপেক্সের পক্ষ থেকে এটিকে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যদিও পরে এটিকে নতুন ক্ষেত্র নয় শাহবাজপুরের সম্প্রসারণ বলে উল্লেখ করা হয়। শাহবাজপুরের কূপে গ্যাস পাওয়ার পর জেলার ভেদুরিয়ায় নতুন অনুসন্ধান কূপ খনন শুরু করে রাশিয়ান ঠিকাদার কোম্পানি গ্যাজপ্রম। গ্যাস ক্ষেত্রটির মালিক রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্স। নতুন এই গ্যাসক্ষেত্রের সম্ভাবনা নিয়ে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকেও আলোচনা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, গতবছর শেষ দিকে ভোলায় বাপেক্সে নতুন গ্যাসক্ষেত্রে ‘শাহবাজপুর ইস্ট-১’ থেকে পরীক্ষামূলক উত্তোলন শুরুর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এর আগেও আপনাদের বলেছিলাম, ভোলায় আমরা গ্যাস পেয়েছি। নতুন আরেকটা কূপ খনন করে সেখানেও প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভোলার শাহবাজপুর ক্ষেত্রে পৌনে এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) মজুদ রয়েছে। নতুন করে আরও ৬০০ বিসিএফ মজুদ থাকলে ভোলায় গ্যাসের মজুদ দাঁড়াবে এক দশমিক পাঁচ টিসিএফ। বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী নওশাদ ইসলাম দেশের বাইরে রয়েছেন। এ বিষয়ে অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা কিছু বলতে সম্মত হননি। তারা জানান এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোঃ ফয়জউল্লাহ-এনডিসি কে। তবে জ¦ালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন ভোলায় নতুন একটি গ্যাস ক্ষেত্র পাওয়ার আশা করছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিন থেকেই ভেদুরিয়ায় গ্যাসকূপ খননের সময় গ্যাসের স্তর অনুভব করতে পারছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে মনে করা হচ্ছে এখানে গ্যাস রয়েছে। বাপেক্সের খনন বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, গত ৭ জানুয়ারি তিন হাজার ২৩৬ মিটার থেকে তিন হাজার ২৪৫ মিটার গভীরতায় একটি নয় মিটারের গ্যাস স্তর রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এরপর গত ১০ জানুয়ারি কূপের তিন হাজার ২৬০ থেকে তিন হাজার ২৮৫ মিটার গভীরতায় ২৫ মিটারের আরেকটি গ্যাস স্তর রয়েছে বলে বোঝা গেছে। কূপটি তিন হাজার ৪৫০ মিটার পর্যন্ত খনন করা হবে। তবে ডিএসটি না করা পর্যন্ত গ্যাসের মজুদ এবং অন্যান্য বিষয়ে নিশ্চিত ধারণা পাওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করা হয়। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, নতুন ওই ক্ষেত্রে ৬০০ বিসিএফ গ্যাস পাওয়া যেতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে আশা করা হচ্ছে। এটি হবে দেশের ২৭তম গ্যাসক্ষেত্র। সেখানে খনন করা হলে আরও গ্যাস পাওয়া যাবে বলে সরকার আশা করছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভোলায় গ্যাসের সন্ধানে আরও কূপ খননের ওপর গুরুত্ব দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দ্বীপ জেলা ভোলায় বিদ্যুতকেন্দ্র করে সেখানে এই গ্যাস ব্যবহার করা যায়। প্রয়োজনে পাইপলাইনের মাধ্যমেও ওই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নিয়ে আসা যায়। গত ৯ ডিসেম্বর ভোলা উত্তর-১ নামের কূপটি খননের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জ¦ালানিসচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। ওই সময় জানানো হয় ভোলা উত্তর নামে এ গ্যাসক্ষেত্রে যদি ১ টিসিএফ গ্যাসের মজুদ পাওয়া যায় তাহলে পাইপ লাইনের মাধ্যমে তা খুলনা-বরিশাল অঞ্চলে সরবরাহ করা হবে। এতে মৃত শিল্পনগরী খুলনা প্রাণ ফিরে পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ভোলার গ্যাস স্থলভাগে আনতে অন্তত ১০ কিলোমিটার সাবসি (পানিতে পাইপ লাইন) নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া বরিশালে ভোলার গ্যাস দিতে হলে অন্তত ৩৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ করতে হবে। আর খুলনা পর্যন্ত গ্যাস আনতে হলে দরকার হবে আরও ২০০ কিলোমিটার পাইপ লাইন। এর মধ্যে কয়েকটি নদীও রয়েছে। গ্যাস সঙ্কটের মধ্যে গত কয়েকবছরে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে উত্তোলন বাড়িয়ে দৈনিক ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) করা হয়েছে সরকার। কিন্তু সারাদেশে দৈনিক চাহিদা রয়েছে তিন হাজার ৭০০ এমএমসিএফডি। তবে চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে প্রায় সবগুলোই বিদ্যমান কূপকে প্রধান্য দেয়া হয়েছে। গত নয় বছরে শ্রিকাইল ছাড়া আর কোন মাঝারি মানের গ্যাস ক্ষেত্রও পাওয়া যায়নি। বড় গ্যাস ক্ষেত্রের আশা করেও সূত্রমতে (সুনামগগঞ্জ-নেত্রকোনা জেলায়) কিছু পায়নি বাপেক্স। ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রটি বেঙ্গল বেসিনযুক্ত এলাকায়। সেখানে যে ভূ-কাঠামোয় গ্যাস পাওয়া গেছে, তার ভূ-তাত্ত্বিক নাম ‘স্টেটিগ্রাফিক স্ট্রাকচার’। দেশের অন্যসব গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে সুরমা বেসিনে। এই বেসিনের ভূ-কাঠামোয় ভূ-তাত্ত্বিক নাম ‘এ্যান্টি ক্লেইন স্ট্রাকচার’। ভোলায় গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের জন্য প্রথমে দ্বিমাত্রিক ভূ-কম্পন জরিপ করা হয় ১৯৮৬-৮৭ সালে। তাতে গ্যাসের অবস্থান চিহ্নিত করার পর প্রথম অনুসন্ধান কূপটি খনন করা হয় ১৯৯৪ সালে। এরপর আরও তিনটি কূপ খনন করা হয়েছে। এই কূপগুলো থেকে বর্তমানে দুটি বিদ্যুত কেন্দ্র চলছে। সেখানে আরও বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে পিডিবি। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে ত্রিমাত্রিক জরিপ করে দেশের দ্বীপ জেলা ভোলায় বিপুল পরিমাণ গ্যাস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ইউনোকল এক জরিপের ভিত্তিতে শাহবাজপুরে দুই ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস মজুদের সম্ভাবনার কথা বলেছিল। তখন তারা ওই গ্যাস তুলে তা দিয়ে বরিশাল, খুলনা ও যশোর অঞ্চলে সরবরাহের কর্মপরিকল্পনাও সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছিল। পরে ওই প্রক্রিয়া আর আগায়নি। দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাস চাহিদা পূরণে ২০২১ সালের মধ্যে ১০৮টি কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৫৩টি অনুসন্ধান কূপ, ৩৫টি উন্নয়ন কূপ ও ২০টি ওয়ার্কওভার কূপ রয়েছে।
×