ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘ শৈত্যপ্রবাহের কবলে দেশ, কমছে না তীব্রতা

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮

দীর্ঘ শৈত্যপ্রবাহের কবলে দেশ, কমছে না তীব্রতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘমেয়াদী শৈত্যপ্রবাহের কবলে দেশ। গত ৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এ অবস্থা আরও কয়েকদিন বিরাজ করতে পারে। তারা জানায় সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আসা উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয় অন্যবারের চেয়ে এবার বেশি শীতল। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ঘন কুয়াশা। ফলে অন্যবারের চেয়ে এবারে বেশি ঠা-া অনুভূত হচ্ছে। বর্তমানে অব্যাহত থাকা শৈত্যপ্রবাহ মৃদুতে নেমে এলেও শীতের তীব্রতা কমছে না এতটুকুও। টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর অঞ্চলসহ খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এ অবস্থায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণে। তবে শৈত্য প্রবাহ কমে এলেও শীত জবুথবু উত্তরের মানুষ। সোমবার সর্বনি¤œ তাপমাত্রও রেকর্ড করা হয়েছে ৭. ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এই মাত্রায় বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহকে আবহাওয়ার ভাষায় মৃদু হিসেবে উল্লেখ করা হয়। রংপুর বিভাগের রাজারহাটে সোমবার এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তবে দেশের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলেও শীতে তীব্রতা কমছে না। হিমেল হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝড়ছে বেশিরভাগ এলাকায়। ফলে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে সকাল থেকেও রোদের দেখা মিললেও রাজধানীতে শীতের অনুভূতি ছিল বেশ। সকাল এবং সন্ধ্যার দিকে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। সোমবার রাজধানীতে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বিগত কয়েকদিন ধরেই ঢাকার তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। গত বরিবার তাপমাত্রা বাড়লেও সোমবার আবার নেমে আসে। তবে তাপমাত্রা এই ওঠানামা থাকলেও শীতের তীব্রতা রয়েছে আগের মতোই। নিজস্ব সংবাদদাতা ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, রাতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ন্যায় কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় জবুথবু হয়ে পড়ছে জেলার জীবনযাত্রা। গত ৭ দিন যাবত ঠাকুরগাঁও জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় ডিগ্রী থেকে আট ডিগ্রী সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। ঘনকুয়াশার ফলে অনেক বেলা পর্যন্ত প্রায় সকল যানবাহনকে হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। শীতার্তরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলা হাসপাতালে ১৮৬ জন শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। এছাড়া হাড় কাঁপানো শীতে দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষজন। পেটের দায়ে কাজের খোঁজে গিয়েও তীব্র শীত সইতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে অনেকেই। শীতের কারণে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। শেষ বিকেলে সূর্য দেখা গেলেও তার স্থায়িত্ব থাকছে অল্প সময়ের জন্য। সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশা পড়ছে বৃষ্টির ন্যায়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘনকুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে জেলার সকল এলাকা। শীতবস্ত্রের জন্য সরকারী-বেসরকারী দফতরে ধর্না দিচ্ছেন হতদরিদ্র পরিবারের লোকজন। স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, প্রায় ২ সপ্তাহের একটানা শৈত্য প্রবাহে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে কুড়িগ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা। বিকেল থেকে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির ফোঁটার মতো পড়ছে শীত। এ অবস্থায় ঘর থেকে বের হতে পারছে না মানুষজন। সোমবার জেলার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশায় রাস্তাঘাট ঢেকে থাকায় প্রায় সারাদিনই হেডলাইন জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। এ অবস্থায় শ্রমজীবী মানুষেরা কাজে বের হতে না পারায় পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। গরম কাপড়ের অভাবে তীব্র শীত কষ্টে ভুগছেন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকার প্রায় ৪ শতাধিক চরের মানুষ। ভারি কুয়াশায় ঢাকা থাকছে চারপাশ। শৈত্য প্রবাহের কারণে আলু, গম ও বীজতলার ক্ষতি হচ্ছে। বীজতলা হলুদ ও লাল বর্ণ ধারণ করে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রচ- ঠা-ায় দিনমজুররা কাজ করতে পারছে না। তাই ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ তীব্র শৈত্যপ্রবাহে ঠা-া জেঁকে বসেছে। উত্তরের ভারত সীমান্ত জেলা নীলফামারী ও পঞ্চগড়ের খুব কাছে দার্জিলিং-এ তুষারপাতসহ বরফ পড়ায় উত্তরী হিমবায়ু এ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। মাঘের দ্বিতীয় দিন সোমবার স্মরণকালের শিশিরপাতের কবলে ছিল উত্তরবঙ্গের নীলফামারী। রবিবার রাত থেকে শুরু হয় বৃষ্টির মতো কুয়াশা। যাকে এলাকাবাসী শিশিরপাত বলে উল্লেখ করেছে। অনেকে মনে করছেন এক ধরনের জলীয় বাষ্পই নতুন করে শীত জেঁকে বসিয়েছে। ঘরবাড়ির টিনের চালায় টিপটিপ শব্দ। বৃষ্টির মতো শিশিরপাত সবকিছু ভিজিয়ে দিচ্ছে। আকাশের ভাব দেখে মনে হবে এই বুঝি ঝমঝমিয়ে নেমে পড়বে বৃষ্টি। বলা যায় না যে কোন সময় বৃষ্টি নেমে পড়তেও পারে। মাঘে এসে নতুনভাবে শীত জেঁকে বসছে। তীব্র শীতের কারণ মনে করা হচ্ছে পশ্চিমের ঝঙ্কারের বিদায়, উত্তরী হাওয়ার গতি, সর্ব্বোচ, তাপমাত্রা কম তাই ঠা-া বেশি। জনজীবন হয়ে পড়েছে কোণঠাসা। উত্তরী হিমবায়ু মানুষজনকে কুঁকড়ে দিয়েছে। কুঁকড়ে রেখেছে ডানা মেলে আকাশে উড়ে বেড়ানো পাখি আর গবাদিপশুকে। চটের ছালা গায়ে চড়িয়ে দিয়েছে কৃষককুল তাদের গবাদিপশুর শরীরে। আর গরম কাপড়ের অভাবে হিমশিম খাচ্ছে হতদরিদ্র মানুষজন। এছাড়া বাড়ছে রোগব্যাধি। এ ছাড়া শীতের কারণে বিভিন্ন বাসাবাড়ির পোষা মুরগিগুলো মারা যাচ্ছে। নীলফামারী জেলা পশুসম্পদ বিভাগ সূত্র মতে, শীতের কারণে মুরগির মধ্যে ফাউল কলেরা নামের রোগ দেখা দিয়েছে। এতে মুরগি মারা যাচ্ছে। বিভিন্ন হাসপাতালে শীতজনিত রোগের কারণে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বর, সর্দিকাশির সঙ্গে ক্লোড ডায়রিয়াও ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ ক্লোড স্ট্রোক রোগেও আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। এদিকে ঘনকুয়াশা থাকায় নির্ধারিত সময়ের ৪ ঘণ্টা বিলম্বে আকাশপথে সৈয়দপুর-ঢাকা-সৈয়দপুর বিমানগুলো চলাচল করেছে। সড়কপথে যানবাহনগুলো চলাচল হেড লাইট জ্বালিয়ে। অপরদিকে রাত যত বাড়ে, ততই গাঢ় হয় কুয়াশা ও শীতের প্রকোপ। মাঝরাত থেকে গলি থেকে রাজপথ পুরোপুরি চলে যাচ্ছে কুয়াশার চাদরের আড়ালে।
×