ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পার্লামেন্টে যে উদ্দেশ্যে যে বিল বা আইন পাস হয় সেটা নিয়ে বিচারক প্রশ্ন করতে পারেন না ॥ ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল

৭০ অনুচ্ছেদের বৈধতা নিয়ে রিটে বিভক্ত রায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮

৭০ অনুচ্ছেদের বৈধতা নিয়ে  রিটে বিভক্ত রায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজনৈতিক দল থেকে পদত্যাগ বা দলের বিপক্ষে ভোট দেয়ার কারণে সংসদীয় আসন শূন্য হওয়া সংক্রান্ত সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বৈধতা নিয়ে করা রিটে বিভক্ত রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামাল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট দ্বৈত বেঞ্চ সোমবার রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি প্রশ্নে এই বিভক্ত আদেশ দেন। নিয়ম অনুযায়ী বিষয়টি এখন প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। তিনি রিট শুনানির জন্য নতুন একটি বেঞ্চ ঠিক করে দেবেন। সেই বেঞ্চেই এর নিষ্পত্তি হবে। হাইকোর্টে রিটের পক্ষে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ কেন সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। অন্যদিকে বিচারপতি আশরাফুল কামাল এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে রিট আবেদনটিই খারিজ করে দেন। রাজনৈতিক দল থেকে পদত্যাগ বা দলের বিপক্ষে ভোট দেয়ার কারণে আসন শূন্য হওয়া সংক্রান্ত সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ১৭ এপ্রিল এই রিট আবেদনটি করেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। আদেশের পর মোতাহার হোসেন সাজু সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের সংশ্নিষ্ট বেঞ্চ থেকে রিট আবেদনটি প্রধান বিচারপতির দফতরে পাঠান হবে। পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রিট আবেদনটি নিষ্পত্তির জন্য যে বেঞ্চ গঠন করে দেবেন সেখানেই এর পরবর্তী শুনানি হবে। তিনি আরও বলেন, আদালতে কনিষ্ঠ বিচারপতি বলেছেন, বিচারের স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়। বিচারক নির্ভয়ে কাজ করে, বিচারক কখনও আইন প্রণয়ন করতে পারে না। নির্দেশও দিতে পারেন না। সংবিধান কতটুকু পরিপন্থী ততটুকু বলতে পারে। কোন আইনের উদ্দেশ্য নিয়ে কোন আদেশ বলতে পারে না। পার্লামেন্টে যে উদ্দেশ্যে যে বিল বা আইন পাস হয় সেটা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারে না। সংসদ প্রণীত আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি-না সেটা দেখার জন্যই আদালতের সৃষ্টি। বিচার বিভাগকে তার নিজস্ব সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। এ জন্যই রিটটি খারিজ করেছেন। অন্যদিকে আদেশের পর ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ৭০ অনুচ্ছেদকে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেছেন। বিশেষ করে তিনি কেন রুল দিয়েছেন সে বিষয়টি তিনি তার আদেশে বলেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে হাইকোর্ট ও আপীল বিভাগের রায়ে ৭০ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে যা বলেছেন তা গ্রহণ করেই তিনি রুল জারি করেছেন। হাইকোর্ট ও আপীল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন (ষোড়শ সংশোধনী) সেই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে অনুচ্ছেদ ৭০ আর থাকতে পারে না। রিটে বলা হয়, একজন সাংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি। কিন্তু সংসদে তিনি তার দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোট বা নিজস্ব মতামত দিতে পারেন না। কারণ সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোট দিলে তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। অথচ সংবিধানের প্রস্তাবনা ও ১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গণতন্ত্র হচ্ছে মৌল কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত। ফলে ৭০ অনুচ্ছেদটি অগণতান্ত্রিক এবং সংবিধানের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-(ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’ রিট আবেদনটি করার পর ইউনুছ আলী আকন্দ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘একজন সংসদ সদস্য জনগণের প্রতিনিধি। কিন্তু সংসদে দলের বাইরে নিজস্ব মত দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হচ্ছে এই ৭০ অনুচ্ছেদ। কারণ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে তার সংসদ সদস্য পদ থাকছে না। ফলে এটি অগণতান্ত্রিক এবং সংবিধানের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’ ইউনুছ আলীর দায়ের করা রিটটি জনস্বার্থে নয় এমন দাবি করে তা খারিজের আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। এ আবেদনের জবাবে আদালত বলেন, ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে সর্বোচ্চ আদালতের একটি পর্যবেক্ষণ রয়েছে, যা মানা হাইকোর্টের জন্য বাধ্যতামূলক। আর সেজন্যই এ সংক্রান্ত রিটটির ওপর শুনানি হওয়া প্রয়োজন।
×