ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাস

বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি দ্বিগুণ বাড়লেও রাজস্ব আদায়ে ধস

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮

বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি দ্বিগুণ বাড়লেও রাজস্ব আদায়ে ধস

আবুল হোসেন, বেনাপোল ॥ বেনাপোল বন্দর দিয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসের তুলনায় চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৩৫৪ মেট্রিক টন বেশি আমদানি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ৯৭৪ দশমিক ৪২ মেট্রিক টন। আর গত অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে আমদানি হয়েছিল ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৬২০ দশমিক ৪২ মেট্রিক টন। তবে আমদানি বাড়লেও বেনাপোলে রাজস্ব আদায় কমেছে। প্রথম ৬ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে এক হাজার ৯৩৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা কম আদায় হয়েছে। কাস্টম কর্তৃপক্ষ বলছেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে উচ্চ শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি কমে গেছে। শুল্কমুক্ত পণ্য ও কম শুল্কযুক্ত পণ্য বেশি আমদানি হওয়ার কারণে আমদানির পরিমাণ বাড়লেও রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে আমদানি হয়েছে এক লাখ ৪ হাজার ৪৯৩ দশমিক ৬৪ মেট্রিক টন, আগস্টে আমদানি হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ১৩৫ দশমিক ৮৯ মেট্রিক টন, সেপ্টেম্বর মাসে আমদানি হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন, অক্টোবর মাসে আমদানি হয়েছে এক লাখ ৩৬ হাজার ৮০৪ দশমিক ৪৩ মেট্রিক, নবেম্বর মাসে ৭ লাখ ৩৬ হাজার ২২৭ দশমিক ৫৫ টন এবং ডিসেম্বর মাসে পণ্য আমদানি হয়েছে ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৬৭৩ দশমিক ৩১ মেট্রিক টন পণ্য। বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, কম শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি হলে রাজস্ব কমবে এটা স্বাভাবিক। আবার বন্দরে জায়গা সঙ্কটে ওপারে ৫ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। যে কারণে পরবর্তীতে এলসি দিতে পারছেন না। যার প্রভাব আমদানিতে পড়ছে। জানা গেছে, দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দরের অধিকাংশ ক্রেন ও ফর্কলিফট অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে বছরের পর বছর। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরের মালামাল খালাস প্রক্রিয়া। আমদানিকারকরা বন্দর থেকে সময়মতো তাদের পণ্য খালাস করতে না পারায় বন্দরে সৃষ্টি হয়েছে পণ্যজট। বন্দরের গুদাম থেকে পণ্য বের করার পর নতুন পণ্য ঢোকাতে হচ্ছে। জায়গার এ সঙ্কটের কারণে পণ্যবোঝাই ট্রাক বন্দরের অভ্যন্তরে দাঁড়িয়ে থাকছে দিনের পর দিন। বন্দর ব্যবহারকারীদের মেশিনারিসহ ভারি মালামাল লোড-আনলোডের সময় দিনের পর দিন অপেক্ষা করে থাকতে হয় সিরিয়াল দিয়ে। যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আল আমিন গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খান জানান, দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল। অথচ এই বন্দরের কোন উন্নয়ন নেই। তার উপর কাস্টম চলতি বছর থেকে অতিরিক্ত শুল্কহার নির্ধারণ করেছে। যাতে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আবার পণ্য এনে বন্দরে সময় ক্ষেপণেও ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। যশোর-বেনাপোল সড়ক ৩৮ কিলোমিটারের পুরোটাই ভাঙ্গা, এতে পণ্য পরিবহনে বেশি টাকা লাগছে ট্রাক ভাড়ায়। সব মিলিয়ে বেনাপোল ব্যবসায়ীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ না থাকায় অনেক ব্যবসায়ী অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছে। যে কারণে এখানে রাজস্ব আদায় কমে গেছে। এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী জানান, আমাদের উচ্চ শুল্কযুক্ত পণ্যে আমদানি কমে গেছে। কম শুল্কযুক্ত পণ্য বেশি আসছে। গত ৬ মাসে চাল আমদানি বেড়েছে। চালে মাত্র ২ শতাংশ শুল্ক। যে কারণে আমদানি বাড়লেও রাজস্ব আদায় কমেছে। এটা আগামী মাসগুলোতে ঠিক হয়ে যাবে।
×