ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মমতাজ লতিফ

কাদের জন্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড?

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮

কাদের জন্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড?

’৭১-এ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ অন্যান্য জাতি রাষ্ট্র থেকে বাঙালীকে বিশিষ্ট করেছে যেমন, তেমনি জাতিকে দিয়েছে অনন্য এক ঐতিহাসিক স্থান। এরও ওপরে এ যুদ্ধ আমাদেরকে দিয়েছে আমাদের হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য-সভ্যতা-সংস্কৃতির ধারায় পুষ্ট বাঙালী জাতীয়তার পরিচয়। এ পরিচয় আমাদেরকে অন্যান্য জাতি, অন্য দেশের মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের থেকে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য দান করেছে। তাই আমাদের ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, খাদ্য, ফসল, কৃষি- শিল্প, পোশাক, উৎসব- সবকিছুই আমাদের জাতীয়তাকে বিশেষ একটি স্বতন্ত্র রূপ দান করেছে। ধর্ম নিরপেক্ষতা বাঙালীকে ধর্মের ভেদাভেদের ওপরে এক গভীর ভ্রাতৃবোধে আবদ্ধ করেছে- ‘সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নাই’, ‘নানান বরণ গাভীরে ভাই, একই বরণ দুধ, জগৎ ভরমিয়া দেখি একই মায়ের পুত’! ভেবে আশ্চর্য হই, বঙ্গবন্ধু সেই পঞ্চাশের দশকে বাঙালীর এই মৌল বৈশিষ্ট্যটি উপলব্ধি করেছিলেন। তাঁর এই উপলব্ধির প্রথম প্রকাশ সম্ভবত আওয়ামী মুসলিম লীগ নামটিকে আওয়ামী লীগ নামকরণ করে দলকে সব ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্রে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির বীজ বপন করার মধ্যে নিহিত। তার পরের তার সব কার্যক্রম, সব পদক্ষেপ তো এক অর্থে ছিল গোঁড়া ধর্মভিত্তিক ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করা দলগুলোর বিরুদ্ধে প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ ধারার রাজনীতি চর্চার ইতিহাস। ’৭১-এ তিনি ২৫ মার্চে অসাধারণ দূরদৃষ্টির পরিচয় দিয়ে তাঁর পরম আস্থাভাজন, সব সময়ের রাজনৈতিক সহচর তাজউদ্দীনকে বর্ডার পার হয়ে পশ্চিম বঙ্গে চলে গিয়ে আগেই ঠিক করে রাখা স্বাধীনতার পথে অগ্রসর হবার সব করণীয় কাজ শুরু করতে নির্দেশ দিয়ে নিজে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। সেদিন তিনি যদি ঢাকা ত্যাগ করে ভারতে চলে যেতেন, তাহলে মুক্তিযুদ্ধ ঠিকই সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতো, কিন্তু পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বরতা, নির্মমতা তাঁকে হাতে পেয়ে যতখানি হয়েছে, তাঁকে না পেলে তার চাইতে কয়েকগুণ যে বেশি হত, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি নিশ্চিত ছিলেন, তিনি যেসব ব্যবস্থা করে রেখেছেন সেসব ব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করবার যোগ্য, দক্ষ ব্যক্তি। তাজউদ্দীন আহম্মদ যাকে বঙ্গবন্ধু দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আজ মনে প্রশ্ন জাগে- তিনি যদি তাজউদ্দীনকে দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী সরকার গঠনে, ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে পরামর্শ করে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সব রকম সিদ্ধান্ত নেবার ব্যবস্থাদি না করে যেতেন, তাহলে মুক্তিযুদ্ধ দলাদলি ও অরাজকতায় পরে বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য-স্বাধীনতা অর্জনে সফল হতো কি? বঙ্গবন্ধু কি আন্দাজ করেননি, তাঁর অবর্তমানে কে হবে যুদ্ধপরিচালক, প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী? বঙ্গবন্ধুর গোপনে আগরতলা যাওয়া, থিয়েটার রোডের বাড়ি ঠিক করাসহ সব ঘটনাবলী এটাই নির্দেশ করে যে প্রবাসী সরকারের রূপরেখা, গঠন, তাঁরই দ্বারা পূর্বপরিকল্পিত, যা জানতেন সব ষড়যন্ত্রকে পরাস্ত করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ নেতা তাজউদ্দীন। কে না জানে তিনিই তো তাঁর দক্ষিণহস্ত স্বরূপ ছিলেন। যাই হোক, আমাদের মূল আলোচনায় ফিরে আসা যাক। এটা তো আজ একটা আপ্তবাক্য হয়ে দাঁড়িয়েছে- নির্বাচনে সব দলের জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করতে হবে। বাক্যটি বা দাবীটি ২০০৬, ৭-এ কোন সুশীল ব্যক্তির মুখে খুব বেশি শুনিনি। সবাই খালেদার অভাবিত-পূর্ব, অকল্পনীয় কা-কারখানা দেখে নীরবতা পালন করছিল। তবে, উপদেষ্টারা চেষ্টা করছিল একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য, যদিও সবাই ব্যর্থ হয়েছিল এবং সেনা সমর্থিত ড. ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবার পর খালেদা জিয়া হার মানেন। তবে, ২০১৩/১৪ তে দেশী সুশীল, বিদেশী রাষ্ট্র, জাতিসংঘ প্রতিনিধি- সবার মুখে এই একটি কথাই বার বার শুনে মনে হয়েছিল, এ দাবিটি ২০০১ -এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও গণতন্ত্রকে গিলে ফেলা, ২০০৬- এ আবারও তত্ত্বাবধায়ক, নির্বাচন কমিশনকে গ্রাস করা, ২০১৩-১৪ তে পেট্রোল বোমায় স্বজাতি নিধন করে কলঙ্কিত বিএনপি নেত্রী ও তার বিএনপির পক্ষে এ দলকেই বিবেচনায় রেখে করা হচ্ছিল! কেননা, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগকে শেখ হাসিনা ও নেতাশূন্য করার লক্ষ্যে খালেদা-নিজামী- তারেকের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিরোধী জোট সরকার শুধু যে বাংলা ভাই- আব্দুর রহমান গংয়ের জঙ্গী গোষ্ঠী আওয়ামী লীগ- বাম রাজনীতিক নিধনের লক্ষ্যে জন্ম দিয়েছিল তাই নয়, হরকাতুল জেহাদের দ্বারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে ২৩ নেতা-কর্মী হত্যা, শাহ কিবরিয়াসহ পাঁচজনকে বোমা হামলা করে হত্যা, আহসানুল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমাম, মমতাজ উদ্দীনসহ প্রায় বিশ হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছিল, ২০০১-০৬ হিন্দু নারী ধর্ষণ, লুটপাট, ভূমি দখল, উৎখাত করে দু’লাখ হিন্দুকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছিল, সেসব এরা ভুলে গিয়ে খালেদা, বিএনপি-জামায়াতের নেত্রীর পক্ষে সমান সুযোগ দাবি করছিল। ঠিক ’৭৫ পরবর্তী সময়ের চাইতেও তীব্র সুস্পষ্ট এক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-আদর্শবিরোধী সময় এসেছিল ২০০১-এ। কেননা, ’৭৫-এ যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা ও প্রতিষ্ঠা ছিল জিয়ার প্রধান উদ্দেশ্য, তেমনি ২০০১-এ খালেদা জিয়ার লক্ষ্যকেই পুরোপুরি সফল করতে এবার যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করল! যাদের স্ব-জাতি নিধন এবং যে দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে বিজয়কে প্রাণপণে বাধা দেবার ফলে ফাঁসি হবার কথা ছিল, তারাই খালেদা সরকারের মিত্র প্রমাণিত হলো, মন্ত্রী হয়ে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ পন্থী দেশপ্রেমিক জনগণকে শাসন করার সুযোগ লাভ করল! খালেদা, তারেক এই ভাবে জাতিকে কলঙ্কিত করল, যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসীদের চপেটাঘাত করে বুঝিয়ে দিয়েছিল তারা কেবলমাত্র জামাত ও পাকিস্তানী আদর্শে বিশ্বাসী এবং জিয়ার শুরু করা কাজ খালেদা-তারেক সফলভাবে সম্পন্ন করার শেষ পদক্ষেপ ঐভাবেই নিয়েছিল! ওরা, যুদ্ধাপরাধীরা এমন আস্থাভাজন ক্ষমতাবান মিত্র পেয়ে যা ইচ্ছা তাই করেছিল! একদিকে আই এস আই-এর স্বার্থে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী উলফা নেতা ও বাহিনীর জন্য বিঘœহীন আশ্রয় প্রদান করেছিল, অপরদিকে উলফার জন্য কর্ণফুলী জেটিতে সাকা চৌ-এর জাহাজে নিজামী-বাবর-তারেকের সহযোগিতায় দশট্রাক ভর্তি বিপুল অস্ত্র-গোলা-বারুদ আনার ব্যবস্থা করেছিল। এর পাশাপাশি দেশীয় জঙ্গীদের অর্থ, অস্ত্র, আশ্রয় দিয়ে উত্থান ঘটানো হয়েছিল! সে সময় বাংলাদেশে শুধুমাত্র বাম, সমাজতন্ত্রপন্থী এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-চেতনা বহনকারী দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের হত্যা করার লক্ষ্যে অর্ধ শতের বেশি জঙ্গী দলের উত্থান ঘটানো হয়েছিল এবং বাংলাদেশকে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করেছিল। জিয়ার আমলে রাতে কারফিউ বলবৎ ছিল, সেনা ফরমান, অর্ডিন্যান্স দিয়ে চরম বে-আইনী কার্যক্রম চলেছিল যার মধ্যে ইনডেমনিটি বিল এবং ‘৭১-এর যুদ্ধাপরাধী বিচারের দালাল আইন বাতিল করা ও ট্রাইব্যুনাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল! জিয়া তথাকথিত ‘ক্যু’ -এর নামে কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা সেনার বিচার না করে ফাঁসি কার্যকর করছিল যেটি জানতে পেরে ব্রিটিশ মানবাধিকার নেতা ঢাকায় এসে জিয়াকে এ তথ্য বিশ্বমিডিয়ায় প্রচারের হুমকি দিয়ে এ হত্যাকা- বন্ধ করেছিলেন! সে সময় সংবাদপত্র ছিল, কিন্তু সব সংবাদ, রচনা সেনাসদর দ্বারা স্ক্রিনিং করার পর ছাপা হতো। জিয়ার আমলে সেনাশাসনই বলবৎ ছিল, গণতন্ত্রকে তো নিহত করা হয় ’৭৫-এ। ‘বাকশাল’ তো জনগণের সব পেশাজীবীর ঐক্যবদ্ধ জোটের মতই একটি দল ছিল, দুঃখের বিষয় এর নিরীক্ষা জনগণ দেখতে পারেনি, একে বঙ্গবন্ধু ধনতন্ত্র ও পুঁজিবাদের বিপরীতে জনকল্যাণকর একটি জোট হিসেবে গঠন করে যে কল্যাণকর ফলের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা জাতির জন্য হতে পারত কল্যাণকর। আমার মনে হয়, সুশীলরা পাশ্চাত্য থেকে ধার করে আনা শব্দ বন্ধ ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’- এর পক্ষে জোরে শোরে যখন বক্তব্য দেন, তখন স্পষ্টতই দেখা যায় তাঁরা বিএনপির পক্ষে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ এর জন্য ওকালতি করেন। কিন্তু প্রকৃতঅর্থে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ বলতে কি বোঝায়? সব দলের সমান নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগকে যদি বোঝায়ই, তাহলে, প্রশ্ন উঠবে, সব দল কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সংবিধান, সংবিধানের মূলনীতি- গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তা ও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে? দলগুলো কি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনায় বিশ্বাস করে? বিএনপি কি মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে? বিএনপি কি জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে মান্য করে? বিএনপি নেত্রী কি মুক্তিযুদ্ধের, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী? তারা কি জামায়াতকে মিত্র গণ্য করে জোট বাঁধেনি? জামায়াত নেতাদের কি তারা সরকারের মন্ত্রী করে প্রমাণ করেনি যে তারাই তাদের প্রকৃত মিত্র? তারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে কি প্রমাণ করেনি যে তারা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনাসহ নেতানেত্রীকে শত্রু গণ্য করে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল? তাহলে বিএনপি কি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে? খালেদা, বিএনপি নেতারা কি দলের শুরু থেকে ২০১৩-১৪ পর্যন্ত খুন করে, পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মেরে গণতন্ত্র হত্যা করেনি? দেখা যাচ্ছে বিএনপি দীর্ঘকাল জিয়া, খালেদা জিয়া, তারেক-এর নেতৃত্বে যে রাজনীতি করেছে, তা স্পষ্টত: হত্যার অপরাজনীতি, গণতন্ত্রের বুলি মুখে বলে চালিয়েছে স্বৈরতন্ত্র, লুটপাটতন্ত্র, মুদ্রা পাচার, বিদেশে অর্থ লগ্নি করা। এই দলটি প্রকৃতপক্ষে জামায়াতের অস্তিত্ব রক্ষাকারী, যুদ্ধাপরাধীদের এদেশে প্রতিষ্ঠিত করার এবং বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো জঙ্গী সন্ত্রাসীদের চারণভূমিতে পরিণত করার জন্য জন্ম নেওয়া একটি দল। এই দলটির প্রতি নমনীয়, এর সমর্থক সুশীলদের প্রশ্ন করব, এ দলটি জামায়াত থেকে ভিন্ন হয় কি কারণে? যে দলটির প্রত্যক্ষ মদদ, সমর্থন যখন যুদ্ধাপরাধী দল ও এদের খুনী নেতাদের পক্ষে, তখন এ দলের কি রাজনীতি করার অধিকার জামাতের মতই নিষিদ্ধ হওয়া উচিত নয়? বুঝতে পারছি, এতক্ষণে তাবৎ সুশীল রে রে করে উঠেছে। তাদেরকে বলছি, তাদেরকে গ্যারান্টি দিতে হবে যে বিএনপি যদি খুন-হত্যার অপরাজনীতি করে তাহলে তাদেরকেও জামায়াতের মতই নিষিদ্ধ করতে দাবি তুলতে হবে। এই প্রেক্ষিতে সেই ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ কার সঙ্গে কার হবে? কেননা, মুক্তিযোদ্ধা আর যুদ্ধাপরাধী কি একই সমান হতে পারে? আমার ব্যক্তিগত মত, জিয়া, খালেদা, তারেক, আইএসআই এবং দেশী দালাল-যুদ্ধাপরাধীদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছে, করছে। যে লক্ষ্য হচ্ছে- মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রের উন্নয়ন ধ্বংস করা এবং এ ধারায় বিশ্বাসী রাজনীতিক ও রাজনীতিকে সমূলে উৎপাটন করা, গণতন্ত্রকে কোন ক্রমেই বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হতে না দেওয়া বরং জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিণত করা। আমি এরশাদ নেতৃত্বের জাতীয় পার্টির মধ্যে এসব খুন, হত্যার অপরাজনীতির চর্চা এরশাদের যুগে দেখতে পাই। এরশাদের ট্রাক ছাত্র মিছিলে তুলে দিয়ে ছাত্র হত্যা, ডাঃ মিলন হত্যা, নূর হোসেন হত্যা দেখেছি, মঞ্জুর হত্যায়ও এরশাদের দায় আছে। কিন্তু পরে, বিশেষ করে রওশন এরশাদের সাম্প্রতিককালের রাজনীতিকে অনেক মানসম্মত, গণতন্ত্র চর্চায় আগ্রহী, দেশের উন্নয়ন, শান্তি বজায় রেখে গণতান্ত্রিক পন্থায় সংসদে দেশপ্রেমিক বিরোধী দল হিসেবে ক্রমশ পরিণত হতে দেখছি। রওশন এরশাদের পাশে খুন-হত্যার অপরাজনীতিতে সিদ্ধহস্ত, জঙ্গী তোষণকারী দূর্নীতিতে লিপ্ত খালেদা জিয়ার কোন তুলনাই হতে পারে না। জিয়া যেমন নিজেই প্রতিটি পদক্ষেপে প্রকাশ করেছে সে বঙ্গবন্ধুর খুনী ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রাণপ্রিয় সখা, তেমনি খালেদা-তারেকও তাদের দুঃশাসনকালে প্রতিটি কাজে, পদক্ষেপে প্রমাণ দিয়েছে তারাও ঐ বঙ্গবন্ধুর খুনী ও ‘৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের আপনজন, পরমাত্মীয়! বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে এসব খলনায়ক, খলনায়িকার চিরনির্বাসন হলে দেশে সুস্থ গণতন্ত্র চর্চা হবে- আমি নিশ্চিত। অনাবশ্যকভাবে নির্বাচনকালে খালেদার উদ্ভট আবদার সুশীল, বিদেশী দূতদের প্রশ্রয়ে বার বার চলেছে বলে দেশপ্রেমিক পরিচ্ছন্ন রাজনীতি চর্চাকারী দলগুলো, দেশ, জনগণ বিপুল কষ্টের মধ্যে পড়ে। গণতান্ত্রিক দল, বাম দলগুলো, জনগণ সন্ত্রাসী নেত্রী-নেতাদের রাজনীতি থেকে বহিষ্কার করলে, বয়কট করলে প্রকৃত গণতন্ত্রমনা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী সংবিধানমানা দলগুলো রাজনীতির মাঠে থাকতে পারবে। তখনই স্বাভাবিকভাবেই সব দলের জন্য সমান সুযোগই থাকবে। সুশীলদের সতর্ক করব- মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিবর্জিত ব্যক্তি ও দলের প্রতি অনুরক্ত না থাকার জন্য। শেখ হাসিনা থাকলে নির্বাচনে যাব না- বলে গোঁসাঘরে খিল তোলা খালেদার হাত পা ধরতে দেশী-বিদেশীরা এত ব্যাকুল হয় কেন? এই একজন খলনায়িকা না থাকলে আজ বাংলাদেশে সংবিধানসম্মত নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হতো- এতো সবাই উপলব্ধি করে। কোন দল নির্বাচনে অংশ না নিলে সেটি কেন সরকারের দোষ হবে? তা যদি হয় যুদ্ধাপরাধী মিত্র! ভাবতে হবে জাতিকে। ২০০৬-এ ক্ষমতা শেষ হবার দু’সপ্তাহ আগে খালেদা জিয়ার পুত্র-তারেকের স্ত্রী-সন্তানসহ সপরিবারে আড়াই শ’ স্যুটকেস নিয়ে সৌদি আরব যাবার খবর সংবাদপত্রে প্রচারিত হয়, কেউ কেউ এ সংখ্যা চারশ’ও বলে থাকে। সে সময় এ তথ্য প্রচার পায় যে ঐ স্যুটকেসের ২/৩টি বাদে অন্যগুলো ডলারে ভর্তি ছিল। তখন বিশ্বাস হয়নি এখন প্যারাডাইস পেপারস তো সেই প্রমাণই দিচ্ছে! তারপরও খালেদাপ্রেমী সুশীলরা দমে যাবে কি? লেখক : শিক্ষাবিদ
×