ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডাকঘরে সঞ্চয়

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮

ডাকঘরে সঞ্চয়

অচল ডাকঘর সচল হচ্ছে। তবে চিঠি আদান-প্রদানের সচলতা আর ফিরছে না। সে কেবল রবিঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকেই খোদিত থেকে যাবে। অমলের কাছে রাজার চিঠি যেমন আসে না, তেমনি দেখা মেলে না আর ডাকপিয়নের। তবু ডাকঘর আছে, থাকবে। বিভিন্নভাবে সচল হচ্ছে ডাকঘর। তারই অংশ হিসেবে জাতীয় ডাকঘর সঞ্চয়পত্রে যাতে সবশ্রেণীর মানুষ বিনিয়োগ করতে পারেন, সৃষ্টি হয়েছে সেই সুযোগ। ফলে এখন থেকে শহরের পাশাপাশি গ্রামের মানুষও এই সঞ্চয়ের পূর্ণ সুবিধা পাবেন। আগে শহর বা গ্রামের সব মানুষ এই সুবিধা পেতেন না। জাতীয় ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের আওতায় এখন তিনটি সঞ্চয়ী প্রকল্পে গ্রাহকদের আগের মতো বাড়তি মুনাফাও দেয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পগুলো হচ্ছে, ডাক সঞ্চয় ব্যাংক সাধারণ হিসাব, ডাক সঞ্চয় ব্যাংক মেয়াদী হিসাব এবং ডাক জীবন বীমা। এই তিন ধরনের হিসাবে প্রায় ৫৭ লাখ গ্রাহক সঞ্চয় করেছেন। দেশের বেসরকারী ব্যাংকে মুনাফা কিছুটা বেশি হলেও এগুলোর বেশিরভাগের শাখাই জেলা শহরের বাইরে কম। কিছু শাখা উপজেলা শহরে রয়েছে। এর বাইরে নেই। সরকারী সঞ্চয়পত্রে মুনাফা বেশি হলেও এগুলো জেলা শহরের বাইরে পাওয়া যায় না। বেসরকারী ব্যাংক বা সরকারী সঞ্চয়পত্রে স্বল্প আয়ের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুযোগ কম। কেননা এতে বিনিয়োগে বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন। সেখানে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে স্বল্প অর্থে যেমন বিনিয়োগ করা যায়, তেমনি মুনাফাও ব্যাংকের চেয়ে বেশি। আবার জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে এর শাখা রয়েছে। সব শাখা থেকেই এসব চলতি বছরে বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। ফলে স্বল্প আয়ের গ্রামের মানুষ এসব সঞ্চয় প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছে। সঞ্চয় করা মানুষের স্বাভাবিক প্রকৃতি। গ্রামীণ জনপদের মানুষের সঞ্চয়ক্ষেত্র সীমিত। আর্থিক সুরাহার বিষয়টি তাদের জন্য সহজলভ্য নয়। গ্রামীণ মহাজনদের ওপর নির্ভরতা ঝুঁকির মাত্রা বাড়ায়। ডাকঘর ব্যাংকের এই উদ্যোগ গ্রামীণ জীবনে ব্যাপক মানুষের জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য। অর্থ সঞ্চয়ের এই সুবর্ণ সুযোগ তাদের জন্য এক বিরাট আশীর্বাদ বৈকি। সাধারণ হিসাবের ক্ষেত্রে সব শ্রেণী-পেশার লোক এই হিসাব খুলে সঞ্চয় করতে পারবেন। এতে মুনাফার হার বছরে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ। একক নামে ত্রিশ লাখ টাকা ও যৌথ নামে ষাট লাখ টাকা রাখা যাচ্ছে। তবে সর্বনি¤œ যে কোন অঙ্কের টাকা রাখা যাচ্ছে। সুবিধা হচ্ছে, এই হিসাবে যে কোন সময় টাকা রাখা যাবে এবং তোলা যাবে। পোস্টাল কার্ডের মাধ্যমেও টাকা তোলার বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে ডাক পোস্টাল বুথ ও কিছু ব্যাংকের এটিএম বুথ ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। সাধারণ সঞ্চয়ী ব্যাংকের মতো এর কোন মেয়াদ নেই। জমা অর্থের ওপর মুনাফা দেয়া হয়। যে কোন সময় টাকা তোলা যায়। অবশ্য ব্যাংকে এসব হিসাবে কোন মুনাফা দেয়া হয় না। মেয়াদী হিসাব তিন বছরের জন্য। মুনাফা ১১ দশমিক আট শতাংশ। এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে মেয়াদ শেষে ৩৩ হাজার ৮৪০ টাকা মুনাফা হিসাবে পাওয়া যায়। উৎসে কর কেটে নেয়ার পর মিলবে ৩০ হাজার ৪৫ টাকা। এক বছরের জন্য মুনফার হার ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। দুই বছরের জন্য ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ, তিন বছরের জন্য ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। হিসাব পরিচালনায় কোন ফি বা সার্ভিস চার্জ নেয়া হচ্ছে না। এসবই সঞ্চয়ী প্রকল্প রাষ্ট্রীয় ‘গ্যারান্টি’ যুক্ত। গ্রামীণ জীবনে বীমার ব্যবহার সীমিত। ডাক জীবন বীমা এই ক্ষেত্রটিকে প্রসারিত করেছে। ১৯ থেকে ৫৫ বছর বয়সী সব শ্রেণী-পেশার মানুষ বীমা করতে পারে। এর আওতায় জীবন চুক্তি বীমা, মেয়াদী বীমা, শিক্ষা বীমা, বিবাহ বীমা এবং ‘এ্যান্ডোমেন্ট’ বীমা করা যাচ্ছে। এসব হিসাবে সঞ্চয় ও বীমার আয়কর রেয়াত পাওয়া যায়। বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের হার কম এবং বোনাসের পরিমাণ বেশি। সাত ভাগ ঝুঁকির নিরাপত্তা রয়েছে। আকস্মিক মৃত্যু ও চির অক্ষমতায় মঙ্গল বিধান চুক্তিও ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়াই পলিসি সুবিধা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। আজীবন বীমায় প্রতি হাজারে বোনাস ৪২ টাকা আর মেয়াদী বীমায় ৩৩ টাকা। একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলা যায় এই প্রকল্পগুলো। যথাযথভাবে পরিচালিত হলে গ্রামীণ জনপদের মানুষের আয়ের উৎস যেমন বাড়বে, তেমনি দারিদ্র্য হ্রাস পাবে। সেই সঙ্গে জনগণের অবস্থার দিকটিও বিবেচনা করা সঙ্গত। ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের এই সুবিধা যেন মুখ থুবড়ে না পড়ে এবং ব্যাপক জনগণ যেন এর সুবিধা পায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী। এই পদক্ষেপের অগ্রগতি অবশ্যই কাম্য।
×