ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুদিনাপাতার স্বাস্থ্যগুণ

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮

পুদিনাপাতার স্বাস্থ্যগুণ

জেসমিন সাবা ॥ প্রাচীনকাল থেকেই পুদিনাপাতা ভেষজ ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে এই পাতা বহু রোগ সারানোর কাজে লাগে। তরকারিতে সুগন্ধি হিসেবে একে ব্যবহার করা হয়। গরমকালে পুদিনাপাতার সরবত খাওয়ারও প্রচলন আছে। পুদিনা এক প্রকারের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। বিশ্বের অনেক দেশেই পুদিনার গাছ জন্মে। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘মেন্থা স্পিকাটা’। আসুন জেনে নেই পুদিনাপাতার গুণাগুণ- -রোদে পোড়া ত্বকের জ্বালাপোড়া কমাতে পুদিনাপাতার রস ও এ্যালোভেরার রস একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। পনেরো মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। -আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে পুদিনাপাতা ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। পুদিনাপাতার পেরিলেল এ্যালকোহল যা ফাইটোনিউরিয়েন্টসের একটি উপাদান দেহে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাঁধা প্রদান করে। -ব্রণ দূর করতে ও ত্বকের তৈলাক্তভাব কমাতে তাজা পুদিনাপাতা বেটে ত্বকে লাগান। দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণের দাগ দূর করতে প্রতিদিন রাতে পুদিনাপাতার রস আক্রান্ত স্থানে লাগান। সম্ভব হলে সারারাত রাখুন। নতুন কমপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা। তারপর ধুয়ে ফেলুন। মাস খানেকের মাঝেই দাগ দূর হবে। -পুদিনার শেকড়ের রস উকুননাশক হিসেবে খুবই কার্যকরী, এমনকি পাতাও। পুদিনার পাতা বা শেকড়ের রস চুলের গোঁড়ায় লাগান। এরপর একটি পাতলা কাপড় মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন। এক ঘণ্টা পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দু’বার এটা করুন। এক মাসের মধ্য চুল হবে উকুনমুক্ত। -পুদিনাপাতার রস শ্বাস-প্রশ্বাসের নালী খুলে দেয়ার কাজে সহায়তা করে। ফলে যারা এ্যাজমা এবং কাশির সমস্যায় পড়েন তাদের সমস্যা তাৎক্ষণিক উপশমে পুদিনাপাতা বেশ কার্যকরী। খুব বেশি নিঃশ্বাসের এবং কাশির সমস্যায় পড়লে পুদিনাপাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে সেই পানির ভাপ নিন এবং তা দিয়ে গার্গল করার অভ্যাস তৈরি করুন। -গোলাপ, পুদিনা, আমলা, বাঁধাকপি ও শসার নির্যাস একসঙ্গে মিশিয়ে টোনার তৈরি করে মুখে লাগালে তা ত্বককে মসৃণ করে তোলে। -পুদিনাপাতায় রয়েছে এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসের চমৎকারী গুণাগুণ যা পেটের যে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারে খুব দ্রুত। যারা হজমের সমস্যা এবং পেটের ব্যথা কিংবা পেটের অন্যান্য সমস্যায় ভুগে থাকেন তারা খাবার পর ১ কাপ পুদিনাপাতার চা খাওয়ার অভ্যাস করুন। ৬-৭টি তাজা পুদিনাপাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে মধু মিশিয়ে খুব সহজে পুদিনাপাতার চা তৈরি করতে পারেন ঘরে। -শরীর ঠাণ্ডা রাখার একটি বিশেষ গুণ পুদিনার মধ্যে আছে। গোসলের কিছুক্ষণ আগে পানির মধ্যে কিছু পুদিনাপাতা ফেলে রাখুন। সেই পানিতে গোসল করলে শরীর ও মন চাঙ্গা থাকে। এ ছাড়া কয়েক ফোঁটা পুদিনার তেল পানির মধ্যে মিশিয়েও গোসল করতে পারেন। -পুদিনা ত্বকের যে কোন সংক্রমণকে ঠেকাতে এ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে। শুকনো পুদিনাপাতা ফুটিয়ে পুদিনার পানি তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দিন। এক বালতি পানিতে দশ থেকে পনেরো চামচ পুদিনার পানি মিশিয়ে গোসল করুন। এর ফলে গরমকালে শরীরে ব্যাকটেরিয়াজনিত বিশ্রী দুর্গন্ধের হাত থেকে রেহাই পাবেন, কেননা পুদিনার এ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট গুণ অতুলনীয়। ঘামাচি, এ্যালার্জিও হবে না। -পুদিনাপাতার রস তাৎক্ষণিক ব্যথানাশক উপাদান হিসেবে কাজ করে। পুদিনাপাতার রস চামড়ার ভেতর দিয়ে নার্ভে পৌঁছে নার্ভ শান্ত করতে সহায়তা করে। তাই মাথাব্যথা বা জয়েন্টে ব্যথা উপশমে পুদিনাপাতা ব্যবহার করা যায়। মাথাব্যথা হলে পুদিনাপাতার চা পান করতে পারেন। অথবা তাজা কিছু পুদিনাপাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। জয়েন্টে ব্যথায় পুদিনাপাতা বেটে প্রলেপ দিতে পারেন। পুদিনাপাতাকে সাধারণত আমরা শুধুমাত্র রান্নার স্বাদ বাড়ানোর কাজেই ব্যবহার করে থাকি, অন্য কোন কাজে আমরা পুদিনাপাতা ব্যবহার করি না। কিন্তু এই পুদিনাপাতা আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত ভাল একটি উপাদান।
×