ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের দুই সাবেক কোচ ;###;হাতুরাসিংহে ও হিথ স্ট্রিক

টাইগারদের শক্তি-দুর্বলতা দু’জনেরই জানা!

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮

টাইগারদের শক্তি-দুর্বলতা দু’জনেরই জানা!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বন্ধু যখন শত্রু। আগে ছিলেন বন্ধু। এখন শত্রুরূপে আবির্ভূত হয়েছেন। ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হচ্ছে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুইয়ে। শুধু তাই নয়। আজ সোমবার থেকে শুরু হওয়া এ সিরিজে বাংলাদেশের আরও দুই প্রতিপক্ষ রয়েছেন। একজন শ্রীলঙ্কার প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে। আরেকজন, জিম্বাবুইয়ের কোচ হিথ স্ট্রিক। দুইজনই বাংলাদেশ দলের বন্ধু ছিলেন। এখন দুইজনই শত্রু। দুইজনই বাংলাদেশের সাবেক কোচ। চন্দিকা হাতুরাসিংহে ছিলেন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ। হিথ স্ট্রিক ছিলেন বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচ। দুইজনই বাংলাদেশ দলের কোচের পদ ছেড়ে নিজ দেশের প্রধান কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন। গত বছর নবেম্বরে হাতুরাসিংহে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের পদ ছেড়ে দেন। পদত্যাগপত্র বিসিবির কাছে জমা দেন। তখনই বোঝা হয়ে যায়, শ্রীলঙ্কার কোচ হচ্ছেন হাতুরাসিংহে। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যুক্ত থাকা সফল কোচদের মধ্যে অন্যতম হাতুরাসিংহে। তার সময়ে বাংলাদেশ দল অনেক সাফল্য পেয়েছে। ২০১৪ সালের মে থেকে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থাকেন হাতুরাসিংহে। তিনি প্রধান কোচের দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১৪ সালের শেষদিক থেকে দলের সাফল্যের গ্রাফ উর্ধমুখী হতেই থাকে। ২০১৫ সালে তো স্বর্ণময় বছর কাটায় বাংলাদেশ। হাতুরাসিংহে প্রধান কোচের দায়িত্ব নেয়ার পর ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে নাস্তানাবুদ হয় বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরই বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যায়। ২০১৪ সালের শেষদিকে জিম্বাবুইয়েকে টেস্ট ও ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ করার পর ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। এরপর দেশের মাটিতে পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার পর ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকেও প্রথমবারের মতো সিরিজে হারায় বাংলাদেশ। র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে থাকা নিশ্চিত হয়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিশ্চিত করে নেয়। সফল হতেই থাকে হাতুরাসিংহে। জিম্বাবুইয়েকে আবারও হোয়াইটওয়াশ করে। ২০১৬ সালে টি২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব উতরে মূলপর্বে খুব ভাল করতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটিতে জেতার আশা জাগিয়েও ১ রানে হারে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডকে ওয়ানডেতে হারায় এবং একটি টেস্টে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে। গত বছরটি বাংলাদেশের ভাল-মন্দের মধ্যেই যায়। বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নাস্তানাবুদ হয়। শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারতেই থাকে। তবে মাঝপথে ভালই সাফল্য রয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্টে হারায় বাংলাদেশ। ওয়ানডে ও টি২০তেও হারায়। দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে টেস্টে হারায়। ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে পেছনে ফেলে সেমিফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। এর আগে ত্রিদেশীয় সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে হারায়। ভালই সাফল্য অর্জন করে। কিন্তু অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের পরই হাতুরাসিংহে পদত্যাগ করেন। নবেম্বরে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর শ্রীলঙ্কার দায়িত্ব নেন। এরপর আর বাংলাদেশ কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেনি। নতুন বছরে দেশের মাটিতে ১৫ মাস পর ওয়ানডে খেলতে নামবে। ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে। এ সিরিজে শ্রীলঙ্কাও বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দল। এমন এক সিরিজ হচ্ছে যে সিরিজই শ্রীলঙ্কার হয়ে হাতুরাসিংহের প্রথম এ্যাসাইনমেন্ট। হাতুরাসিংহে যে ফরমুলায় দল চালিয়ে সফল হয়েছেন তাতেও বিতর্ক আছে। সমালোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের এখন দেখাতে হবে তিনি ছাড়াও চলে। জিততে না পারলে কথা উঠবে, হাতুরাসিংহে নেই; তাই এমন অবস্থা। আর জিতলে হাতুরাসিংহেকেও বুঝিয়ে দিল বাংলাদেশ, এমন কথাই উঠবে। বাংলাদেশ দলের সবলতা-দুর্বলতা ভালভাবেই জানেন হাতুরাসিংহে। বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের দুর্বলতার দিকগুলো নিয়েই বেশি কাজ করবেন হাতুরাসিংহে। যেন বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা হারাতে পারে। তাই শ্রীলঙ্কা দলের সঙ্গে হাতুরাসিংহেও বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে। শুধু হাতুরাসিংহেই নয়, জিম্বাবুইয়ে কোচ স্ট্রিকও বাংলাদেশকে ডোবাতে চান। তিনিও বাংলাদেশ দল সম্পর্কে অনেক জানেন। চেষ্টা করবেন, ক্রিকেটারদের দুর্বলতা বের করে তাতে আঘাত করতে। হাতুরাসিংহের আগেই বাংলাদেশ দল ছেড়েছেন স্ট্রিক। ২০১৪ সালের মে থেকে ২০১৬ সালের মে পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচ ছিলেন স্ট্রিক। তার সময়ে বাংলাদেশ দল পেস আক্রমণে দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছিল। মুস্তাফিজুর রহমানের মতো বিশ্ব কাঁপানো বোলার তো স্ট্রিকের সময়েরই আবিষ্কার। তিনি পরে জিম্বাবুইয়ের প্রধান কোচের পদে যোগ দেন। বাংলাদেশের বোলিং কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তিনি বোলিং কোচের দায়িত্ব ছাড়ার পর বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং বিভাগও আগের মতো নৈপুণ্য দেখাতে পারছে না। স্ট্রিক যতদিন ছিলেন বাংলাদেশ দলের মূল শক্তিই ছিল পেস আক্রমণ। একটা সময় যে স্পিনই ভরসা হয়ে উঠেছিল, স্ট্রিক আসার পর পেসাররাও ভরসা হয়ে ওঠেন। কিন্তু স্ট্রিক চলে যাওয়ার পর পেসারদের নিয়ে এখন মহাভাবনা যুক্ত হয়েছে। এ সিরিজ স্ট্রিককেও বুঝিয়ে দেয়ার সিরিজ। জিম্বাবুইয়ের কোচ হয়ে এসেছেন স্ট্রিক। বাংলাদেশ পেসাররা যে এখনও সেই আগের জায়গাতেই আছেন তা বুঝিয়ে দিতে হবে। সঙ্গে জেতার বিষয়টি তো আছেই। যেটি খুব কঠিনই। কারণ গত বছর জুনে শ্রীলঙ্কাকে শ্রীলঙ্কার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে জিম্বাবুইয়ে। বোঝাই যাচ্ছে, স্ট্রিকের তত্ত্বাবধানে জিম্বাবুইয়েও শক্তিশালী দল হয়ে উঠছে। হাতুরাসিংহের সঙ্গে তাই স্ট্রিকও বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঠে লড়াই করবেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু ক্রিকেটাররা কিভাবে খেললে জিততে পারবেন সেই শিক্ষা মাঠের বাইরে থেকে হাতুরাসিংহে ও স্ট্রিকই যথাক্রমে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুইয়েকে দেবেন। শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুইয়েকে হারিয়ে হাতুরাসিংহে ও স্ট্রিককেও হারাতে হবে বাংলাদেশকে। শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুইয়েকে হারালেই যে হাতুরাসিংহে ও স্ট্রিক হারবেন।
×