ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শর্ত ভেঙ্গে বহু মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে ছাত্র ভর্তির অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮

শর্ত ভেঙ্গে বহু মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে ছাত্র ভর্তির অভিযোগ

নিখিল মানখিন ॥ নতুন শিক্ষার্থী ভর্তিসহ অনুমোদন নেয়ার সময় প্রদত্ত শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে অনেক বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষা আজ ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। অনুমোদন পাওয়ার পর অনেকেই নীতিমালা মানছে না। গত কয়েক দশক ধরে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনে অনিয়ম ও দায়িত্বহীন কতিপয় অসাধু চক্রও এই সেক্টর নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের আয়ের পাশাপাশি মেডিক্যালে শিক্ষার্থী ভর্তি করে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এসব কলেজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেক আগেই। অর্থের বিনিময়ে সার্টিফিকেট নিয়ে এসব শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে দেশের কেমন স্বাস্থ্যসেবা করবে এ নিয়ে আতঙ্কিত সবস্তরের মানুষ। বর্তমানে অবশ্য শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে নতুন মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন। রাজধানীর উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তিতে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডাঃ আবদুর রশীদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা ইতোমধ্যে কলেজ পরিদর্শন করে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র দেখে ভর্তি নীতিমালা অনুসরণ না করে তড়িঘড়ি করে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বেশ কিছু প্রমাণ পেয়েছেন। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশ এ সপ্তাহেই মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশিষ্টরা। শিক্ষার্থী ভর্তির এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেক কলেজের বিরুদ্ধে বিদেশী কোটায় গোপনে উচ্চ ফি গ্রহণ করে দেশী শিক্ষার্থী ভর্তির পাশাপাশি নির্ধারিত আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর অভিযোগ রয়েছে। গত বছর বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন, ভর্তি নীতিমালা ভঙ্গ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া নির্ধারিত আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করায় ১২ মেডিক্যাল কলেজকে জরিমানা গুনতে হয়। এসব মেডিক্যাল কলেজকে আসনপ্রতি ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। আর সরকারী নীতিমালা না মানায় ৫টি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে এ বছর এমবিবিএস কোর্সে (শিক্ষাবর্ষ ২০১৭-১৮) শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করে রেখেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। দেশের কিছু সংখ্যক বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের কারণে পুরো চিকিৎসা সেক্টর প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, বিভিন্ন কারণে পর্যাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। অনেক বেসরকারী কলেজে শিক্ষক, মেডিক্যাল উপকরণ সঙ্কট রয়েছে। নতুন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশীদ ই মাহবুব জানান, দক্ষ চিকিৎসক সৃষ্টি এবং মানসম্মত কলেজ গড়তে হলে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন রয়েছে। আর তা আন্তরিকভাবেই বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ নিম্নমানের বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে এক সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও আরেক সরকার এসে তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। কলেজগুলোর ওপর শক্তিশালী ও স্বচ্ছ মনিটরিং ব্যবস্থা থাকলে দেশে দক্ষ চিকিৎসক ও মানসম্মত কলেজ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন। সরকারী ফি নির্ধারণ ॥ দীর্ঘ সমালোচনা ও আলোচনার পর গত বছর বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তি ফি নির্ধারণ করে দেয় সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এক প্রজ্ঞাপনও জারি করে। বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলোর নিজেদের ইচ্ছামতো বাড়তি অর্থগ্রহণ ঠেকাতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত ওই প্রজ্ঞাপনে জানা যায়, বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলো ভর্তি ফি বাবদ ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিতে পারবে। ইন্টার্ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এছাড়া পাঁচ বছরে মোট টিউশন ফি বাবদ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার বেশি গ্রহণ করতে পারবে না। নির্ধারিত ফি’র দ্বিগুণ খরচ ॥ এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ার পর প্রতিবছরের মতো এবারও ভর্তি ফি’র বিষয়টি আলোচনায় চলে এসেছে। গত বছর প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে শুধু ভর্তি ফি ১৪ লাখ ২০ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর অনেক কলেজে ভর্তির সুযোগ পেতে অনানুষ্ঠানিক অনেক শিক্ষার্থীকে দিতে হয়েছে বাড়তি টাকা যা কাগজে-কলমে লিখিত থাকে না। প্রথম শ্রেণীর মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেতে অনেক শিক্ষার্থী গোপনে মোটা অংকের টাকা দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
×