ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালালে সাড়ে ১১ ঘণ্টা ফ্লাইট বিপর্যয়

প্রকাশিত: ০৫:০০, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮

শাহজালালে সাড়ে ১১ ঘণ্টা ফ্লাইট বিপর্যয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এমনিতেই ঘন কুয়াশার ছোবল। তার ওপর যোগ হয়েছে রানওয়ের লাইটিং কাজ, এজতেমার আখেরি মোনাজাত ও প্রণব মুখার্জীর আগমণ। এসবের দরুন হিমশিম খেতে হয়েছে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে। বিশেষ করে ঘন কুয়াশার দরুন টানা সাড়ে এগারো ঘণ্টা ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ থাকায় বড় ধরনের সিডিউল বিপর্যয় ঘটে। এতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অচলাবস্থা দেখা দেয়। যার খেসারত দিতে হয়েছে হাজার হাজার যাত্রী ও দর্শনার্থীকে। বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, শনিবার রাত বারোটা থেকে রবিবার বেলা এগারোটা পর্যন্ত কোন ফ্লাইট ওঠানামা করতে পারেনি। এ সময়ে ২৩টি ফ্লাইট সিডিউলে বিঘœ ঘটে। বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে যখন একের পর এক ফ্লাইট অবতরণ করতে শুরু করে তখন দেখা দেয় এয়ারফিল্ডে স্থান সঙ্কট। এক ঘণ্টার মধ্যেই গোটা বিমানবন্দরের এয়ারসাইট ভরে যায় উড়োজাহাজে। এদিকে বিমানবন্দরের ভেতর ও বাইরে ছিল হাজার হাজার যাত্রী ও দর্শকের কোলাহল। লোকে লোকারণ্য হয়ে যাওয়ায় কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, গত কয়েক দিনের ন্যায় শনিবার রাত সাড়ে এগারোটা থেকে রবিবার বেলা সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কোন বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারেনি। সকাল ৭টা ৫০ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের অভ্যন্তরীণ রুটে মোট ১২টি ফ্লাইট ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার সিডিউল ছিল। আবার এ সময়ে ৭টি অবতরণের সিডিউল ছিল। এর মধ্যে ছিল বিমান, ইউএস-বাংলা, রিজেন্ট ও নভোএয়ারের ফ্লাইট। এছাড়া বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে ইমিরেটস, ইতিহাদ, কুয়েত গালফ, কাতার, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মালিন্দু, এয়ার এরাবিয়ান, টিজি, ব্যাঙ্কক ও ওমান এয়ারের ফ্লাইটগুলো কোনটাই সিডিউল রক্ষা করতে পারেনি। সবকটা ফ্লাইটই বিলম্বের শিকার হয়। এতে ভোগান্তির শিকার হয় হাজার হাজার যাত্রী দর্শনার্থী ও অন্যরা। পুলিশ জানিয়েছে, এমনিতেই কুয়াশার ছোবল। তার ওপর যোগ হয়েছে এজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নেয়া লাখো মানুষের ঢল। এতে বিমানবন্দর থেকে যানবাহন বের হওয়া ও প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যান যট ছিল টার্মিনাল ভবন থেকে গোলচক্কর পর্যন্ত। মোনাজাত চলাকালীন ২০ মিনিট বন্ধ ছিল টাার্মিনাল থেকে যানবাহনের চলাচল। হাজার হাজার যাত্রী এ সময় টার্মিনালের ভেতর আটকা পড়ে। তাদের অভ্যর্থনা জানাতে আসা স্বজনরা কনকর্স হল থেকে গোলচক্কর পর্যন্ত সর্বত্র অপেক্ষমাণ ছিল। কনকনে ঠা-ার মাঝে তাদের দীর্ঘ তিন থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। দুপুরে যখন সব ফ্লাইট একত্রে ওঠানামা করতে শুরু করে তখন ইমিগ্রেশন ও চেক্ইন্ কাউন্টারে দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। ভিড়ের চোটে সব কাজকর্ম থমকে যায়। দেশে ফেরা যাত্রীরা লাগেস নিতে গিয়ে দেখেন লোকজন নাই, ট্রলি নাই, লাগেজ আসে ধীরগতিতে। লোকজনের চেচামেচিতে বিমানবন্দর পরিণত হয় মাছের বাজারে। বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে চলমান লাইটিংয়ের কাজের কারণেও কয়েকটি ফ্লাইট বিলম্বের শিকার হয়। প্রতিরাত ২টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা করে বন্ধ রাখা হচ্ছে বিমানের উড্ডয়ন ও অবতরণ। সবমিলে বিপর্যস্ত এয়ারফিল্ড। ঘন কুয়াশা এবং রানওয়েতে চলমান লাইটিংয়ের কাজের জন্য দেখা দিয়েছে ভয়াবহ সিডিউল বিপর্যয়। এ কারণে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫টিরও বেশি ফ্লাইট সিডিউল মতো উঠানামা করতে পারছে না। শুধ শনিবার রাত ১২টা থেকে রববার পর্যন্ত উড্ডয়ন ও অবতরণ সিডিউল ঠিক রাখতে পারেনি এসব ফ্লাইট। এ সময়টাতে বিলম্বে ফ্লাইট উড্ডয়ন-অবতরণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- রাত সাড়ে ১১টায় সিডিউল থাকলেও মালিন্দু এয়ারের ফ্লাইটটি শাহজালালে অবতরণ করে রাত ১২টা ৫০ মিনিটে। একইভাবে জেদ্দা থেকে আসা এসভি-৮০৩ রাত ১২টায় অবতরণের কথা থাকলেও তা পৌঁছায় রাত ১টা ১৫ মিনিটে। ১২টা ২০ মিনিটে কুয়ালালামপুর থেকে এয়ার এশিয়ার একে-৭০ ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট পর রাত ১টা ২০ মিনিটে অবতরণ করে। থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩৪০ প্রায় ৪০ মিনিট দেরিতে রাত ২টায় অবতরণ করে। গত ২১ ঘণ্টায় ৪৬টি ফ্লাইট দেরিতে উড্ডয়ন ও অবতরণ করেছে। এ বিষয়ে বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন ইকবাল করিম জানান, রানওয়েতে লাইটিং কাজের জন্য ফ্লাইট সিডিউলে তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। এসময়টাতে যাদের সিডিউল ছিল তাদের আগেই জানানো হয়েছে, ১ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত রানওয়েতে লাইটিংয়ের কাজ চলবে। তারা ঠিক সেভাবেই তাদের ফ্লাইট রি-সিডিউল করেছিল। এ ছাড়া প্রণব মুখার্জীর বিশেষ ফ্লাইটের জন্য তেমন কোন ধরনের অসুবিধা হয়নি। এটা বিশেষভাবে ম্যানেজ করা হয়েছে। এদিকে টঙ্গীর তুরাগ তীরে রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে বাড়তি ভোগান্তির শিকার হন বিমানবন্দরে আসা যাত্রী ও দর্শকরা। উত্তরা এলাকায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মোঃ সালাউদ্দিন বলেন, মোনাজাতের পর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে যায়। তখন গাড়ি চলাচল করতেও সমস্যা হচ্ছিল। দুপুর ১টার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। উল্লেখ্য, আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে শনিবার মধ্যরাত থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস থেকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এজতেমা ময়দান ছাড়াও দক্ষিণে খিলক্ষেত, উত্তরে চেরাগ আলী, পূর্বে টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরী ও পশ্চিমে আশুলিয়া পর্যন্ত প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রায় ২৫ লাখ মানুষ শামিল হন এই মোনাজাতে। এদিকে চট্টগ্রাম অফিস জানিয়েছে, ঘন কুয়াশার কারণে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারেনি মাস্কাট থেকে যাত্রী নিয়ে আসা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট। উপায়ান্তর না থাকায় ফ্ল্যাইটটি অবতরণ করে কলকাতা বিমানবন্দরে। অপরদিকে সিঙ্গাপুর থেকে আসা একটি ফ্ল্যাইট ঢাকায় অবতরণ করতে না পেরে নেমেছে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে। মাস্কাট থেকে আসা একটি ফ্ল্যাইট অবতরণ করার কথা ছিল চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। কিন্তু ঘন কুয়াশা থাকায় এটি নামতে না পেরে অবতরণ করেছে কলকাতায়। আর সিঙ্গাপুর থেকে যাত্রী নিয়ে আসা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ঢাকায় নামতে না পেরে চট্টগ্রামে অবতরণ করে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যানেজার উইং কমান্ডার রিয়াজুল কবির জানান, ঘন কুয়াশার কারণে স্বাভাবিক বিমান উঠানামা বিঘ্নিত হচ্ছে। রবিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত চারটি ফ্ল্যাইট সঠিক সময়ে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে উড্ডয়ন করতে পারেনি। বিমানের প্রথম ফ্লাইট সকাল ৯টা ০৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবার কথা থাকলেও যেতে পারেনি। একইভাবে বিলম্বিত হয় সাড়ে ১০টার ফ্লাইটও।
×