ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাঘের শুরুতেই জনজীবনে দুর্ভোগ

তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীত, ঘন কুয়াশা

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮

তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীত, ঘন কুয়াশা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাঘের শুরুতেই তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় কাঁপছে দেশ। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মক ব্যাহত হয় রবিবার। এমন তীব্র শীতের ছোঁয়া থেকে রেহাই পায়নি রাজধানীবাসীও। দিনভর কুয়াশায় ঢাকা ছিল রাজধানীর আকাশ। কনকনে শীতে দুর্ভোগে পড়ে নগরবাসী। দেশের সর্বত্র আবহাওয়ার এমন অবস্থা বিরাজ করে। ঘন কুয়াশায় জল ও সড়কপথে যান চলাচল চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সূর্যের মুখ দেখছে না দেশবাসী। সাময়িকভাবে বন্ধ থাকছে ধানের চাতালগুলো। বেড়ে যেতে পারে চালের দাম। বোরো চাষের জন্য তৈরি বীজতলার চারা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক। এ বছর তাপমাত্রা দেখে শীতের তীব্রতা অনুধাবন করাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাপমাত্রা বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে শীত ও ঘন কুয়াশার মাত্রা বেড়েই চলেছে। তিনদিন ধরে রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বেড়েই চলেছে শীতের তীব্রতা। রাজধানীর শীতের তীব্রতা দেখে মনে হচ্ছে, মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অথচ রবিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় যথাক্রমে ২০.২ ও ১২.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস । শনিবার ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ২০.৫ ও ১১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সারাদেশের তাপমাত্রারও একই চিত্র দেখা গেছে। শনিবারের তুলনায় রবিবারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ রবিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কক্সবাজারে ২৫.৭ ও সর্বনিম্ন যশোরে ৭.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। তাপমাত্রার সঙ্গে তাল না রেখে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির বিষয়ে আবহাওয়াবিদরা বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলেও সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য হ্রাস পেয়েই চলেছে। এই পার্থক্য যতই হ্রাস পাবে শীতের তীব্রতা ততই বাড়বে। আর ঘন কুয়াশা, দিনের তাপমাত্রা হ্রাস এবং ঠা-া বাতাসের কারণেও শীতের তীব্রতা বেড়েছে। ঘন কুয়াশায় উপরে উঠতে পারছে না জলীয়বাস্প। নিজস্ব সংবাদদাতা টাঙ্গাইল থেকে জানান, টাঙ্গাইলে শীতের প্রভাবে শিশুরোগ বাড়ছে। প্রতিদিন ডায়রিয়া, আমাশয়, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগাক্রান্ত শিশুরা ভর্তি হচ্ছে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে। ফলে আসন না পেয়ে হাসপাতালের মেঝেতেই বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকরা। এতে কর্তব্যরত চিকিৎসক, সেবিকারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, নওগাঁ অঞ্চলে তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে শুরু করলেও শীতের তীব্রতা কমেনি। রবিবার দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামে টানা শৈত্যপ্রবাহে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। শীতের তীব্রতা বেশি হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। কাজে বের হতে না পারায় পরিবার-পরিজনসহ অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছে তারা । নিজস্ব সংবাদদাতা পটুয়াখালী থেকে জানান, রবিবার ঘন কুয়াশার কারণে নির্ধারিত সময়ের সাত ঘণ্টা পরে ঢাকা থেকে পটুয়াখালী এসে পৌঁছে যাত্রীবাহী ডবলডেকার দুটি লঞ্চ। এ ছাড়া সকাল ৮টা পর্যন্ত ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালী ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। এ কারণে নদীর দুইপারে ছিল যানবাহনের দীর্ঘ সারি। নিজস্ব সংবাদদাতা লক্ষ্মীপুর থেকে জানান, উত্তরের হিমেল হাওয়াসহ লক্ষ্মীপুরে শীত জেঁকে বসেছে। পাশাপাশি কুয়াশার প্রকোপে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে তুলেছে। রবিবার সারাদিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। নিজস্ব সংবাদদাতা কলাপাড়া থেকে জানান, সাগরপারের জনপদ কলাপাড়ার গোটা উপকূলীয় এলাকায় অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রবিবার দিনভর কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল গোটা এলাকা। কখনও পাঁচ-দশ মিনিটের জন্য সূর্য উঁকি দিয়ে আবার উধাও। স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহে হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে কাবু হয়ে পড়েছে উত্তরের জনপদ দিনাজপুরের মানুষ। হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠান্ডায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে শ্রমজীবী হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষজন। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের বেড়েছে চরম দুর্দশা। ঠা-ার কারণে ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন না অনেকেই। তীব্র শীতের প্রকোপে দেখা দিয়েছে নানা রোগ। হাসপাতালে বেড়েই চলেছে শিশু ও বয়স্ক রোগীসংখ্যা। ঘন কুয়াশায় নষ্ট হচ্ছে বোরো বীজতলা ও আগাম জাতের আলুসহ বিভিন্ন ফসল।
×