ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিহত তিন জঙ্গীর একজন কুমিল্লার মেজবা উদ্দিন

নাখালপাড়ার রুবি ভিলায় জঙ্গীরা বারবার আস্তানা গাড়ে কেন?

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮

নাখালপাড়ার রুবি ভিলায় জঙ্গীরা বারবার আস্তানা গাড়ে কেন?

শংকর কুমার দে ॥ ‘রুবি ভিলা’, রাজধানী ঢাকার পশ্চিম নাখালপাড়ার ১৩/১এর ৬ তলার এই বাড়িটিই এখন মুখে মুখে আলোচনায়। এই বাড়িতেই জঙ্গীবিরোধী অভিযান চালানো হলো চার বার। একই বাড়িতে জঙ্গীদের আস্তানা নিয়ে সামনে এসেছে নানা প্রশ্ন। সর্বশেষ গত শুক্রবার জঙ্গীবিরোধী অভিযানে আত্মঘাতী হয়ে নিহত হয়েছে তিন। দুই দিন পর নিহত তিনজনের মধ্যে পরিচয় মেলে একজনের। নিহত তিনজনের মধ্যে জাহিদ নামে যে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করেছিল তার প্রকৃত পরিচয় কুমিল্লার মেজবা উদ্দিন। তেজগাঁও থানায় রুবি ভিলায় জঙ্গীবিরোধী অভিযানের ঘটনায় মামলা করেছে র‌্যাব। সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্তে তিনজনেরই বুলেটের আঘাতে মৃত্যু ঘটেছে বলে ময়নাতদন্তকারী ডাক্তারের দাবি। বাড়ির মালিক বিমানের কেবিন ক্রু শাহ মোঃ সাব্বির হোসেনের বাড়িতে বারবার জঙ্গী আস্তানা গড়ে তোলার বিষয়ে তদন্ত করছে র‌্যাব। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম নাখালপাড়ার রুবি ভিলায় প্রথম জঙ্গীবিরোধী অভিযান চালানো হয় ২০১৩ সালে। এরপর জঙ্গীবিরোধী অভিযান চালানো হয় ২০১৬ সালে। তারপর জঙ্গীবিরোধী অভিযান চালানো হয় ২০১৭ সালে। এরপর সর্বশেষ জঙ্গীবিরোধী অভিযান চালানো হলো ২০১৮ সালের ১২ জানুয়ারি। এই অভিযানেই আত্মঘাতী হয়ে নিহত হয়েছে তিন তরুণ যুবক। এর আগেও যে ৩ বার এই বাড়িতেই জঙ্গীবিরোধী অভিযান চালিয়েছিল তখন জঙ্গী সন্দেহে আটক করা হয়েছিল বেশকিছু তরুন ও যুবককে। গত শুক্রবার রুবি ভিলায় জঙ্গীবিরোধী অভিযান চালিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। আর পুলিশ চালিয়েছে একবার। রুবি ভিলায় এর আগে যে ৩ বার জঙ্গীবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে তখন জঙ্গি সন্দেহে তরুন-যুবকরা আটক হয়েছে। ওই সময় আটক ও গ্রেফতার ‘জঙ্গীরা ছাড়াও পেয়েছে। আগের অভিযানগুলোতে আটক ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটলেও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সরেজমিনে ঘুরে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ছয়তলার রুবি ভিলার সব ফ্লাটেই পরিবার থাকে, তবে শুনেছি ছয়তলা ও পাঁচতলার একটা অংশে মেস ভাড়া দেয়া হয়। বাড়ির মালিক সাব্বির হোসেন স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে বাড়ির দ্বিতীয় তলায় থাকেন। বাড়ির মালিক সাব্বির হোসেনকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমান বন্দর থেকে শুক্রবারই আটক করে র‌্যাব। তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জঙ্গীবিরোধী অভিযানের বিষয়ে বলেন, গত বছর ওই বাসায় অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। তখন ওই বাসা থেকে জামায়াত শিবিরের তিন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আর তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলাও করা হয়েছিল। র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেছেন, এর আগে ২০১৩ ও ২০১৬ সালে র‌্যাব আরও দুইবার অভিযান চালায় এই বাসায়। সে সময় কয়েকজন জেএমবির সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সর্বশেষ গত ১২ জানুয়ারি নিহত তিনজনই জেএমবির সদস্য ছিল। রাজধানীতে একটি সেল গঠন করে বিভিন্ন সরকারী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা হচ্ছে, এ তথ্যের ভিত্তিতে এ বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। নিহত তিন ‘জঙ্গী’ ছিল জেএমবির সদস্য। তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হামলার পরিকল্পনা নিয়েই বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল। তবে নিহত তিন জঙ্গীর মরদেহ ভবনের ভেতরে পড়ে আছে। তিনজনই পুরুষ। তাদের বয়স ২০-৩০ এর মধ্যে। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, অবিস্ফোরিত গ্রেনেড, সুইসাইডাল ভেস্ট (বোমা বাঁধার যন্ত্র) উদ্ধার করা হয়েছে। ভুয়া আইডি কার্ড ॥ যেভাবে রুবি ভিলায় জঙ্গীরা ভাড়া নেয় তা তদন্তে পাওয়া যায় যে, তারা ভুয়া আইডি কার্ড ব্যবহার করেছে। এই জানুয়ারি মাসেই বাসা ভাড়া নেয় জঙ্গীরা। তখন একই ব্যক্তির দুটি জাতীয় পরিচয় জমা দেয়া হয়। আসলের মতো দেখতে আইডি কার্ডে জাহিদ এবং জমা দেয়া ফটোকপিতে সজিব নাম লেখা ছিল। তখনই র‌্যাবের সন্দেহ হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র দুটিই ফেক (ভুয়া) হতে পারে। কারণ একই ব্যক্তির ফটো সংবলিত পরিচয়পত্রে দুটি নাম রয়েছে। একজনের পরিচয় মিলেছে ॥ রুবি ভিলায় ‘আত্মঘাতী হওয়া’ তিন জঙ্গীর মধ্যে জাহিদ নামে যে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করেছিল তার প্রকৃত পরিচয় মিলেছে। অনুসন্ধানে জাহিদের ফিঙ্গার প্রিন্ট একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিলে যায়। ওই জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী জাহিদের মূল নাম মেজবা উদ্দিন। তার বাবার নাম- এনামুল হক ও মা তাহমিনা আক্তার। বাড়ি কুমিল্লায়। রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ায় রুবি ভিলার ৫ম তলায় র‌্যাবের জঙ্গীবিরোধী অভিযানে জাহিদ নামে দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। পরিচয়পত্র দুটিতে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক পরিচয় নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয় এবং পরিচয়পত্রটি ভুয়া পরিচয়পত্র হিসেবে প্রতীয়মান হয়। পরবর্তীতে তার প্রকৃত পরিচয় উদঘাটনে র‌্যাব অনুসন্ধান শুরু করে।
×