ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কলড্রপ

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮

কলড্রপ

স্বদেশে বা বিদেশে প্রিয়জন বা অভিভাবকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার মাঝখানে হঠাৎ হঠাৎ লাইন কেটে যায়। কথা থেকে যায় অসমাপ্ত। সুতরাং আবার সংযোগ পাওয়ার জন্য সাধনা করতে হয়। এতে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ নতুন করে লাইন পাওয়ার পর বিল শুরু হয় আবার প্রথম থেকে। ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় গ্রাহককে। কিন্তু ধারাবাহিক কথা বলার সময় কলরেট কমে আসে। এই চর্চা চলে আসছে অনেকদিন ধরে। অপারেটররা এই কাজটি করে আসছে নির্বিঘেœ। এতে তারা আর্থিকভাবে হয় লাভবান আর ক্ষতিগ্রস্ত হন ফোন ব্যবহারকারী গ্রাহক। এই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। সীমাহীন এই কলড্রপে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন ফোনের গ্রাহকরা। জরুরী এবং গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার মাঝখানে এভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া শুধু বিরক্তি নয়, ক্ষোভও তৈরি করে, যা হওয়ার কথা নয়। বিভিন্ন অপারেটরের মাধ্যমে প্রতিদিন এক কোটি নব্বই লাখ মিনিট কলড্রপ হচ্ছে। এই কলড্রপ থেকে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েক কোটি টাকাÑ এমন অভিযোগ অনেকদিনের। আর এই টাকার কোন রাজস্ব সরকারী কোষাগারে জমা দেয়া হয় না। ফলে এক বিরাট অঙ্কের অর্থ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। কলড্রপের টাকা, যাকে ‘টক টাইম’ বা কথা বলার সময় হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তা গ্রাহকদের ফেরত প্রদানের জন্য বছরখানেক আগে বিটিআরসি নির্দেশ দিয়েছিল। এ জন্য ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এই নির্দেশ হয়েছে উপেক্ষিত। অপারেটররা সামান্য গুরুত্বও প্রদান করেনি বিষয়টিতে। তাই নির্ধারিত জুন মাস পেরিয়ে যাওয়ার অনেক পরে তারা বিটিআরসিকে জানিয়েছিল যে, এই অর্থ গ্রাহকদের ফেরত দেয়া হচ্ছে। তবে তা শুভঙ্করের ফাঁকি। উপেক্ষা আর ঔদাসীন্যে জর্জরিত বিটিআরসি মনিটরিং করেনি যে, গ্রাহকরা অর্থ ফেরত পেয়েছে কিনা। ফলাফল তাই শূন্যতায় ভরা। বিটিআরসি আরও নির্দেশ দিয়েছিল যে, প্রতি মাসের কলড্রপের হিসাব বিটিআরসিতে জমা দিতে হবে। কিন্তু এই নির্দেশ যে ¯্রফে কাগুজে এবং বাস্তবে মেলে না, তা প্রমাণ করে দিয়েছে অপারেটরা। তবে একটি অপারেটর গত বছর তাদের ৬০ লাখ মিনিট কলড্রপের হিসাব জমা দিয়েছিল। এটা স্পষ্ট হয় যখন প্রতিষ্ঠানটির উর্ধতন কর্মকর্তা এভাবে বলেন যে, বলা মুশকিল অপারেটররা কলড্রপের ক্ষতিপূরণ গ্রাহকদের দিচ্ছে কিনা। এই ভাষ্য অবান্তরই বলা যায়। কারণ তারা যদি অর্থ ফেরত দিত তবে বিটিআরসির কাছে মাসে মাসে হিসাব জমা দিত। কিন্তু তারাও দেয় না, সংস্থাটিও চায় না। আর গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেই থাকছে। দেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহক সংখ্যা ১৪ কোটি ছাড়িয়েছে। অপারেটররা খোঁড়া যুক্তি হাজির করেছে যে, ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জের (আইসিএক্স) ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের দুর্বলতার কারণে কলড্রপ হচ্ছে। এর বাইরে ফাঁকা স্থানে হঠাৎ উঁচু ভবন নির্মাণ এবং থ্রিজি নেটওয়ার্ক কার্পেটিংয়ের কারণেও কলড্রপ হয়ে আসছে। বিটিআরসি অবশ্য সান্ত¡না দিচ্ছে যে, কলড্রপ হতে পারে, তবে তা সহনীয় মাত্রায়। অথচ প্রতিবেশী ভারতে কলড্রপ হলে গ্রাহক টাকা বা সমপরিমাণ ‘টক টাইম’ ফেরত পান। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এই বিধিবিধান রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ তথা জনজীবনে মোবাইল ফোন হয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিড়ম্বনা। মানুষের সঙ্গে প্রতারণার শামিল হিসেবে গণ্য হতে পারে বিষয়টি। কলড্রপ প্রথা বন্ধ করা যেমন চায় গ্রাহক, তেমনি চায় কার্যকর সেবা পেতে। এই অবস্থা থেকে উদ্ধার হওয়া জরুরী।
×