ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী নির্বাচন নিয়ে সংলাপের প্রয়োজন নেই ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮

আগামী নির্বাচন নিয়ে সংলাপের প্রয়োজন নেই ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, প্রয়োজনে সংলাপ হতে পারে, তবে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংলাপের কোন প্রয়োজন নেই। শনিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের এমন অবস্থানের কথা তুলে ধরে দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন বিএনপির অধিকার, এটা সুযোগ নয়। বিএনপি নির্বাচনে আসবে সরকারের দয়ায় নয়। বসাবসির কী প্রয়োজন এখানে? সংবিধানে যে পথ রেখা দেখিয়েছে, সেই পথ বাদ দিয়ে আবার সংলাপ করতে হবে কেন? সরকারের দয়া-দাক্ষিণ্যের ওপর কী নির্বাচন করবে বিএনপি? সরকার কি দয়া-দাক্ষিণ্য নিয়ে বসে আছে? দয়া করবে? তাদেরকে আর এক একবার সাধিতে হবে কেন? তাহলে সংলাপে বসবে কেন? নির্বাচন কোনও জটিলতা আছে বলে দেশের জনগণ মনে করে না। তিনি বলেন, সংলাপ কেন হবে না, প্রয়োজন হলে হবে। চিরদিনের জন্য বন্ধ করতে চাই না, আমরা একটা রাজনৈতিক দল। প্রয়োজনে সংলাপ হতে পারে, কিন্তু এখন নির্বাচনের ব্যাপারে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা দেখছি না। নির্বাচনের জন্য সংবিধানের যে পথ রয়েছে, সেই অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সেই পথ নিয়ে সংলাপ করতে হবে কেন? সেরকম যদি কোন সঙ্কট সামনের দিনগুলোতে দেখা যায়, তাহলে পরিস্থিতি বলে দিবে দেশে তখন কী করতে হবে। সংলাপের পরিবেশ তো বিএনপিই রাখেনি। জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের জবাব দিতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারের চারবছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে সাধারণ মানুষ খুশি হয়েছেন। কিন্তু হতাশ হয়েছে বিএনপি। আগামী নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়ে বিএনপি নেতারা এখন আবোল তাবোল বকছেন। মিথ্যাচারের পুরনো ভাঙ্গা রেকর্ড আবারও বাজাচ্ছেন তারা। আজ তারা (বিএনপি) হতাশার বালুচরে হাবুডুবু খাচ্ছেন। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের জন্য খালেদা জিয়াকে ফোন করে গণভবনে আমন্ত্রণ জানানোর পরও তাঁর না যাওয়া এবং বিএনপির নেত্রীর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর তাদের বাড়িতে গেলেও দরজা বন্ধ করে প্রধানমন্ত্রীকে ঢুকতে না দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সংলাপের পরিবেশ বিএনপিই রাখেনি। সেদিন প্রধানমন্ত্রীকে নোংরা ভাষায় অসৌজন্যমূলক কথা বলেছেন খালেদা জিয়া, সেটা কী এদেশের মানুষ ভুলে গেছে? তিনি বলেন, সেদিন প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে খালেদা জিয়া গণভবনে এলে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চেহারাটা অন্যরকম হতো। সংলাপের পরিবেশ তো তারাই নষ্ট করলেন। পুত্রহারা মাকে সান্ত¡না দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার পর ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে সংলাপের দরজা বন্ধ করে দিলেন তিনি (খালেদা জিয়া)। সমঝোতা হবে কার সঙ্গে? আগুন তা-বের সঙ্গে? যারা প্রধানমন্ত্রীকে তাদের নিজের বাড়িতে অপমান করল সন্ত্রাসের লাশ সামনে রেখে তাদের সঙ্গে? ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন হবে নিয়ম অনুযায়ী। কুমিল্লায় হয়েছে, রংপুরে হয়েছে, সামনে ঢাকা সিটিতেও হবে। তারা আসবেন। আরেকবার সাধিলে খাইবো, এটা কী সমঝোতা? তিনি বলেন, বিএনপি সংলাপের কথা যতই বলে, এটা তাদের রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি। সংলাপের মানসিকতা তাদের মধ্যে নেই। তারা সংলাপ চায় না। সংলাপের ইচ্ছা থাকলে নোংরা ভাষায় সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখান করতো না তারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ক্রাইসিস পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তারা যা করবেন, যা করতে চান- সেই রকম পরিস্থিতি তারা দেশের জনগণকে দিয়ে করতে পারবেন না। জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করার সক্ষমতা, সামর্থ্য তাদের নেই। বাংলাদেশের জনগণ শেখ হাসিনার সততা, পরিশ্রম, কর্মনিষ্ঠা, উন্নয়ন ও অর্জনে খুব খুশি। বিএনপির আন্দোলনে দেশের জনগণ সাড়া দেবে না। আন্দোলন কী অগ্নিসন্ত্রাস? এমন প্রশ্ন তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনের নামে এবার কোনও আগুন-সন্ত্রাস হলে বাংলাদেশের জনগণ বিএনপিকে মাঠেই প্রতিরোধ করবে। এজন্য কোনও সংলাপের প্রয়োজন হবে না, মাঠেই সংলাপ হবে। এবার আর কোনও অচলাবস্থা তৈরি করতে পারবে না, জনগণ তা হতে দেবে না। আগুন-সন্ত্রাস করে তারা যে ভুল করেছে, সেই ভুলের মাশুল বিএনপিকে আরও অনেকদিন দিতে হবে। এ মাশুল শুধু নির্বাচনে নয়, আরও অনেক দিন দিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাহবুব উল আলম হানিফ, আহমদ হোসেন, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সুজিত রায় নন্দী, হাবিবুর রহমান সিরাজ, ফরিদুন্নাহার লাইলী, দেলোয়ার হোসেন, রোকেয়া সুলতানা, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, এস এম কামাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, গোলাম রাব্বানী চিনু প্রমুখ।
×