ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নতুন রেকর্ড

আওয়ামী লীগ সরকারের ৯ বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে তিনগুণ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮

আওয়ামী লীগ সরকারের ৯ বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে তিনগুণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের টানা নয় বছরের শাসনামলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের শেষ সময়ে জাতীয় মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। কিন্তু ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর নয় বছরে গড় মাথাপিছু আয় উন্নীত হয়েছে ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার। অঙ্কের হিসাবে প্রায় ৩ গুণ বেশি। শুধু মাথাপিছু আয় কেন-অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সব সূচকে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। উন্নয়নমেলা- ২০১৮ সালে এবার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত উন্নয়নমেলা পরিদর্শন করে দর্শনার্থীরা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নমেলার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় শনিবারের পড়ন্ত বিকেলেও জাতীয় শিল্পকলার সবুজ চত্বরে অনুষ্ঠিত উন্নয়নমেলায় উপচে পড়েছিল দর্শনার্থীরা। এবারের উন্নয়নমেলায় সরকারী কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তারাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়া সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো। ঢাকার পাশাপাশি প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও এবার উন্নয়নমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও দফতরের সচিব ও উর্ধতন কর্মকর্তারা তিন দিন উন্নয়নমেলা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ওই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মুসলিম চৌধুরীসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা ঢাকার পাশাপাশি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে গেছেন উন্নয়নমেলা দেখতে। এর আগে গত ১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে উন্নয়নমেলার উদ্বোধন করেন। ঢাকার উত্তরা থেকে শিল্পকলায় উন্নয়নমেলা দেখতে এসেছেন মহিলা উদ্যোক্তা সেলিনা হোসেন। প্রতিটি স্টল ঘুরে ঘুরে দেখেছেন এই নারী উদ্যোক্তা। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, সত্যিই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। মেলায় এসে জানা গেলো, এদেশে এখন সব ধরনের ভোক্তা তৈরি হয়েছে। এ কারণে ছোট ছোট শিল্পের উদ্যোক্তারাও ভবিষ্যতে বিনিয়োগের মাধ্যমে ভাল ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবেন। তিনি বলেন, মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে যাওযায় ক্রয় ক্ষমতাও বেড়েছে। ক্রয় ক্ষমতা বাড়লে সেখানে অর্থনৈতিক কর্মকা-ের পরিধিও বড় হয়। এ কারণেই মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছে বাংলাদেশ। এদিকে, সেলিনা হোসেনের মতো অনেক নারী উদ্যোক্তা এখন নতুন স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন। নতুন বিনিয়োগের স্বপ্ন দেখছেন তারা। উন্নয়নমেলায় এসে একই ছাদের নিচে সব মন্ত্রণালয় ও দফতরের কর্মকা- ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়েছে। উন্নয়নমেলা সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থ সচিব মোঃ মুসলিম চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, উন্নয়নমেলার বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ মেলায় প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও দফতর তাদের কর্মকা- জনগণের সামনে তুলে ধরছে। এতে করে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশের সবাই দেশের উন্নয়ন সম্পর্কে তথ্য পাচ্ছেন। দেশকে এগিয়ে নিতে সঠিক তথ্য পরিবেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উন্নয়নমেলা থেকে সবাই সরকারের কর্মকা- সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাচ্ছেন। সরকারের অন্যান্য দফতর ও মন্ত্রণালয়ের মতো এবারের উন্নয়নমেলায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। সংস্থাটি বলছে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বর্তমান সরকার নতুন রেকর্ড অর্জন করতে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত জোটের সময় দেশের তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। গত ২০০৬ সালে বিএনপির শেষ সময়ে দেশে বিদ্যুত উৎপাদন হয়েছে ৫ হাজার ২৪৫ মেগাওয়াট। আর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে রেকর্ড বিদ্যুত উৎপাদন হয়েছে। বর্তমান ১৫ হাজার ৩৭৯ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে। বিদ্যুতের আরও বড় কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। এসব প্রকল্প থেকে বিদ্যুত পাওয়া গেলে নতুন শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। ইতোমধ্যে এলএনজি টার্মিনাল, ওষুধ শিল্পপার্ক, মেট্রোরেল, রূপপুর পাওয়ার প্লান্ট, প্লাস্টিক শিল্প, চামড়া শিল্প, এলপিজি গ্যাস, পদ্মা সেতু, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, আইসিটি, তৈরি পোশাক শিল্প এবং পায়রা বন্দর উন্নয়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বিডা’র মতে, উন্নয়নের রোল মডেল শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে বিনিয়োগ করুন, নিজে সমৃদ্ধ হোন এবং দেশকে সমৃদ্ধ করুন। ২০০৬ সালের সঙ্গে তুলনা করে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের অর্থনীতি কোন পর্যায়ে রয়েছে তার একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছে বিডা। ২০০৬ সালে রফতানি আয় ছিল ১০ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার এখন তা ৩৮ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ দশমিক ৪৮ থেকে বেড়ে ৩৩ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার, প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল ৬৬ দশমিক ৫ থেকে বেড়ে ৭১ দশমিক ৬ উন্নীত, দারিদ্র্যের হার ৩৮ দশমিক ৪ থেকে নেমে ২৩ দশমিক ২ শতাংশ, সাক্ষরতার হার ৫২ দশমিক ৫ থেকে বেড়ে ৭১ শতাংশ, শিশু মৃত্যুহার ৪৮ থেকে নেমে ২৮ জনে এবং খাদ্য উৎপাদন ২ কোটি ৭৯ লাখ মেট্টিক টন থেকে বেড়ে ৩ কোটি ৮৮ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। পর্দা নামল উন্নয়নমেলার ॥ সারাদেশে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত উন্নয়নমেলা-২০১৮ এর পর্দা নেমেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। তবে এখন থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস সামনে রেখে প্রতিবছর এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মেলার শেষ দিন শনিবার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত জেলা পর্যায়ের সব দফতরের বিভিন্ন সেবার তথ্য প্রদর্শন করা হয়। সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন ও আজকের বাংলাদেশ শিরোনামের আলোচনা সভা করা হয়েছে। এছাড়া বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকল্পের প্রদর্শনী ও কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এবারের উন্নয়নমেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান করা হয়। সন্ধ্যা ৬টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় তিন দিনব্যাপী উন্নয়নমেলার।
×