ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মধুখালী বন উজাড়

প্রাচীন গাছ কেটে পাচার

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮

প্রাচীন গাছ কেটে পাচার

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৩ জানুয়ারি ॥ পূর্ব-মধুখালীর লেকের পাড়ে বেড়িবাঁধের বাইরের অন্তত দুই শ’ ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধশত গাছ রয়েছে প্রচীন। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে তিন লক্ষাধিক টাকার গাছসহ লেকের পাড়ের মনোরম বনাঞ্চল এ কারণে পরিণত হচ্ছে বিরানভূমিতে। একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ ওই বনের ছোট্ট একটি গাছ কাটলেও বনবিভাগ মামলা ঠুকে দেয়। অথচ এত গাছ কাটার পরেও বনবিভাগের বিট কর্মকর্তা রয়েছেন নীরব। একদিকে জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার সবুজ দেয়াল বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে অপরদিকে সরকারের কয়েক লাখ টাকার গাছ প্রভাবশালী একটি মহল কেটে নিয়ে গেল। হাসান মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি এই গাছ কাটার হোতা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি ওই বনাঞ্চল উজাড় করে মাছের ঘেরের পরিকল্পনা করেছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ৬০-৭০ বছর আগে প্রাকৃতিকভাবে মধুখালীর সংযোগ নদীরপাড় ভরাট হওয়া চরে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির কেওড়া, বাইন ও গেওয়াসহ গুল্মজাতীয় গাছপালা জন্মায়। সরকার এই বাগানের মালিক। স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, ভয়াল ঘূর্ণিঝড় সিডরের জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটা প্রতিরোধ করেছিল এই গাছগুলো। অরক্ষিত রয়েছে বেড়িবাঁধ। মধুখালীর দুইপাড়েই দীর্ঘ এলাকা নিয়ে এমন প্রাচীন ম্যানগ্রোভ গাছ রয়েছে হাজার হাজার। কিন্তু মধুখালী ব্রিজের দক্ষিণ দিকে দুই দিনে বিশাল আকৃতির ৫০/৬০টি প্রাচীন বাইন ও কেওড়া গাছসহ ছোটবড় দুই শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। যা ট্রলার বোঝাই করে পাচার করা হচ্ছে। জানা গেছে সেনা সদস্য ও মধুখালীর বাসিন্দা হাসান মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি এই বনাঞ্চলকে জমি দাবি করে একজন বন্দোবস্ত গ্রহীতার কাছ থেকে কিনেছেন। গাছ কাটার জন্য বনবিভাগের কাছে আবেদন করেছেন। তিনি স্থানীয়দের বলেছেন, বনবিভাগ তাকে গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছেন। অথচ বনবিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান, আমাদের গাছ নয়। আমরা এ সংক্রান্ত অনুমতি দিতে পারি না। শুধু একটি মতামত দিয়েছি। এ ছাড়া এলাকার লোকজন জানান, বনাঞ্চল কীভাবে আরও ৩০-৩৫ বছর আগে চাষযোগ্য কৃষি জমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেয়া হলো। আর ৫০-৬০ বছর আগের জন্মানো গাছের মালিক সরকার সেই গাছ কোন ধরনের অনুমতি ছাড়াই পরিবেশ প্রতিবেশ ধ্বংস করে কেটে ফেলা হলো তাও তারা ভেবে শঙ্কিত। একদিকে মনোরম সৌন্দর্য নষ্ট করছে। ধ্বংস করছে প্রাকৃতিক সবুজ দেয়াল। এলাকার প্রবীণ মানুষসহ সকল শ্রেণীর মানুষ এমন বনাঞ্চল নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন। অভিযুক্ত মোঃ হাসান মাহমুদ জানান, তিনি বনবিভাগের পটুয়াখালীস্থ বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে গাছ কাটার জন্য অনুমতি চেয়েছেন। অনুমতি পেয়েছেন কি-না তা জানেন না। কেন আগেভাগেই গাছ কেটেছেন এর কোন উত্তর মেলেনি। সহকারী কমিশনার (ভূমি) খন্দকার রবিউল ইসলাম জানান, তিনি ঘটনাস্থলে তহশীলদার পাঠিয়েছেন। প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পটুয়াখালী বিভাগীয় বনকর্মকর্তা অজিত কুমার রুদ্র জানান, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তিনিও জানান, বনবিভাগ কাউকে গাছ কাটার কোন অনুমতি দেয়নি।
×