ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তবে মারাত্মক ত্রুটি সংশোধন করতে হবে, নইলে প্রত্যাহার

ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বহাল রাখছেন ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮

ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বহাল রাখছেন ট্রাম্প

ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছেন না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তিটি তিনি আপাতত বহাল রাখছেন। রিপাবলিকান দলের এই নেতা অনেকটা অনিচ্ছাকৃতভাবে নিষেধাজ্ঞা পরিহারে রাজি হয়েছেন। ওয়াশিংটন আরও ১২০ দিন চুক্তির অঙ্গীকার মেনে চলার কথা বলেছে। এটাই শেষবার বলে সতর্ক করে দিয়েছেন ট্রাম্প। -খবর এএফপির তিনি বলেন, এই চার মাসের মধ্যে কংগ্রেস ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান ইউরোপীয় মিত্ররা নতুন একটা চুক্তি তৈরি করবে, তেহরানের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বর্তমান চুক্তির মারাত্মক ত্রুটিগুলো সংশোধন করবে। এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, আমার প্রচ- ইচ্ছা সত্ত্বেও ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি থেকে আমি যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছি না। সামনে অগ্রসর হওয়ার দুটো উপায় আমি বলে দিতে পারি। হয় মারাত্মক ত্রুটিগুলো সংশোধন করতে হবে, না হলে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে আসবে। মার্কিন আইনের ভিতরেই নতুন চুক্তি রূপরেখা আছে বলে মনে করেন। তিনি এতে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানিকেও অন্তুর্ভুক্ত করতে চান। তার মতে, নিষেধাজ্ঞার শিথিলতা অব্যাহত রাখতে ইরানের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। বিশেষভাবে বর্তমান চুক্তিতে সময়সীমা বেধে দেয়া আছে, যা শেষ হবে ২০২৪ সালে। কিন্তু স্থায়ী বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে তা কেবল দেশটির পারমাণবিক চুল্লির ওপরই বর্তাবে না, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও অন্তুর্ভুক্ত হবে। ট্রাম্প বলেন, চুক্তির শর্তে মেয়াদ উত্তীর্ণের কোন তারিখ থাকতে পারে না। আমার নীতি হলো, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র মজুদের সকল পথ বন্ধ করে দেয়া। কেবল দশ বছরের না, চিরদিনের জন্য। ইরান যদি এসব শর্ত মেনে চলতে অপারগতা দেখায়, তবে দেশটির ওপর আমেরিকান পারমাণবিক নিষেধাজ্ঞা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাবে। ট্রাম্প অবশ্য ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত আইন সংশোধনে কংগ্রেসের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। যাতে প্রতি নব্বই দিন পরপর ইরান চুক্তি মেনে চলছে কিনা, তা ঘোষণা দেয়া না লাগে। অথবা প্রতি ১২০ কিংবা ১৮০ দিন পর পর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে না হয়। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মদ জাভেদ জারিফ টুইটারে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত কিংবা ঘোষণাকে একটি সত্যিকারের বহুপক্ষীয় চুক্তিকে ভিত্তিহীন করে দেয়ার চেষ্টা বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, চুক্তিটি পুনরায় আলোচনার অযোগ্য। ফাঁকা বুলি না আউরিয়ে ইরানের মতো যুক্তরাষ্ট্রকেও চুক্তি মেনে চলার অনুরোধ জানান তিনি। ইরানকে শাস্তি দিতে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প, কেবল পারমাণবিক অস্ত্রের জন্যই না, সম্প্রতি বিক্ষোভে ব্যাপক ধরপাকড়ের সময় তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগেও দেশটিকে শাস্তি দিতে চান। ইতিমধ্যে ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান সাদেগ আমলি লারিজানির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এখন থেকে তিনি মার্কিনিদের সঙ্গে কোন ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখতে পারবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগ জানায়, ইরানের পার্লামেন্টের স্পীকার ও সাবেক পরমাণু আলোচক আলী লারিজানির ভাই আমলি কারাগারে আটকদের ওপর নির্যাতন ও অসদাচরণের জন্য দায়ী। ২০১৫ সালে বিশ্বের শক্তিধর ছয় দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, জার্মানি ও ফ্রান্সের সঙ্গে ওই চুক্তি স্বাক্ষর করে ইরান। এর আওতায় ইরান তাদের পারমাণবিক প্রকল্পের কাজ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বিভিন্ন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে শিথিল করা হবে- এ শর্তেই ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ কর্মসূচী অনেকাংশে কমাতে রাজি হয়।
×