ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়া হাসান

অভিমত ॥ সম্মান করুন সম্মানিত হোন

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮

অভিমত ॥ সম্মান করুন সম্মানিত হোন

কিছুদিন আগে জানলাম এক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ম্যাডাম সম্বোধন না করায় এক সংবাদমাধ্যম কর্মী বাজে আচরণের সম্মুখীন হয়েছেন। ব্যাপারটি দুঃখজনক, এবং আরও দুঃখজনক হলো এমন ঘটনা প্রায়ই পত্রিকায় আসে। এই বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন সরকারের পক্ষ থেকে। আমাদের রাষ্ট্রটি গণপ্রজাতন্ত্রী। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী-কর্মকর্তাকে জনগণ স্যার-ম্যাডাম সম্বোধন করবে, নাকি প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণকে (যারা সকল ক্ষমতার উৎস) প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী-কর্মকর্তারা স্যার সম্বোধন করবে? নাকি উভয় উভয়কে করবে? একজন সিনিয়র কর্মকর্তা যার বয়স পঞ্চাশের কোঠায়, তাকে স্যার বা ম্যাডাম সম্বোধন করা যেতেই পারে তার বয়সের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং এটা দু’পক্ষের জন্যই প্রযোজ্য। আমরা রাস্তা ঘাটে বয়স্ক কাউকে দেখলে সালাম দিই, মুরব্বি কিংবা চাচা সম্বোধন করি, এটা সম্মান প্রদর্শনেরই প্রতিফলন। কিন্তু এটা বাধ্যতামূলক কিছু ন। বরং সৌজন্যতা এবং আদব-কায়দার অংশ। উন্নত বিশ্বে এটার প্রচলন সবচেয়ে বেশি। মাঝ বয়সী থেকে সিনিয়র সিটিজেনদের পুলিশ থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, দোকান-পাট, রাস্তা-ঘাটে প্রায় সকলকেই সাধারণত স্যার সম্বোধন করে নাগরিকের বয়সের প্রতি সম্মান জানিয়ে। পঞ্চাশের খুব কাছে চলে আসায় আমারও এই অভিজ্ঞতাটি হয় কানাডাতে। বাংলাদেশে দু-একজন সরকারী কর্মকর্তার ভাব দেখলে মনে হয়, এরা লর্ড মাউন্টব্যাটন পরিবার থেকে এসেছেন। গরিব দেশে অন্যতম সেরা চাকরি বিসিএস অফিসার হয়ে গেলে একশ জনের মধ্যে একজন এই ভাব ধারাটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। এর জন্য দায়ী নৈতিকতা সমৃদ্ধ প্রকৃত শিক্ষা এবং উপযুক্ত পারিবারিক শিক্ষার ঘাটতি। তবে এই ভাবটা অন্য অংশের বেলাতেও প্রযোজ্য। জনসাধারণের একটি অংশ যখন দুর্নীতি করে প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক হয়, তখন তারাও বাহারি হাব-ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এবং ধরাকে সরা জ্ঞান করে। মূলত আদব-কায়দা, সম্মান, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা ইত্যাদি শেখার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হলো পরিবার। আপনি যখন অন্যকে সম্মানিত করছেন তখন আপনি আসলে নিজেকেই সম্মানিত করছেন। একবার টাঙ্গাইলে এসপি সাহেবের অফিসে বসে তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এমন সময় একজন দিনমজুর ভাই রুমে প্রবেশ করে সালাম দিলেন, এসপি সাহেব উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,Ñ ‘‘ভাই, আপনি খালি পায়ে ঢুকলেন কেন? আমিও তখন লক্ষ্য করলাম লোকটি খালি পায়ে। স্যার, এমনিতেই। কেউ আপনাকে খালি পায়ে ঢুকতে বলেছে? না, স্যার। যান, জুতা পরে আবার আসেন। লোকটি পুনরায় রুমে প্রবেশ করলে এসপি সাহেব সামনের চেয়ার দেখিয়ে বললেন, ‘এখানে বসেন এবং বলেন আপনার কি সমস্যা।’’ এই নিরীহ লোকটিকে সম্মানিত করে এসপি সাহেব কি নিজেকেই সম্মানিত করলেন না? এই লোকটি যতদিন বেঁচে থাকবেন, শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা নিয়ে এই পুলিশ সুপারকে মনে রাখবেন। এমন দৃষ্টান্ত অহরহ মিললে সবাই সবাইকে সম্মান করা শিখবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীর হিসেবে মানুষকে বিচার না করে মানবিক দিক দিয়ে বিচার করলে দেশ, জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। আর এতেই সকলের উন্নতি। লেখক : কানাডা প্রবাসী
×