ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

প্রবৃদ্ধিভিত্তিক সমতা ॥ পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮

প্রবৃদ্ধিভিত্তিক সমতা ॥ পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ

বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। এ যাত্রাপথে নানা ধরনের বাধা-বিপত্তি থাকতে পারে। তবে বর্তমান সরকারপ্রধান যেভাবে দেশকে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রয়াস গ্রহণ করেছেন সেক্ষেত্রে সমতা বিধান করাটা কিছুটা কষ্টসাধ্য। রাষ্ট্র যখন সামনের দিকে এগিয়ে যায় তখন ধনিক শ্রেণীর আরও ধনবান হওয়ার সুযোগ থাকে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সমতা অর্জন করা কিছুটা হলেও কষ্টসাধ্য। কেননা, সমতা অর্জন করতে হলে প্রতিটি মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, ওষুধ ও আশ্রয়Ñ এ পাঁচটি উপাদানের সংমিশ্রণে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিকে কার্যকর করতে হয়। দেশে বর্তমান সরকার যেভাবে উন্নয়নের ছক কেটেছে তাকে নিরীক্ষা করে আরও গতিময়তা আনয়নের লক্ষ্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত প্রতিষ্ঠান ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্স এবং পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গত ৯ জানুয়ারি দিনব্যাপী কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। আসলে একটি উন্নয়নের সত্যিকার চিত্র কেবল প্রবৃদ্ধিনির্ভর নয় সঙ্গে সুষম বণ্টন ব্যবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। দেশের সে অগ্রযাত্রা সাধিত হয়েছে তার ফলে মাথাপিছু আয় ১৬১০ মার্কিন ডলার, জিডিপি বৃদ্ধি পাওয়ার ফল ৭.২৪%-এ উন্নীত হয়েছে। সরকার যে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ নীতি গ্রহণ করেছিল তার সুস্পষ্ট বাস্তবায়ন করতে গেলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তরিক হওয়া উচিত ছিল। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সে সমবায় ব্যাংক বঙ্গবন্ধুর দুঃখজনক মৃত্যুর পর কোণঠাসা হয়ে পড়ে। কোন ধরনের গ্রাহকসেবা প্রদান এবং জনকল্যাণের জন্য যে মডেল স্থাপন করার প্রয়োজন ছিল তা থেকে বিরত রয়েছে। এমনকি সময়ের বিবর্তনে সমবায় মডেলে সে ধরনের নারী-পুরুষের সমতা বিধান করে উন্নয়নের গতিময়তা অর্জন করা থেকে বিরত রয়েছে। ফলে সমবায় ব্যাংককে পুনর্প্রবর্তন কিংবা নতুন করে চালু করতে হলে মডেলের মধ্যে পরিবর্তন ঘটাতে হবে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকও কাজ করছে না। কনফারেন্সে দেশ-বিদেশের ৪২টি প্রবন্ধ তিনটি কার্যকরী কর্মশালায় উপস্থাপন করা হয়। এতে যেমন গ্রামীণ অর্থনীতিতে ক্ষুদ্রভাবে এসডিজি-৬ কিভাবে কাজ করছেÑ সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা তার ওপর ওয়েব ফাউন্ডেশন একটি চমৎকার প্রবন্ধ উপস্থাপন করে। সাকিব বিন আমীন দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য বিদ্যুত উৎপাদনে কি পরিমাণ সাবসিডি দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে সে ব্যাপারে আলোচনা করেন। এতে ফুটে ওঠে যে, দেশে ক্রমশ বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছেÑ তবে সে বিদ্যুত অবশ্যই সাশ্রয়ী মূল্যে গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে হবে। গ্রাহক যদি সুলভে বিদু্যুত পায় আর তা যদি জনগণের কল্যাণে ব্যয় হয় তবে তা কৃষি ক্ষেত্রে বিশেষত কৃষিনির্ভর শিল্প উৎপাদন সহায়ক হবে। সেচ ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়ন এবং পানির সুষ্ঠু ব্যবহার প্রয়োজন হয়। দেশে যে ধরনের মাইক্রো এ্যান্ট্রিপ্রিউনিউরশিপ গত কয়েক বছর ধরে পিকেএসএফ তার পার্টনার অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে গড়ে তুলেছে তা দেশের সাধারণ প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছাতে সচেষ্ট রয়েছে। তবে পিকেএসএফের ক্ষেত্রে অর্থায়নের প্রয়োজন। জননেত্রী শেখ হাসিনা যে ‘পেটে ভাতের রাজনীতি’র স্বপ্ন বাস্তবায়নে দিশারী সেক্ষেত্রে পিকেএসএফ তাদের সমৃদ্ধি কর্মসূচীটি দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে স্থাপন করতে পারে। অর্থনীতির যে বিকাশ সাধন গত নয় বছরে হয়েছে তা দেশের উন্নয়নকে সুসংহত করতে পারে। অর্থনীতি যখন সুষ্ঠুভাবে চলে তখন দেশে দেশে নানা সময়ে আর্থিক খাতে ব্যাধির সঞ্চার হতে পারে। আর্থিক খাতের এ ধরনের ব্যাধি শক্ত হাতে দমন করা বাঞ্ছনীয়। সামাজিক ক্ষেত্রে আর্থিক নিরাপত্তা বিধান করা দরকার। এদেশে সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কৃষি ব্যাংকের গ্রামীণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য সেখানে ইনোভেটিভ আইডিয়া প্রয়োজন সেখানে দেখা যায় তারা অন্যান্য ব্যাংকের মতো ট্রেড ফিন্যান্সিং-এ সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাকাবের উচিত ছিল নানা ধরনের কৃষিনির্ভর প্রকল্প গ্রহণ করা, যাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীও উপকৃত হয়। একটি হিসাবে দেখা গেছে কৃষি ব্যাংকের সুদের হার অত্যন্ত উচ্চ এবং রিয়েল এফেকটিভ রেট হচ্ছে প্রায় ৬০%। অথচ কৃষি ব্যাংকের এ উচ্চ সুদের হার এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এনজিওদের চেয়েও বেশি। গ্রামীণ এলাকায় মহিলা উদ্যোক্তা তৈরি আইটিনির্ভর প্রশিক্ষণ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা যুবক-যুবতীদের মধ্যে দেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কৃষি ব্যাংক পৃথক প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে। গ্রামীণ ব্যাংক মূলত কৃষি ব্যাংকের প্রকল্প ছিল। পরবর্তীতে নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের পুরনো ধ্যান-ধারণায় আবদ্ধ রয়েছে। সময়ের বিবর্তনে যে যুগোপযোগী প্রকল্পসমূহ গ্রহণ করা দরকার তা বাস্তবায়নে কৃষকদের সমস্যা জানার জন্য কৃষি ব্যাংক ও গ্রামীণ ব্যাংককে অবশ্যই গবেষণা করে সেখান থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানকল্পে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যে সমস্ত জমির মালিক কৃষক নয় তাদের অবশ্যই ঋণ সুবিধা দিতে হবে। আবার যারা জমির মালিক হয়েও সচেতনভাবে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে অর্থায়নের প্রয়োজন তাদের জন্য বিনিয়োগ উপযোগী পরিবেশ অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। কেবল আয় বৈষম্য নয়, সামাজিক বৈষম্য, সম্পদ বৈষম্য একটি দেশের দরিদ্র শ্রেণীকে নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারে। কৃষকদের জন্য যাতে সহজলভ্য ঋণ সুবিধা প্রদান করা যায় সেজন্য নতুন নতুন প্রকল্প গ্রামীণ এলাকার কৃষি ব্যাংকগুলোকে গ্রহণ করতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, কৃষিক্ষেত্রে নারীর অবদান পুরুষের চেয়ে বেশি হলেও তা কিন্তু সত্যিকার অর্থে স্বীকৃত নয়। বরং নারী-পুরুষ কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করার কোন উদ্যোগ কৃষি ব্যাংক গ্রহণ করেনি। অথচ কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি কৃষিজ শিল্পায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ, বাজারজাতকরণ ও বিপণন ব্যবস্থার উন্নতি সাধনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় ছিল। বস্তুত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে যত বেশি কাজে লাগানো যায় তত বেশি ভাল হয়। গ্রামীণ কাঠামোয় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের জন্য কোলাটোরালমুক্ত ঋণ সহজলভ্য করা দরকার। অথচ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা ঋণ না পেয়ে তা মধ্যস্বত্বভোগী এবং বড় কৃষকরা পেয়ে থাকেন। এটি এক ধরনের তেলা মাথায় তেল দেয়া, যা বর্তমান সরকারের নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। দেশে সরবরাহজনিত ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে সরকার নানাবিধ বৃহত্তর প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সময় এসেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকল্পসমূহ গ্রহণ করার, যাতে দেশের উন্নয়নে গতিময়তা আসে। এজন্য ঋণের সুদের হার হ্রাস করলেই কেবল চলবে না, বরং আধুনিক প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ বিধান করতে হবে। অ ঈধৎফ (এ কার্ড) উদ্যোগকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু এ ধরনের কার্যক্রম তো বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক অনেক আগেই নিজেরা চালু করতে পারত। মহিলা কৃষকদের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। যে কোন প্রকল্প গ্রহণ করলেই চলবে না, তা যেন স্থায়িত্ব লাভ করে এবং মানুষের আর্থিক উন্নয়নকে মর্যাদাসম্পন্ন করে তোলে। প্রত্যেক মানুষকে সম্মানের সঙ্গে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা দরকার। কমপ্রেডার শ্রেণী যেভাবে কার্টেল করে অর্থনীতির উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চেষ্টা করে থাকে তা কেবল শক্তিশালী সিদ্ধান্তের কারণে পুরোপুরি সম্ভব হয় না। এ কারণেই কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে, তবে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর বাইরে অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোনির্ভর হয়ে পড়েছে। এ অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে ধীরে ধীরে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোনির্ভর করে তুলতে হলে সর্বাগ্রে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আনতে হবে। গ্রামীণ এলাকায় মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স চালু করা দরকার। এ মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স চালু করে যে সমস্ত জেলায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, পাহাড় ধস নামে কিংবা হাওড় অঞ্চলে শস্যহানি হয় তা দূর করতে হলে একটি বিশেষ কৃষিনির্ভর স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান তৈরি করে তার বাস্তবায়ন করা দরকার। ভারত থেকে কনফারেন্সে প্রেরিত ড. রেনু কোয়ালিটি এডুকেশনে আইটির ব্যবহারের ওপর যে প্রবন্ধটি পাঠান তাতে দেখা যায় শিক্ষায় বিনিয়োগ একটি দেশের সমতা বিধানে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজে করে থাকে। আর এক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার উন্নতর শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে সহায়তা করে থাকে। প্রবৃদ্ধির সঙ্গে শিক্ষার মান উন্নয়ন ও প্রসারে বর্তমান সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। হেকাপের মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইকিউসি স্থাপন করা হয়েছে। এ আইকিউসিসমূহকে আইনগত বিধানের আওতায় আনার জন্য সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। এজন্য অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধন করে আইকিউসি যাতে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করে সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। আমাদের দেশে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে এ কথা বললে চলবে নাÑ এটি কোন ধরনের অনুকম্পা নয়, বরং ন্যায্য পাওনা। এদিকে ভারতের কেএস গুপ্তা ‘সামাজিক ক্ষেত্রে নারীদের পরিবর্তনশীলতা’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেন যে, গ্রামীণ এলাকায় নারীদের মধ্যে কর্ম-উদ্যোম ও কর্মস্পৃহা গড়ে উঠেছে, যা স্বনির্ভর দেশ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। মেয়েরা কেবল পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়ছে না, বরং নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় সদা ব্যস্ত থাকে। তবে ক্রেডিট কার্ড যেটি কৃষকদের জন্য এ কার্ড হিসেবে চালুর প্রয়াস নেয়া হয়েছে তা আসলে কৃষকরা কতটুকু সঠিক ব্যবহার করতে পারবে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টারমিডিয়ারির অস্বচ্ছ ও কর্তব্যজ্ঞানহীন কর্মকা-ের জন্য তা কহতব্য নয়। দুটো উদাহরণ দেইÑ কিছুদিন আগে প্রাইম ব্যাংক লিঃ-এর প্লাটিনাম কার্ড নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যাই। সেখানকার একটি হোটেল অবৈধভাবে আমার ক্রেডিট কার্ডের বিরুদ্ধে ১৩৭.৬৯ অস্ট্রেলিয়ান ডলার কেটে নেয়। অথচ ওই হোটেলের বুকিং তারাই ক্যান্সেল করেছিল, হোটেলেও যাইনি, এমনকি পিএন নম্বর এবং স্বাক্ষরও দেইনি। অথচ প্রাইম ব্যাংক লিঃ যে আমার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সঠিকভাবে ঠরংধ কর্তৃপক্ষকে দাবি জানাবে তারা কিন্তু সঠিকভাবে আদায়ের পদক্ষেপ নেয়নি। তাদের মিনমিনা কণ্ঠস্বর আমার যে ক্ষতি করেছে অ ঈধৎফ চালু হলে স্বল্পশিক্ষিত কৃষকরা যে এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? আবার আমি এবি ব্যাংক লিঃ-এ ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করি। আশ্চর্যের বিষয় ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার আগেই ২ হাজার ৩০০ টাকা কেটে নিয়েছিল। এ ধরনের কর্মকা-ে মনে হয় বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ বাণিজ্যিক ব্যাংকের ওপর প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। যখন বাণিজ্যিক ব্যাংক স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দেয় তখন তা সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকা-কে পিছিয়ে দেয়। এসডিজি-১৬ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে কাজ করতে হবে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মতৎপরতায় এসডিজি-১৬ লক্ষ্য করা যায়নি। মৃৎশিল্পের ওপর একটি চমৎকার প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। দেশে মৃৎশিল্প আজ মৃতপ্রায়। যে সমস্ত কারিগর ছিলেন তাদের অনেকেই ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। এদিকে ড. মোঃ জসিমউদ্দিন বলেন যে, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় সাঁওতালরা অগ্রিম শ্রম বিক্রি করে থাকে। এ ধরনের অবস্থা থেকে পরিত্রাণ প্রয়োজন। ড. জসিম চা বাগানের শ্রমিকদের মাসে ২ হাজার ৫০০ টাকা প্রাপ্তির হিসাব দেন। কিন্তু তার চেয়েও দুর্বিষহ জীবনযাত্রা নিজে প্রত্যক্ষ করেছি দু’বছর আগে। শ্রমিকরা কাজ থেকে ফিরলে গামলা করে লবণ পানি খেতে দেয়া হয়, সন্ধ্যায় ফ্রি হাড়িয়া খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে আর সপ্তাহে তিন কেজি আটা দেয়া হয়। চা বাগানের শ্রমিকের সন্তানরা পড়াশোনা করতে চাইলে অলিখিত নিয়মে বাধা সৃষ্টি করা হয়। শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে যে রোল মডেল তৈরি করতে চাচ্ছেন তার জন্য ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে উৎসাহিত করেছেন। এ ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে সামাজিক পুঁজিতে পরিবর্তন ক্ষুদ্র বিনিয়োগে রূপান্তর করা প্রয়োজন। পাশাপাশি মাইক্রো ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থা করা দরকার। প্রবন্ধে লেখক দেশে কমিউনিটি ব্যাংকিং চালুর জন্য যে তত্ত্ব উপস্থাপন করেন তা প্রশংসিত হয়েছে। ফজলুল কাদের পিকেএসএফের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় মাইক্রো এন্টারপ্রাইজের কথা তুলে ধরেন। প্রফেসর রেজাউল করিম তালুকদার মন্তব্য করেন যে, দারিদ্র্যের হার হ্রাস পাচ্ছে তবে, তা আরও অধিক হারে প্রতিবছর হ্রাস পাওয়ার জন্য কিছুটা হলেও পদক্ষেপ জোরালো করতে হবে। এদিকে সবুজ অর্থনীতির ওপর একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়, যাতে দেখানো হয়েছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমতা অর্জনের জন্য সবুজ অর্থনীতি একটি দেশের জলবায়ুজনিত পরিবর্তন জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন যাতে না হয় সেজন্য সবুজ অর্থনীতিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। এজন্য সবুজ অর্থনীতির ভোক্তা শ্রেণী তৈরি করা, উদ্যোক্তা তৈরি করা এবং সবুজ অর্থনীতির জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থা করা দরকার। প্রবন্ধকার দেশে ‘সবুজ বিনিয়োগ ব্যাংক’ গঠনের প্রস্তাবনা দেয়ার পাশাপাশি ধোলাইখাল এলাকাকে শিল্পনগরী ঘোষণার জন্য প্রস্তাব দেন। আর ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থা দূর করতে হলে অবশ্যই একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করতে হবে। কনফারেন্সে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের কবিতাটি অঙ্গীকারনামা হিসেবে উপস্থাপিত হয়। বহুমাত্রিক ও সব্যসাচী কর্মকা-ের অধিকারী ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ মন্তব্য করেন যে, দেশের অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় উক্তি মুগ্ধতার সঞ্চার করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ আখতারুজ্জামান মন্তব্য করেন যে, ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্স এন্ট্রিপ্রিউনিউরিয়াল ইকোনমিক্স চালু করেছে, যা দেশের বর্তমান সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন। প্রফেসর আখতারুজ্জামান মন্তব্য করেন যে, বঙ্গবন্ধু দেশের অগ্রযাত্রাকে মহিমান্বিত করার জন্য একটি আদর্শিক কারণে ন্যায্যতা ও সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠনের জন্য বাকশাল তৈরি করেছিলেন। বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি জনে জনে পৌঁছে দিতে হলে অবশ্যই সমতা ও ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রয়োজন। এদিকে সম্মানিত অতিথি হিসেবে পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সময়ের বিবর্তনে দেশের অগ্রযাত্রার পটভূমি তুলে ধরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আয়-রোজগার সমতা বিধান তুলে ধরার অঙ্গীকার করেন। বস্তুত ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের ছাত্রছাত্রীরা ব্যাস্টিক ভিত্তিতে জলবায়ুর পরিবর্তন থেকে শুরু করে উদ্যোক্তা তৈরি করার ওপর গুরুত্বারোপ এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসডিজির বিভিন্ন লক্ষ্যের সঙ্গে ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। বস্তুত সরকার দেশের উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। তবে যাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে তারা যেন আন্তরিকতার সঙ্গে দুর্নীতিমুক্তভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ন্যায্যতা নির্ধারণ করতে পারে। লেখক : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ [email protected]
×