ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বর্বরতম

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮

বর্বরতম

ছয় বছরের ছোট একটি মেয়েকে অপহরণ ও ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। ঘটনা সংঘটিত হয় পাঞ্জাবের কাসুর শহরে। শিশু জয়নবের ধর্ষণ ও হত্যাকা-ের পর বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ দমনে পুলিশের গুলিবর্ষণে নিহত ও আহতের খবরও আছে। গত দু’বছরে শহরটিতে একই কায়দায় ১২টি শিশু হত্যা করা হয়েছে। জনসাধারণের অভিযোগ, শিশু অপহরণ, যৌন নির্যাতন ও হত্যাকা- থামাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আদৌ কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। উত্তাল বিক্ষোভ রাজপথ ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সারা পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়েছে টুইটারÑ ‘জাস্টিস ফর জয়নব হ্যাশট্যাগ’। ক্রিকেটার, চলচ্চিত্র তারকাসহ রাজনীতিবিদরাও এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন। কোলে শিশু নিয়ে টিভিতে প্রতিবাদ করেছেন সংবাদ পাঠিকারা। তবে পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থা নিয়ে সংশয় ও প্রশ্ন রয়েছে। গত বছর দেশটির সুপ্রীম কোর্ট পানামা পেপারসে নাম থাকায় দুর্নীতির অভিযোগ এনে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে ক্ষমতা পরিত্যাগ করতে বাধ্য করে। এতে সে দেশের সেনাবাহিনী ও কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। কিছুদিন আগে লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে নওয়াজ শরীফ পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য সরাসরি দায়ী করেছেন দেশটির সেনাবাহিনী, একশ্রেণীর আমলা ও রাজনীতিবিদদের। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর সে দেশে হামুদুর রহমান তদন্ত কমিশন কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরও কারও বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি তৎকালীন সরকার ও বিচার বিভাগ। এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের বিচার বিভাগের প্রতি সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে। এর বাইরেও পাকিস্তানের কোথাও না কোথাও, প্রায় প্রতিদিন, বিশেষ করে শুক্রবারে মসজিদে হামলা, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, হেটকিলিংসহ ভয়াবহ জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটছে। এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন দেশটিতে সব রকম সামরিক সহযোগিতা ও আর্থিক সাহায্য স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। ভারতের মুম্বাইয়ে কয়েক বছর আগে ভয়াবহ জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায়ী জইশ-ই-মোহাম্মদ নেতা হাফিজ সাঈদকে আদালত কর্তৃক বেকসুর খালাস ও প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে দেয়ার জন্য সরকারের সমালোচনা হয়েছে বিশ্বব্যাপী। ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস ডাইন্যাস্টির পতনের পর জঙ্গী সন্ত্রাসীরা আশ্রয় ও ঘাঁটি গাড়ছে পাকিস্তানে। তদপুরি জঙ্গী ও সন্ত্রাসীগোষ্ঠী তালেবান, লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মোহাম্মদ, জামাত-উদ-দাওয়াসহ একাধিক জঙ্গীগোষ্ঠী আগে থেকেই সক্রিয় রয়েছে দেশটিতে। এর বাইরেও দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে চলছে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। বিভিন্ন উপজাতি ও উপদলের মধ্যে হানাহানি, খুনাখুনি তো নিত্যদিনের ঘটনা। নারী নিগ্রহ ও নির্যাতনও একরকম ওপেন সিক্রেট। সর্বোপরি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বহির্বিশ্বে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনাসহ পাচারের অভিযোগও আছে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত এসব কারণেই পাকিস্তানে গণতন্ত্র কখনই টেকসই তো দূরের কথা, এমনকি দানা বেঁধেও উঠতে পারেনি। মার্কিন মদদ ও সাহায্য-সহযোগিতাসহ সব রকম আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রত্যাহার করা হলে দেশটির অর্থনীতিও ভেঙ্গে পড়বে অচিরেই। সে অবস্থায় পাকিস্তানের ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
×