ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

থাকতে পারে আরও কয়েকদিন

টানা শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল, কাহিল রাজধানীবাসী

প্রকাশিত: ০৫:০০, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮

টানা শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল, কাহিল রাজধানীবাসী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেড়েছে শীতের তীব্রতা ও মানুষের দুর্ভোগ। শুক্রবার দিনভর কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়ে রাজধানীবাসী। হ্রাস পায় ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। বয়ে যায় ঠান্ড বাতাস। দেশের সর্বত্র বিরাজ করে একই চিত্র। টানা শৈত্যপ্রবাহে দেড় সপ্তাহ ধরে দুর্ভোগে দেশবাসী। আবহাওয়ার এমন অবস্থা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। শুক্রবারও তাপমাত্রা বাড়লেও মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকে। ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাসে শীতের তীব্রতা হ্রাস পাচ্ছে না। অব্যাহত তীব্র শীতে কাবু রাজধানীবাসী। ঠান্ডা বাতাসে বাইরে বের হলেই কাঁপন শুরু হয় কনকনে শীতে। কুয়াশায় ঢাকা থাকে নগরীর আকাশ। ফুটপাথে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রির দোকানের সংখ্যা। পকেটে হাত ঢুকিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতেও দেখা গেছে অনেক পথচারীকে। বাসায় পর্যন্ত কনকনে শীত। ট্যাঙ্কের পানি হয়ে পড়ে প্রচন্ড ঠান্ডা। পানি গরম করে অনেকে গোসল সারছেন। গত বছর শীতে রাজধানীতে তেমন শীত অনুভূত হয়নি। সারা শীত মৌসুমে মাত্র কয়েকদিন মাঝারি ধরনের দাপট ছিল। কিন্তু এ বছর রাজধানীবাসীও তীব্র শীতের কবলে কাহিল। এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীতেও অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। শুক্রবার কিছুক্ষণের জন্য সূর্যের আলোর দেখা পেলেও তেমন তেজ ছিল না। দিনভর মাঝারি ধরনের শীত অনুভূত হয়। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে গরম কাপড়। দিনের বেলাতেও প্রত্যেক মানুষের শরীর ছিল গরম কাপড়ে ঢাকা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকে। কমতে থাকে পথচারীদের সংখ্যাও। রাত বারোটা বেজে ওঠার আগেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দোকানপাট। অলিগলি হয়ে যাচ্ছে ফাঁকা। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘন কুয়াশা, দিনের তাপমাত্রা হ্রাস এবং ঠা-া বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। ঘন কুয়াশায় উপরে উঠতে পারছে না জলীয় বাষ্প। শিশির ভেজা মাটি শুকিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকছে না। মাঝে মধ্যে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও উত্তাপ থাকে না। দিনের অধিকাংশ সময় কুয়াশার চাদরে মোড়া থাকে আকাশ। এমন অবস্থা জানুয়ারির বাকি দিনগুলোতেও চলতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা টেকনাফে ২৪.৫ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বদলগাছিতে ৬.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয় আর রাজধানীর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১৭.৮ ও ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ থেকে জানান, জেলাজুড়ে নেমে আসে স্থবিরতা। ব্যাহত হয় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দেখা মেলেনি সূর্যের। বয়ে চলে হিমেল বাতাস। খেটে খাওয়া মানুষেরা পড়ে বিপাকে। শীতের কাপড়ের দোকানগুলোতে দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। জেলা সদরসহ ১১টি উপজেলা হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, চরম দুর্ভোগে পড়েছে কুড়িগ্রামবাসী। কনকনে ঠান্ডা বাতাস ও তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সাধারণ মানুষ জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে রাস্তায় বা বাড়ির আঙিনায় আগুন জ্বেলে ছোট-বড় সবার জড়ো হওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ছে। গ্রামাঞ্চলে গরু-ছাগলকে উলের কাপড় কিংবা মোটা বস্তা দিয়ে ঢেকে ঠান্ডা নিবারণের প্রচেষ্টা চলছে। দিনের বেশিরভাগ সময় সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণের সূর্যের দেখা পেলেও তেমন তেজ থাকে না। নিজস্ব সংবাদদাতা, ভোলা থেকে জানান, ঘন কুয়াশার কারণে ভোলা-ঢাকা নৌরুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। শুক্রবার সকালে ভোলাগামী চারটি লঞ্চ সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে ঘন কুয়াশার কারণে নদী ও ডুবোচরে আটকা পড়ে। এতে দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা। নিজস্ব সংবাদদাতা, চুয়াডাঙ্গা থেকে জানান, বেড়েই চলেছে জনদুর্ভোগ। ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। কনকনে শীতের কারণে অতি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না লোকজন। স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর থেকে জানান, অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। কাজে যেতে পারছেন না খেটে খাওয়া মানুষেরা। দিনভর ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে পুরো এলাকা। স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান ১৯৬৪ সালের জানুয়ারি রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে এবারের শীতের তীব্রতা। শৈত্যপ্রবাহ কনকনে হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। একটানা এমন শীতের প্রভাব এর আগে তারা গত ৬৪ বছরেও দেখেননি বলে জানিয়েছেন অনেক প্রবীণ ব্যক্তি। শুক্রবার দিন-রাত প্রায় সমান ছিল। দেখা মেলেনি সূর্যের। গত কয়েক দিনের অব্যাহত ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতে আলু ক্ষেতে ব্যাপক হারে আলুর মড়ক বা পচন রোগ দেখা দিয়েছে। এতে এলাকার কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ওই রোগের কারণে আলুর পাতা ও কালো কালো ফোসকা পড়ে মরে যাচ্ছে তরতাজা সবুজ গাছ। এ রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়লে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন আলুচাষীরা।
×