ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বেনাপোল বন্দরে চলছে চরম অরাজকতা

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮

বেনাপোল বন্দরে  চলছে চরম  অরাজকতা

আবুল হোসেন, বেনাপোল ॥ বেনাপোল আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর এলাকায় সামগ্রিকভাবে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা চলছে। বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী ও অন্যরা এ ব্যাপারে এই প্রতিবেদকের কাছে বিভিন্ন সময়ে তাদের ক্ষোভের কথা জানাচ্ছেন। এর রকম একটি অরাজকতার বড় নমুনা হলো সম্প্রতি ইমিগ্রেশন পুলিশ ও কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যকার মারামারি। সূত্র বলছে, এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানি এবং যাত্রী পারাপার একই সড়ক দিয়ে হয়। ফলে সকাল থেকে রাত অবধি এই বন্দর এলাকায় নারকীয় পরিবেশ বিরাজ করে। এহেন বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে দিয়েও নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ রোগী, পারাপার হওয়ার সময় কাস্টমস ইমিগ্রেশন বন্দর কর্তৃপক্ষের হয়রানির শিকার হয়। চেকপোস্ট এলাকায় যাত্রী টার্মিনাল নামে যে ভবনটি তৈরি হয়েছে তার মধ্যে দিয়ে প্রবেশকালে যাত্রীদের অবৈধভাবে যাত্রী প্রতি ৪০ টাকা করে আদায় করা হয়। এই টাকা নাকি ঐ ভবনটি নির্মাণের ব্যয় উঠানো ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নেয়া হয়। তবে প্রতিদিন এ রকম যে হাজার হাজার টাকা আদায় করা হয় তার পুরো রসিদ দেয়া হয় না। রসিদে যা দেয়া হয় তার চেয়ে বেশি আদায় করা হয়। এই অতিরিক্ত আদায়কৃত মোটা টাকা বন্দরের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর পকেটে ঢুকে পড়ে। উপরন্তু এই ভবনটিতে যাত্রীদের জন্য কোন আরামদায়ক বিশ্রামের সুযোগ নেই। পর্যাপ্ত প্রক্ষালনের সুযোগও নেই। এ দিকে চেকপোস্ট কাস্টমস ভবনে অবস্থিত ডিউটি ফ্রি শপ থেকে যাত্রীরা নানাবিধ পণ্য ক্রয়ের তেমন কোন সুযোগ পাচ্ছেন না। এই ডিউটি ফ্রি শপগুলোতে যে সব মালামাল আসে তাও আবার উধাও হয়ে যায়। বিশেষ করে মদ আর সিগারেট কোথায় যায় তার হদিস পাওয়া যায় না। এখানেই চলে বড় রকমের শুল্ক ফাঁকি। পুলিশ কাস্টমস বিরোধের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে বিজিবির সাথেও সংশ্লিষ্টদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এসব নানাবিধ বিশৃঙ্খলার কারণে যাত্রীরা চরম বিড়ম্বনার শিকার হন। উল্লেখ্য বন্দর এলাকার প্রধান সড়কে যে নারকীয় অবস্থা চলে তার অন্যতম প্রধান বন্দরে বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মিত বাইপাস সড়কটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা। এই ফেলে রাখার নেপথ্য কারণ হলো একটি মাত্র সড়ক দিয়েই পণ্য উঠানামার বেলায় কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করে ট্রাকপ্রতি ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা। এই টাকার ভাগ বন্দরসহ সংশ্লিষ্টরাও নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সূত্র মতে, প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে আট থেকে দশ হাজার লোক ভারতে ঢোকে। প্রায় ছয় থেকে আট হাজার লোক এই সময়ের মধ্যে ভারত থেকে দেশে ঢোকে। এই বিপুল যাত্রীর চাপ নিয়ন্ত্রণ করার মতো লোকবল এই বন্দর চেকপোস্টে নেই। এমনকী ভারতের পেট্রাপোলেও নেই। ফলে যাত্রী সাধারণের দীর্ঘ লাইন দিয়ে পারাপার হতে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এ ব্যাপারে কাস্টমসের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই জানান, কাস্টমস চেকিং এবং ইমিগ্রেশন কর্মকান্ড একই ভবনে না থাকাই ভাল। একই ভবনে দুই রকম কর্মকান্ড অব্যাহত থাকা বিশৃঙ্খলার একটি অন্যতম কারণ। উপরন্তু কোয়ারেন্টাইন কর্মকর্তারাও নানাবিধ বিড়ম্বনার সৃষ্টি করেন।
×