ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

শেখ হাসিনার বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮

শেখ হাসিনার বিকল্প নেই

একাত্তরের ২৬ মার্চ থেকে বাহাত্তরের ৮ জানুয়ারি একটানা ৩৩৮ দিন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী জীবন থেকে মুক্ত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন ১০ জানুয়ারি, ১৯৭২। তাঁর স্বদেশের মাটিতে পা রাখার মাধ্যমে স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করেছিল। এমনি এমনি আমাদের স্বাধীনতা আসেনি। এর জন্য ৩০ লাখ বাঙালীর জীবন দিতে হয়েছে, সম্ভ্রম হারাতে হয়েছে ৫ লক্ষাধিক বাঙালী মা-বোনের। অবশেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর ৯৩ হাজার হানাদার পাকিস্তানী মিলিটারি জান্তা আমাদের মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে। পরে অবশ্য ত্রিপক্ষীয় শিমলা (বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান) চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানী মিলিটারি যুদ্ধাপরাধীদের তাদের দেশে যেতে দেয়া হয় এই শর্তে যে, পাকিস্তান নিজ দেশে নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। কিন্তু বর্বর পাকিস্তান তাদের বিচার করেনি, বর্বর বর্বরই রয়ে যায় এবং দিনের শেষে নিজ দেশ নিজেরাই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। আত্মসমর্পণের কাজটি সংঘটিত হয়েছিল তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে। স্বাধীনতার পর রেস বন্ধ করে দিয়ে বঙ্গবন্ধু নাম দেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বঙ্গবন্ধু বাংলার সমাজ-সংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন বলেই হর্সরেস, মদ, জুয়া, হাউজিসহ সব রকম জুয়া বন্ধ করে দেন। রেসকোর্স ময়দানকে রূপান্তরিত করেন গাছগাছালিতে ভরা সোহ্রাওয়ার্দী (বঙ্গবন্ধুর নেতা) উদ্যানে। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য বাঙালী চেহারার এক পাকিস্তানী মিলিটারি জিয়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা দখল করে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর চক্রান্তের অংশ হিসেবে রেসকোর্সের নেই আত্মসমর্পণের মঞ্চটিকে মুছে ফেলার জন্য সেখানে শিশুপার্ক নির্মাণ করেন। এই শিশুপার্কও তিনি সরল মনে বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য বানাননি, বানিয়েছিলেন শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবকদের আবেগকে ব্যবহার করে নিজের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে। অবশ্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সেখানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ ও শিখা চিরন্তন স্থাপন করে ঐতিহ্যটি সংরক্ষণ করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী প্রিয়দর্শিনী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতিও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। এই মহীয়সী নারী কেবল তার প্রশাসন ও সেনাবাহিনী নিয়ে আমাদের সহযোদ্ধাই হননি, বরং এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয়-আহার, শুশ্রষা দিয়ে বাঁচিয়েছেন দীর্ঘ ৯ মাস। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানী মিলিটারির গণহত্যা, নারী নির্যাতন বন্ধের জন্য এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর জীবন রক্ষা ও মুক্তির জন্য বিশ্ববিবেক জাগ্রত করার লক্ষ্যে ব্রিটেন, আমেরিকা, রাশিয়াসহ (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) ৩৪টি দেশ সফর করেন এবং সেসব সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে এ প্রশ্নে ভূমিকা রাখার আবেদন জানান। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এই মহীয়সী নারীও আমাদের, বিশেষ করে মুজিবনগর বিপ্লবী সরকার ও মুক্তিযোদ্ধা এবং শরণার্থীদের কাছে শ্রদ্ধাভাজন অবশ্যই। সত্যিই সেদিন বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে না এলে কি হতো আজও ভাবতে গেলে গা শিউরে ওঠে, যার কিছুটা অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জনগণ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার (বিদেশে অবস্থান করায় দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে যান) পর অনুধাবন করেছেন। সেদিনও বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে আশ্রয় দেন প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা গান্ধী। মিলিটারি জিয়া তাদের দেশে ফিরতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। দীর্ঘ ৬ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে এবং তিনি সব বাধা অতিক্রম করে দেশে ফিরে আসেন এবং জাতির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। সেদিন তিনি গরিব-দুঃখী সাধারণ মানুষের ভাত-কাপড়-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসার নিশ্চয়তা বিধান করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার অঙ্গীকার করেছিলেন, যা আজ বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধির সূচকগুলোর দিকে তাকালে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। একাত্তরের জুলাই-আগস্টের দিকে রাজাকারের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। পাকিস্তানী মিলিটারি জান্তার অত্যাচার, নির্যাতন, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদির মাত্রা বেড়ে যায়। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে. রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ফাঁসির হুকুম হয়েছে। ওদিকে ভারত থেকে খবর এসেছে খন্দকার মুশতাক আহমদ (তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী), মিলিটারি জিয়া (জেড ফোর্স কমান্ডার), তাহের ঠাকুর (এমপি) এবং সরকারের আমলা মাহবুব আল চাষী, এরা মুজিবনগর সরকার ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াল সময়টা। বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লবের আশঙ্কা থেকেই যায়। আর তাই সেদিন মুক্তিযোদ্ধারা অন্তত একটি করে অস্ত্র বিজয়ের পরও নিজের কাছে রেখে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করে। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে এটি অত্যন্ত জরুরী ছিল। বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে বর্তমান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাহাত্তরের ৩১ জানুয়ারি অস্ত্র সারেন্ডার করে যার যার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বা কর্মক্ষেত্রে ফিরে যায়। বঙ্গবন্ধু ফিরে আসায় স্বাধীনতা সংহত হয়। ১. মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত অস্ত্রসহ দেশাভ্যন্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অস্ত্র-গোলা-বারুদ সরকারের কাছে জমা পড়েছিল। ২. মূলত একাত্তরের তিন ডিসেম্বর থেকে পাকিস্তানী হানাদার মিলিটারি তাদের পরাজয় মেনে নিয়ে পিছু হটতে শুরু করে। ৬ ডিসেম্বর ভারত স্বীকৃতি দিলে সারেন্ডারের প্রস্তুতি হিসেবে তারা অস্ত্র গুটিয়ে আশ্রয়ের সন্ধান করতে শুরু করে। ৩. তখনও প্রশাসন দাঁড়ায়নি। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়া। এই সুযোগে অসৎ আদর্শহীন মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র ব্যক্তি এবং ছদ্মবেশী রাজাকাররা লুটপাট-বিশৃঙ্খলা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে যেন অগ্নিকুন্ডে পানি ঢেলে দেয়া হলো। ৪. সব মুক্তিযোদ্ধা তাদের অস্ত্র জমা দেয়। ৫. বঙ্গবন্ধু বিপ্লবী সরকারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরেন এবং দু’দিন পর ১২ জানুয়ারি সংসদীয় গণতন্ত্রে উত্তরণ ও রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী হন। ৬. বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এসেছিলেন বলেই অতি অল্পদিনেই প্রায় দেড়শত দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। স্বীকৃতি দেয়নি চীন, আমেরিকা, সৌদি আরব। তারা স্বীকৃতি দেয় বঙ্গবন্ধু হত্যার পর হত্যাকারীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত জিয়া ক্ষমতায় এলে। ৭. মিত্রবাহিনী (ভারতীয় সৈন্য) বাংলার মাটি ত্যাগ করে। ৮. মাত্র ৩ মাসে ভারত-রাশিয়ার সহযোগিতায় যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় পন কার্যক্রম সম্ভব হলো। ৯. মাত্র ৯ মাসে বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হলো এবং সংবিধান অনুযায়ী অল্প দিনেই দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। এই সংবিধান সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয় পাকিস্তানের ২৩ বছর যেমন ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১-এর মধ্যে ১৯৫৪ সালের পর একটি সংবিধান রচিত হলেও ১৩ মাস টিকে ছিল মাত্র। মিলিটারি জান্তা সংবিধান ছিঁড়ে ফেলে মিলিটারি শাসন শুরু করে। বাংলাদেশ ভূ-খন্ডে ও তা ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকে এবং তারপরও রাখার চেষ্টা করে। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার প্রাথমিক ঘোষণা ও ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার চূড়ান্ত ও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের (গেরিলা যুদ্ধ) মাধ্যমে বাংলার মাটি থেকে পাকিস্তানী মিলিটারিদের বিতাড়নের নির্দেশ পালিত হয়। দেশ শত্রুমুক্ত হয়। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার পরই পাকিস্তানী মিলিটারি জান্তা বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। অবশ্য ততদিনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বে তার পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। ৭ জানুয়ারি থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়। অবশ্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার জন্য ফাঁসির হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ পাকের শোকরিয়া যে, তারা সফল হয়নি। ৮ তারিখ বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের বিমানে করে প্রথমে লন্ডন যান এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এ্যাডওয়ার্ড হিথ সঙ্গে ও তার আগের প্রধানমন্ত্রী হেরাল্ড উইলসনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এখানে একটা কথা বলা দরকার, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বাইরে ২টি দে যেমন ভারত বিশেষ করে পশ্চিম বাংলার কলকাতা ও ত্রিপুরার আগরতলা এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহর ছিল যুদ্ধ পরিচালনার কেন্দ্র। ৯ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু লন্ডন থেকে দিল্লী হয়ে ঢাকা ফিরেন। দিল্লীর পালাম বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থন জানান ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী প্রিয়দর্শিনী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী। ১০ জানুয়ারি ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (তখন তেজগাঁও) থেকে রেসকোর্স বা সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে সময় লেগেছিল আড়াই ঘণ্টা (তখন অত গাড়ি ছিল না, গাড়ির জ্যাম ছিল না, ছিল জনজ্যাম, অর্থাৎ অগণিত মানুষ রাজপথে নেমেছিল)। আকাশবাণীর (কলকাতার) সাংবাদিক দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুললিত কণ্ঠের ধারাবিবরণী যেন এখনও শোনা যাচ্ছে। আমরা যারা তখনও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ঢাকা ফেরিনি তারাও বেতারের মাধ্যমে শুনেছিলাম। বঙ্গবন্ধু সেদিন রেসকোর্সে লাখ লাখ জনতার উদ্দেশে যে সংক্ষিপ্ত ভাষণটি দেন তাতেও স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনার দিকনির্দেশনা দেন। ৭ মার্চের ভাষণে দিয়েছিলেন যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করার আর এবার দিলেন রাষ্ট্র পরিচালনার দিকনির্দেশনা। যেমন : বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র, পাকিস্তান চতুর্থ। অথচ সেই রাষ্ট্রের মা- বোনদের ইজ্জত নষ্ট করেছে পাকিস্তান আর্মি। দ্বিতীয় বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র হলেও বাংলাদেশ হবে একটি আদর্শ রাষ্ট্র। এর ভিত্তি কোন ধর্মীয়ভিত্তিক হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা (জাতীয়তাবাদ পরে যোগ করেন)। বঙ্গবন্ধু চিরকাল সাধারণ মানুষকে শ্রদ্ধা করতেন, ভালবাসতেন। ১০ জানুয়ারির রেসকোর্সের বক্তৃতায়ও তিনি প্রথমে কৃষক তারপর শ্রমিকের নাম উচ্চারণ করে বক্তৃতা শুরু করেন। শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, নেতা হিসেবে নয়, আপনাদের ভাই হিসেবে বলছি, যদি দেশবাসী খাবার না পায়, যুবকরা চাকরি বা কাজ না পায়, সাধারণ মানুষ আশ্রয় না পায় তা হলে স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে। পূর্ণ হবে না।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যে সব লোক পাকিস্তানী সৈন্যদের সমর্থন করেছে, আমাদের হত্যা করতে সাহায্য করেছে, তাদের ক্ষমা করা হবে না। যথাসময়ে সঠিক বিচারের মাধ্যমে তাদের শাস্তি দেয়া হবে। বিচারকার্য শুরুও হয়েছিল। ৩৯ হাজার গ্রেফতারও হয়েছিল। তার মধ্যে ১১ হাজারের চার্জশিট এবং তার মধ্যে ৬ শতাধিক দালাল-রাজাকার-আলবদরের মৃত্যুদ-সহ বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিও হয়েছিল। কিন্তু ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে মিলিটারি জিয়া ক্ষমতা দখলে করে এবং বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র শুরু করে। গোলাম আযমসহ রাজাকার-আলবদরদের পুনর্বাসন এবং বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নিষিদ্ধ জামায়াত চক্রকে আবার রাজনীতি করতে দেয় বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে, যা রীতিমতো জাতির সাথে প্রতারণা। ১৯৮১ সালে ১৭ মে শেখ হাসিনা ৬ বছর প্রবাস জীবন থেকে দেশে ফিরে এলে শুরু হয় আবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগ্রাম। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে এবং পরবর্তীতে ২০০৯ থেকে অদ্যাবধি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায়। মিলিটারি জিয়া-এরশাদ-খালেদার পাকিস্তানী ভাবধারা থেকে আবার বাংলাদেশ সঠিক পথে মূল ধারায় ফিরে আসতে শুরু করে যে কারণে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতার হত্যার বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, সংবিধান মূল ধারায় ফিরে এনেছে, দেশ নিন্ম আয় থেকে মধ্যম আয়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশে এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে পারে হাসতে হাসতে। এবারের ১০ জানুয়ারির বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের মূল প্রতিপাদ্যও ছিল বর্তমান রাষ্ট্র পরিচালনার ধারাবাহিকতা রক্ষা, অর্থাৎ মানে-সম্মানে অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশ যে উচ্চতায় উঠেছে তাকে ধরে রাখতে হলে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। কেউ কেউ খালেদা জিয়ার নাম নিয়ে যে বিকল্পের কথা বলেন তা যেমন হাস্যকর ব্যাপার, তেমনি নৈতিকতা বর্জিত। শোক দিয়ে দেশ এগোয় না। আর তাই ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এলে যেমন স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছিল, তেমনি ’৮১-এর ১৭ মে শেখ হাসিনা ফিরে এসেছিলেন বলে স্বাধীনতার মূলধারা রক্ষা পেয়েছিল। আগামীতেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাবে সেই প্রত্যাশাই দেশবাসীর। ঢাকা ॥ ১১ জানুয়ারি ২০১৮ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×