ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শীঘ্রই ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮

শীঘ্রই ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নতুন করে আরোপের ফলে দেশটির সঙ্গে সম্পাদিত ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে কি ধরনের প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। এএফপি। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এই পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্বের প্রধান প্রধান দেশগুলো স্বাক্ষর করে। তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টের উদ্যোগে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও ট্রাম্প বরবরই এই চুক্তিকে সর্বকালের খারাপ চুক্তি হিসেবে অভিহিত করে আসছেন। তবে অন্যান্য স্বাক্ষরকারী দেশগুলো এই চুক্তিটি পুরোপুরি কার্যকর এবং ইরান সম্পূর্ণভাবে স্বাক্ষরিত চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলছে বলে দাবি করে আসছে। তবে কেন ট্রাম্পের কাছে এটি একটি বাজে চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেÑ তা বিশ্লেষণের দাবি রাখে। ট্রাম্প তার পূর্বসূরির সবকাজেই ত্রুটি বিচ্যুতি ও দোষ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। যার মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে ওবামা কেয়ার ও অভিবাসী নীতি ,বহির্বিশ্বের বিশ্ব জলবায়ু চুক্তি এবং ইরান চুক্তি রয়েছে। ট্রাম্পের বক্তব্য হচ্ছে, ওবামা ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে দেশটির ওপর থেকে পূর্বে আরোপিত বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে খুব বেশি ছাড় দিয়ে ফেলেছেন। যার সুযোগ নিয়ে দেশটি অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে গেছে এবং বর্তমানে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য সামরিক প্রযুক্তি আয়ত্ত করার চেষ্টা করছে। ট্রাম্পের মতে, এই চুক্তিতে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য আরব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সক্রিয় জঙ্গী দলগুলোকে সাহায্য-সহযোগিতা থেকে বিরত রাখার কোন শর্ত ইরানের ওপর চাপিয়ে না দেয়া চুক্তির অন্যতম প্রধান দুর্বলতা। তাই ইরানের ওপর নতুন কিছু শর্ত আরোপ করার মাধ্যমে দেশটির মিসাইল প্রযুক্তি কার্যক্রম সঙ্কুচিত করাসহ আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়েছে। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ চুক্তি স্বাক্ষরকারী অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দেশের অভিমত হচ্ছে যে, চুক্তির অন্যতম লক্ষ্য ছিল ইরানকে তার পরমাণু কর্মসূচী থেকে সরিয়ে আনা, যা দেশটি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছে। এমনকি গত নবেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘ পর্যবেক্ষকদল নয়বার ইরানের বিভিন্ন পরমাণু কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে এই রিপোর্ট দিয়েছে যে, ইরান কোন ধরনের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচীতে লিপ্ত নয়। এখন যদি যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি বহির্ভূত অন্য কোন শর্ত চাপাতে চায় এবং ইরান তা মানতে অস্বীকার করে তবে এই অঞ্চলে আরেকটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। বিশ্লেষকদের মতে এমন ধরনের পরিস্থিতির দিকেই ট্রাম্প প্রশাসন এগিয়ে চলেছে। কারণ বৃহস্পতিবার মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মনুচিন বলেছেন, দেশটির ওপর আরও কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি হতে চলেছে বলে আপনারা ধরে নিতে পারেন। হোয়াইট হাউসের অপর একটি সূত্র বলেছে, সাম্প্রতিক ইরানের অভ্যন্তরীণ গোলযোগ দমনের সময় এবং এর আগের কিছু ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিদেশী চরম পন্থীদের মদদদানসহ বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে। তবে যে কারণেই ইরানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক না কেনÑ ইরান চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করবে এবং বিষয়টি জাতিসংঘ পর্যন্ত গড়াবে। কারণ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ২০১৫ সালের এই চুক্তি সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন করেছিল। চুক্তির বিরুদ্ধে ট্রাম্পের সম্ভাব্য পদক্ষেপের কথা শুনে চুক্তি স্বাক্ষরকারী ইউরোপের বিভিন্ন দেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে ব্রাসেলসে ইইউ প্রতিনিধি এবং ব্রিটেন, জার্মানি ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফের সঙ্গে পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনার জন্য এক বৈঠকে মিলিত হন। বিবিসি জানায়, ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্ব শক্তির পরমাণু চুক্তির চেয়ে ভাল কোন বিকল্প যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকলে তা দেখানোর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইরান, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অন্যান্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর তিনি এ কথা জানান। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বেশ জোর দিয়ে বলেন, চুক্তিটি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন থেকে বিরত রেখেছে। আমি মনে করি না কেউ এর চেয়ে ভাল কোন উপায় নিয়ে আসতে পারে। যারা এর বিরোধিতা করছে তারা আরও ভাল সমাধান নিয়ে আসুক। কারণ আমরা এ রকম কিছু কখনও দেখতে পাইনি। ইউরোপের শক্তিধর দেশগুলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চুক্তিটি বাতিল না করার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ওই চুক্তির কারণেই বিশ্ব নিরাপদ আছে। ইইউ পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোগেরিনি বলেছেন, এই চুক্তিটি কাজ করছে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচীর ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভালভাবে নজরদারি করতে পারছে। এ রকম একটি চুক্তি রক্ষা করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের এক থাকা দরকার।
×