ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী

পাহাড়-পর্বত আর লেক-ভ্যালির দেশ সুইজারল্যান্ড

প্রকাশিত: ০৭:২৭, ১২ জানুয়ারি ২০১৮

পাহাড়-পর্বত আর লেক-ভ্যালির দেশ সুইজারল্যান্ড

সুইজারল্যান্ডের ছোট একটি শহর জেনেভা। ছোট শহর হলেও এ শহরটি গুরুত্বের দিক থেকে অন্যতম। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার অফিস ও সদর দফতর জেনেভাতে অবস্থিত। যেমন ওয়ার্ল্ড টেলিকমিউনিকেশনের সদর দফতর, বিশ্বের বিজ্ঞানীদের রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বিশ্ব আবহাওয়া দফতর, রেড ক্রসের সদর দফতর, আইএলও, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সদর দফতর, মূলত বিশ্ব সম্মেলনের ক্ষেত্রে জেনেভা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিটি। সম্প্রতি প্যারিস থেকে ফ্রান্সের দ্রুততম ট্রেন টিজিবি ডুপ্লেক্স-এ (যা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩১৯ কিলোমিটার বেগে ছুটে থাকে) করে সুইজারল্যান্ডের সুন্দর ও ছবির মতো চমৎকার শহর জেনেভায় মাত্র ৩ ঘণ্টায় পৌঁছে যাই। ট্যুরিস্ট বাসে করে জেনেভা শহর ঘুরতে লাগে মাত্র ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। বলে রাখা ভাল, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ৩৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের পর সুইজারল্যান্ড ও বেলজিয়াম ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেই। টিজিভি ট্রেনে আমার এই প্রথমবারের মতো সফর ছিল। দ্রুতগামী এ ট্রেন সংযুক্ত করেছে ফ্যান্সের প্রধান শহরগুলো ছাড়াও ইউরোপের অনেক দেশের রাজধানীগুলোকে। এ ট্রেন তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে উচ্চমানের এ্যালুমিনিয়াম। ফলে ওজন কমেছে। প্রতিটি বগি এতটাই শহনশীল, সর্বোচ্চ গতিতে চলাচলের সময় একটি টিজিভি ট্রেন দুর্ঘটনা কবলিত হয়- তাহলে এর বগিগুলো একেবারে দুমড়ে মুচড়ে যাবে না। ফ্রান্সের এসএনসিএফ কোম্পানির তত্ত্বাবধানে এ ট্রেন ২০১১ সাল থেকে ইউরোপের বিভিন্ন রুটে চলাচল শুরু করছে। বর্তমানে প্রচুর ঠা-ার শহর জেনেভা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং জাঁকজমকপূর্ণ এ শহরটিতে মানুষের আতিথেয়তা সবাইকে মুগ্ধ করে থাকবে। সুইস চকোলেট, সুইস ঘড়ি এবং সুইস ব্যাংকখ্যাত সুইজারল্যান্ড সত্যিই অভূতপূর্ব। জেনেভা শহরে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ লোকের বসবাস। আর এদের মধ্যে মাত্র ৩ থেকে ৪শ’ বাংলাদেশীর অবস্থান সেখানে। এদের প্রায় সকলেই রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, শপিং মল দোকানে কর্মরত এবং অনেক বাংলাদেশী ভাল চাকরির খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। লেক লেমন জেনেভা শহরের পর্যটন প্রসিদ্ধ এলাকা। তবে এখন জেনেভাতে প্রচ- শীত এবং ¯েœা পড়ছে। চোখে দেখে এসেছি গুঁড়ি গুঁড়ি বরফের বৃষ্টি পড়ছে আবার নিমিষে শেষ। এ সময় রৌদ্র বেশ উপভোগ্য। দেশটিতে কোন ক্রাইম বলে কিছু নেই। শান্তির দেশ তবে অবৈধদের থাকার তেমন কোন সুযোগ নেই। সারা সুইজারল্যান্ডে ৫-৬ হাজার বাংলাদেশী রয়েছে। আশার আলো এই যে, জেনেভা শহরে বাংলাদেশী কমিউনিটি স্থাপিত ‘বাংলা পাঠশালা’ নামে সোনামণিদের একটি স্কুল রয়েছে। যার তত্ত্বাবধানে প্রবাসী মাহবুবুর রহমান, শাহাদাত, রিয়াজুল হক ফরহাদ এবং হোসেইন প্রমুখ রয়েছেন। বাংলায় লেখাপড়া ও বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি এ স্কুলের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়ে থাকে। জেনেভা কেন, সারা সুইজারল্যান্ডে কোন দুর্ঘটনা সাধারণত ঘটে না। ফ্রান্সে আলমাস শহর জেনেভার নিকটতম সীমান্ত শহর। তবে গ্রীষ্মকালে সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ করা চমৎকার সময়। বলে রাখা ভাল ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সুইজারল্যান্ড সবচেয়ে সৌন্দর্যময় দেশ। এর প্রাকৃতিক দৃশ্য ইউরোপের সকল দেশকে হার মানায়। পাহাড়, পর্বত, লেক, ভ্যালি এবং আলপাইন বনাঞ্চল ঘেরা এই দেশটিকে আল্লাহ যেন সব কিছু উজাড় করে দিয়েছেন। জেনেভা শহর থেকে তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে জুরিখ, বার্ন বাসেল, লজান শহর থেকে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রিয়ার যে কোন শহরে বাস-ট্রেনে যাতায়াত করা সহজ। জেনেভা শহরের চতুর্দিকই হচ্ছে মনোরম। প্রতিটি প্রান্ত চোখ জুড়ানো। ভ্রমণের ক্ষেত্রে দর্শনীয় স্থানগুলো বাছাই করা মুশকিল। জেনেভার লেক চমৎকার ও বিশাল। এ ছাড়াও প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্যে ভরপুর জেনেভা শহর। ভ্রমণ যেন শেষ হতে চায় না। যদি কোন সময় জেনেভা কেন, সারা সুইজারল্যান্ড সফরে আসেন তবে গ্রীষ্মকালে ভ্রমণের জন্য ভাল সময়। সুযোগ ও সময় করে দেখে আসুন জেনেভা শহর বা গোটা সুইজারল্যান্ড। তবে দেশটি কোন ভাবেই ভুলে থাকার নয়।
×