ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারী শক্তির অপার সম্ভাবনায় ২০১৮

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ১২ জানুয়ারি ২০১৮

নারী শক্তির অপার সম্ভাবনায় ২০১৮

পপি দেবী থাপা নারী তুমি জাগ্রত দ্বারে, শক্তির উন্মোচিত মহিমায় তেজোদ্বীপ্ত সূর্যের মতো হও আলোকিত। শক্তির ধারক তুমি, তুমিই ধরিত্রী। জননী তুমি, তুমিই দুর্গতিনাশিনী। কমনীয় তুমি কঠিন তুমি, তুমি প্রকৃতি ও পুরুষের সমন্বয়। তোমার মধ্যে লুকিয়ে থাকা অপার শক্তি ও সম্ভাবনা এ পৃথিবীকে করে তুলুক আরও সুন্দর, আলোকময়। যুগের আর এক ইতিহাসে বর্ষবরণের নব অধ্যায়ে তোমার পদর্পণ হোক সগৌরবে। সকল বাঁধা, সকল সংস্কার জাল ছিন্ন করে তোমার সাফল্য ও সম্ভাবনার কথা বলুক নতুন বছর। হে নারী তোমায় স্বাগত নতুন বছর- ২০১৮ তে। ২০১৭ সালের সকল না পাওয়া পূর্ণতা পাক প্রাপ্তিতে নতুন বছরে। কানায় কানায় ভরে উঠুক প্রাপ্তির সকল ঝুড়ি। ২০১৮ সালে সকল ব্যর্থতা আর গ্লানি মাড়িয়ে তোমার সাফল্য ছাড়িয়ে যাক বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে। নতুন বছরের জয়মাল্য তোমার কণ্ঠকে করুক আলিঙ্গন। সঠিক সময়ে যর্থাথ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তোমার সুবুদ্ধির হোক শুভ প্রয়োগ। নতুন বছরের প্রতিটি মুহূর্তে মননে, চিন্তায়, চেতনায়, জ্ঞানে, বুদ্ধিতে বিদ্যায় তুমি হও সমৃদ্ধ। নতুন সূর্যালোকে প্রকাশ পাক তোমার শক্তির নব নবরূপ। ২০১৮ সালে আমাদের দেশের প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা প্রান্তিক সকল পর্যায়ের নারীর সর্বক্ষেত্রে হোক জয়জয়কার। এ বছর রাজনীতিতে বৃদ্ধি পাক নারীর অংশগ্রহণ। ২০১৮ সালে দেশ ব্যস্ত থাকবে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে। আর এ সংসদীয় নির্বাচনে সরাসরি ৩০% আসনে বিজয়ী হয়ে আসুক বাংলার নারী। নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক বাংলাদেশ। যুদ্ধ নয় শান্তি ও সহমর্মিতার বৈশিষ্ট্য নিয়ে বাংলার নারী আন্তর্জাতিক পরিম-লের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার শক্তি, জ্ঞান, বুদ্ধি দিয়ে এগিয়ে যাক সর্বাগ্রে। দেশের অর্থনীতিতে নারীর ভূমিকা এ বছর আরও বৃদ্ধি পাক। দেশের অর্থনৈতিক কার্যের নেতৃত্ব কিংবা তৃণমূল পর্যায়ের সকল কাজে এ বছর নারীর অংশগ্রহণ হোক প্রশংসনীয়। সাহিত্যে, সংস্কৃতিতে দেশের নারীরা রাখুক সফল ভূমিকা। প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে নারী পাক তার শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন। নতুন বছরে দেশের সকল গৃহিণী পাক গৃহকর্মে তার কাজের স্বীকৃতি। প্রতিটি সামাজিক কর্মকা-ে নারীর মূল্যায়ন ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাক। বন্ধ হোক সকল ধরনের নারী নির্যাতন, নারী ও শিশু ধর্ষণ। আর একটাও গণধর্ষণ নয়। এ বছর আর কোন রুপাকে যেন গণধর্ষণের শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে না হয়। এসিড দগ্ধ যেন না হয় আর কোন মেয়ের জীবন। মেয়েকে ধর্ষণের প্রতিবাদে যেন আর কোন মা-মেয়েকে অত্যাচারিত, নির্যাতিত না হতে হয়। এ বছর বাংলামায়ের কানে আর যেন ধ্বনিত না হয় কোন নারীর করুণ চিৎকার। ছিনিয়ে না নেওয়া হয় কোন নারী সৌন্দর্য। থানা এমনকি নারী শিশু আদালতের কেস ডাইরি যেন কোন নারীর কষ্টের, কান্না, আর্তনাদের, প্রাণনাশের ঘটনার বিবরণে ছেপে না যায়। এ বছর আমাদের সমাজ থেকে চিরতরে বিতাড়িত হোক যৌতুকপ্রথা। যৌতুকের দায়ে কোন নারীকে যেন শারীরিক মানসিক, অত্যাচার সহ্য করে সংসার ছাড়তে না হয়। কোন মেয়েকে অপ্রাপ্ত বয়সে জোড়পূর্বক বিয়ে দিয়ে যেন তার সকল সম্ভাবনার দ্বার রুদ্ধ করে না দেওয়া হয়। এ বছর বৃদ্ধি পাক নারী উচ্চ শিক্ষার হার। নিরাপদ মাতৃত্ব পাক দেশের প্রতিটি প্রান্তের নারী। পুষ্টি আর চিকিৎসার অভাবের কালো ছায়া সরে যাক দেশের মাথার ওপর থেকে। এ বছর ক্রিড়াঙ্গনে বাংলার নারী জয় করে আনুক সাফল্যের সর্বোচ্চ পুরস্কার। ২০১৮ সালে আমাদের দেশের সকল মানবের হৃদয় ভরে উঠুক মানবতা, প্রীতি আর ভালবাসায়, যাতে করে কোন বৃদ্ধ মাকে পেটের দায়ে ভিক্ষা করতে না হয়। বৃদ্ধ, কর্মশক্তিহীন মা কে অবহেলা না করা হয়। এ বছর কোন মা কে যেন বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে নীরবে কাঁদতে না হয়। ২০১৮ সালে আমরা আশা করি ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে আমাদের দেশে চলে আসা লাখো নির্যাতিত নিপীড়িত রোহিঙ্গা নারী ও শিশুরা তাদের নিজস্ব অধিকার নিয়ে স্বসম্মানে নিজ দেশে ফিরে যাবে। আমরা বিশ্বাস করি মিয়ানমার সরকার এ বিষয়ে তাদের কার্যক্রম এ বছরেই সম্পন্ন করবেন। কেবল নারীরাই পারে একটি মানবিক পৃথিবী গড়ে তুলতে। নতুন বছরে সেই প্রত্যাশা আমাদের সবার। নারীর মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি, নারী শক্তির জাগরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ এবং সফলতা অর্জনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হোক ২০১৮ সাল।
×