ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না বিএনপি

সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন চায় জাতীয় পার্টি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১২ জানুয়ারি ২০১৮

সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন চায় জাতীয় পার্টি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ বিএনপি না চাইলেও সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। ইতোমধ্যে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সার্বিক প্রস্তুতিও নিয়েছে দলটি। চূড়ান্ত করা হয়েছে প্রার্থীও। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন জাপার শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নিতে কোন আপত্তি নেই। তবে নিরপেক্ষ নির্বাচন চান তারা। বলছেন, অন্য কোন দল নির্বাচনে অংশ না নিলে কারও জন্য নির্বাচন অপেক্ষা করবে না। এদিকে নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তুলে বিএনপি বলছে, কোন অবস্থাতেই সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে তারা নারাজ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলে ক্ষতি তাদেরই। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পরপর দুইবার নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় দলের নিবন্ধন বাতিল হলে আরেকটি সঙ্কটের মুখে পতিত হবে দলটি। তাছাড়া তাদের দাবি দাওয়ার সঙ্গে সংবিধানের কোন সম্পর্ক নেই। এদিকে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোট ছাড়া অন্যান্য সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া ১৪ দলের শরিক দলগুলোতে ইতোমধ্যে নির্বাচনী ডামাডোল চলছে রীতিমত। চলছে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া। বিভিন্ন ইসলামী দলসহ বাম ধারার দলগুলোও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি জাপার ॥ সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন হবে। সরকার ভাল অবস্থানে আছে, উপ-নির্বাচনের কোন সম্ভাবনা নাই। নির্বাচন সময় মত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে এরশাদ বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আমরা সবাই এক সঙ্গে বসার পরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব কিভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। তিনি বলেন, বিএনপির অবস্থানের উপর নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত। তবে রংপুরের নির্বাচন একটি উদাহরণ তৈরি করেছে। কোন রকম গ-গোল হয়নি। নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী সংসদ নির্বাচনও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। কারণ দেশবাসী জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। কোন দল না এলে তাদের জন্য তো নির্বাচন আটকে থাকবে না বলেও মত দেন তিনি। জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমরা নির্বাচনের পক্ষে। জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। ২০১৪ সালেও আমরা নির্বাচন করেছি। সাংবিধানিক কোন সঙ্কটের দিকে দেশ চলে যাবে আমরা তা চাই না। তাই আগামী নির্বাচনেও আমরা অংশ নেব। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে কোন আপত্তি না থাকার কথাও জানান তিনি। নারাজ বিএনপি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে অটল অবস্থানের কথা জানাচ্ছেন দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। সম্প্রতি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের ফর্মুলার বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে কোন সহায়ক সরকার হবে না। কারণ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের প্রধান অন্তরায় হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। আর সে রকম নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। কেবল স্থায়ী কমিটির বৈঠকেই নয়, গত কয়েক মাসে দলের প্রায় প্রতিটি সভা-সমাবেশে নিজের এই অনড় অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বক্তব্য দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন হতে হবে সহায়ক সরকারের অধীনে। হাসিনার অধীনে এ দেশে কোন নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। হাসিনাকে বাদ দিতেই হবে, ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতেই হবে। সেই নির্বাচনে প্রত্যেক ভোটার ভোট দিতে যাবে। সকলে এটা চায়, সারা পৃথিবীর মানুষ এটা চায়। শেখ হাসিনার অধীনে কেন বিএনপি নির্বাচনে যাবে না-এই প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের বলেন, হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন করলে কোন দিনই সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, নিরপেক্ষ হবে না। ভোটাররা ভোট দিতে যেতে পারবে না ভোটকেন্দ্রে। তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। আর হবেও না। হাসিনার অধীনে নির্বাচন আমরা কয়েকবার দেখেছি। ২০১৪ সাল একটা প্রমাণ। সারা পৃথিবী বলেছে ২০১৪ সালে বাংলাদেশে কোন নির্বাচন হয়নি। এ নির্বাচন আর বাংলাদেশে হবে না। এ দেশে নির্বাচন হবেই হবে। সে নির্বাচন হবে সহায়ক সরকারের অধীনে। যে নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে। তবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে নানা কথা বলছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কখনও বলছেন নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। আবার কখনও নিজেদের মত করে নির্বাচনকালীন সরকার দাবি করা হচ্ছে দলটির পক্ষ থেকে। স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচনে বিএনপির বিন্দুমাত্র আস্থা নেই। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। বিএনপি অবশ্যই আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে, তবে সে নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। তিনি বলেন, সংবিধান জনগণের জন্য। কাজেই জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান পুনরায় সংশোধন করা যেতে পারে। কার অধীনে ভোট ॥ সংবিধানের ১১৮ (৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবে এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবে।’ এছাড়া ১১৯ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে সংসদ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত থাকবে। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী ইসি সংসদ সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে। সংবিধানের ১২০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালনের জন্য যেরূপ কর্মচারীর প্রয়োজন হইবে, নির্বাচন কমিশন অনুরোধ করিলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনকে সেইরূপ কর্মচারী প্রদানের ব্যবস্থা করিবেন।’ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাহী বিভাগের সহযোগিতার বিষয়ে সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে।’ সংবিধানের এই সহযোগিতা বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, রোডম্যাপে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির সময়কালকে ভোটের সময় বিবেচনা করছেন। এর মধ্যে উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
×