ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচন

বড় দুই দলের প্রার্থী অনেকটাই নিশ্চিত, মাঠেও তৎপর

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১২ জানুয়ারি ২০১৮

বড় দুই দলের প্রার্থী অনেকটাই নিশ্চিত, মাঠেও তৎপর

শাহীন রহমান ॥ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে উপনির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর থেকে আগ্রহী প্রার্থীদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। আগ্রহী প্রার্থীরা অনেকেই রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার মেয়র পদে গায়ক শাফিন আহমেদ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। অন্যরা এখনও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ না করলেও নির্বাচনের মাঠে তাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস সূত্র জানিয়েছে অনেকেই খোঁজখবর নিচ্ছেন। আগামী রবিবার থেকে মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ বাড়তে পারে। আইন অনুযায়ী মেয়র পদের নির্বাচন হবে দলীয় ভিত্তিতে। ফলে কোন দলের প্রার্থী কে হবেন তা দলগুলোই নির্ধারণ করবে। দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থী হিসেবে দল থেকে পাওয়া প্রত্যয়ন পত্রও জমা দিতে হবে। তবে এখনও বড় দুটি দলের প্রার্থী বাছাই শুরু না হলেও এ দুটি দলের প্রার্থী কে হবেন তা অনেকটাই নিশ্চিত। নিজেদের প্রার্থিতার বিষয়ে নিশ্চিত জেনেই তারা নির্বাচনের মাঠে তৎপর রয়েছেন। তফসিল ঘোষণার আগেই সেসব প্রার্থীদের পোস্টারে ভরে গেছে ঢাকার রাজপথ। যদিও ইসির পক্ষ থেকে আগাম প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তারা জানিয়েছে আগামী ২৯ জানুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনের আগে কেউ নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবে না। এদিকে মেয়র পদে উপনির্বাচনে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনয়নে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম, পদবি আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসি। তারা জানায় রাজনৈতিক দল কোন ব্যক্তিকে মনোনয়ন প্রদানের ক্ষমতা প্রদান করলে উক্ত দলের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম, পদবি, নমুনা স্বাক্ষর রিটার্নিং কর্মকতার নিকট জমা দিতে হবে। একটি অনুলিপি নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাতে হবে। ইসি জানিয়েছে কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে একজন মাত্র প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেয়া যাবে। এর বাইরে একাধিক ব্যক্তিকে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হলে সেই দলের প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হবে বলে ইসির নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতা ঘোষণা কর না হলেও দলের একজন প্রার্থীর গ্রিন সিগন্যাল রয়েছে। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামকে দল থেকে মনোনয়নের বিষয় অনেকটাই নিশ্চিত। এর আগে তিনি গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেও এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা পেয়েও গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। রাজধানীতে তার নামে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। মেয়র প্রার্থী হিসেবে জনসাধারণকে অনেক প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন তিনি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনও প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আগামীকাল থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ফরম বিতরণের সময় ঠিক করেছে। দলের দফতর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এই তিনদিন বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে মনোনয়নের আবেদন জমা দিতে হবে। পরদিন সন্ধ্যায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মনোনয়ন কমিটির বৈঠকে আবেদনপত্রগুলো যাচাই-বাছাই শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে। দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করা না হলেও আতিকুল ইসলামই যে দলের প্রার্থী তা এক প্রকার নিশ্চিত। এদিকে বিএনপি পক্ষ থেকে আগামীকাল শনিবার মেয়র পদে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। দলটির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম জানিয়েছে মেয়র উপনির্বাচনে জোটগত প্রার্থী দেয়া হবে। যাকে এ পদে মনোনয়ন দেয়া হবে তিনি ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হবে। তবে শনিবার দলের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হলেও আগের প্রার্থী তাবিথ এম আউয়ালের প্রার্থিতা অনেকটাই নিশ্চিত। তিনি ইতোমধ্যে গণসংযোগে রয়েছে। গত ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল নির্বাচনে তাবিথ এম আউয়াল বিএনপির প্রাথী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মেয়র নির্বাচিত না হলেও বিপুল ভোটের এগিয়ে ছিলেন। এবারও তার প্রার্থিতা অনেকটাই নিশ্চিত। এর বাইরে অন্য ছোট দলগুলোর প্রার্থীদের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তেমনি একজন প্রার্থীর নাম জোনায়েদ সাকি। তিনি ইতোমধ্যে গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। আগেরবার নির্বাচনে টেলিস্কোপ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৭ হাজার ৩৭০ ভোট পেয়েছিলেন এই বাম নেতা। গণসংহতি আন্দোলনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এক জরুরী সভায় ঢাকা (উত্তর) সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির প্রার্থিতা অনুমোদন করা হয়েছে। এদিকে নির্বাচনের কমিশনের নিবন্ধন না থাকলেও ববি হাজ্জাজের দল নির্বাচনের প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে এ দলের পক্ষে ব্যান্ড শিল্পী শাফিন আহমেদ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তফসিল ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মেয়র পদে ১ জন, সাধারণ ওয়ার্ডে ৫৭ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৪ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। শাফিন ববি হাজ্জাজের গড়া নতুন দল ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) এ যোগ দিয়েছেন। তবে ইসিতে দলটি নিবন্ধিত না হওয়ায় এবার তাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়তে হবে। মনোনয়নপত্র নেয়ার পর শাফিন সাংবাদিকদের বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করছি। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই। নির্বাচন কমিশন যেন সঠিক বিধিমালা পালন করেন। অর্থের প্রভাব যেন কেউ না খাটাতে পারে। এছাড়াও জানা গেছে জামায়াতের ঢাকা মহানগর (উত্তর) সভাপতি মুহাম্মদ সেলিমউদ্দিনের পক্ষে তার আইনজীবী গোলাম কিবরিয়া ভোটার তালিকার সিডি সংগ্রহ করেছেন। ২০ দলীয় জোটের সিদ্ধান্ত পেলে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হবে বলে জানান কিবরিয়া। এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন ম-ল জানান, দক্ষিণে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১২টি ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২টি মনোনয়নপত্র বিতরণ হয়েছে। গত ৯ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে ইসি। পাশাপাশি দুই সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে নতুন যোগ হওয়া ৩৬ ওয়ার্ডের সাধারণ নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে উপনির্বাচনে নতুন যোগ হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডের ভোটাররা মেয়র পদে ভোট দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এছাড়া দুই সিটি ৩৬ ওয়ার্ডে কান্সিলররা কতদিনের জন্য নির্বাচিত হবেন তা আইনে স্পষ্ট না থাকায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। জটিলতা মাথায় নিয়েই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে দুই সিটির বাকি মেয়াদের নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো সাধারণ নির্বাচনে পুরো মেয়াদের জন্যই নির্বাচিত হবেন। আইনগত এই জটিলতা মাথায় নিয়ে নির্বাচন করতে হবে ইসির। তারা জানান সাধারণ নির্বাচনে কাউন্সিলরদের মেয়াদ ঠিক না করে তফসিল ঘোষণা করায় জটিলতা বাড়ছে। ফলে কেউ এই নির্বাচন নিয়ে মামলা করে থাকলে নির্বাচন নিয়েও শঙ্কার মধ্যে পড়তে হতে পারে। এছাড়াও এই নির্বাচনে নতুন ভোটারদের প্রার্থিতা নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছে। জানা গেছে নতুন আগামী ৩১ জানুয়ারি ভোটার তালিকা হালনাগাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। নতুন ভোটাররা এ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। কিন্তু যারা নতুন ভোটার হচ্ছে তারা প্রার্থী হতে পারবে না। কারণ ইসির তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন হলে ১৮ জানুয়ারি। আর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ৩১ জানুয়ারি। এ কারণেই নতুন ভোটারা ভোট দিতে পারলেও পার্থী হতে পারছেন না। যদিও সিইসি তফসিল ঘোষণা অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন এ নির্বাচনে আইনগত কোন জটিলতা নেই। স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা মেনেই নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিইসি বলেন, কেই যদি মামলা করে থাকে তা হলে ইসির কি করার থাকে।
×