ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকলার সবুজ চত্বরে অনলাইন মেলা-একখ- বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১২ জানুয়ারি ২০১৮

শিল্পকলার সবুজ চত্বরে অনলাইন মেলা-একখ- বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘উন্নয়নের গণতন্ত্র শেখ হাসিনার মূলমন্ত্র’ এই স্লোগান ধারণ করে জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির সবুজ চত্বরে শুরু হয়েছে উন্নয়ন মেলা-২০১৮। পুরো সবুজ চত্বরটি যেন একখ- বাংলাদেশ! সরকারের ৬২ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পৃথকভাবে এই চত্বরে উন্নয়ন মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞ থেকে শুরু করে আগামীতে নতুন কি ধান দেশে উৎপাদন হতে যাচ্ছে তার সব তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে উন্নয়ন মেলায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোন ইউনিয়নে কখন কি ফসল আবাদ করতে হবে কিংবা ওই মাটিতে কতটুকু সার প্রয়োগ করতে হবে ঘরে বসে সেই তথ্য জানা যাচ্ছে ‘অফলাইন ডিজিটাল সার সুপারিশ কর্মসূচীর মাধ্যমে।’ অনলাইনভিত্তিক এই সার্ভিস চালু করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট। মেলায় এসে যে কেউ এসব সার্ভিস গ্রহণে পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা নিতে পারছেন। শুধু তাই নয়, দেশের প্রতিটি নাগরিক ২৪ ঘণ্টা সরকারী স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারবেন ১৬২৬৩ নাম্বারে ডায়াল করে। ইতোমধ্যে নাগরিকদের জরুরী প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক সেবা দিতে ইমার্জেন্সি হেল্পলাইন-৯৯৯ চালু করেছে সরকার। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর অগ্রযাত্রার ৯ বছর অতিবাহিত হয়েছে। শেখ হাসিনার দর্শন বাংলাদেশের উন্নয়ন এই ফর্মুলায় দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ঘোষণা করা হয়েছে রূপকল্প-২০২১ এবং ২০৪১। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নিয়ে যেতে কাজ শুরু করা হয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়নেও সফল হতে চায় বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কি কাজ করছে, কি তাদের উন্নয়ন, কি ধরনের সেবা পাচ্ছে জনগণ তাই উন্নয়ন মেলায় তুলে ধরা হচ্ছে। ঢাকার পাশাপাশি দেশের ৬৪টি জেলা এবং প্রতিটি উপজেলায় এখন উন্নয়ন মেলা চলছে। শিল্পকলা একাডেমির উন্নয়ন মেলা আয়োজন করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই মেলার পর্দা নামবে আগামী ১৩ জানুয়ারি শনিবার। জানা গেছে, মেলার মাধ্যমে সরকারী-বেসরকারী ও আধা সরকারী সংস্থার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে দেশের উন্নয়ন কর্মকা-ের সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে চায় সরকার। বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরই সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর ঢল নামে উন্নয়ন মেলায়। কুটির শিল্প বিশেষ করে শাড়ি কাপড়ের বেশকিছু স্টল অংশগ্রহণ করায় পুরোপুরি উপভোগ্য একটি মেলা শুরু হয়েছে শিল্পকলায়। কিছু প্রতিষ্ঠান তাৎক্ষণিক সেবা দিচ্ছে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের। এর আগে মেলা প্রাঙ্গণে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে উন্নয়ন মেলার সার্বিক দিক তুলে ধরেন ঢাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। ওই সময় তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গঠনে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সেগুলো জনগণকে অবহিত করতে এবং তার সঙ্গে জনগণকে একাত্ম করতেই আমাদের এ আয়োজন। দেশের সব মন্ত্রণালয়, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী এবং পুলিশ-আনসারসহ বিভিন্ন সরকারী, আধা সরকারী ও বেসরকারী সংস্থা এ মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের নিজ নিজ কার্যক্রম জনগণের সামনে উপস্থাপন করছে। এতে জনগণ অবহিত হতে পারছেন এবং এ কাজের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে পারছেন। অনেক দর্শনার্থী মন্তব্য বইতে সরকারী কর্মকা-ের বিষয়ে নিজস্ব মতামত তুলে ধরছেন। ঢাকা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ মেলায় বিভিন্ন বিভাগের ৯০টিরও বেশি স্টল রয়েছে। সরকারী সংস্থাগুলো তাদের বিভিন্ন সেবা মেলা থেকে সরাসরি দর্শনার্থীদের দিচ্ছে। এ ছাড়া আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হচ্ছে। প্রতিটি বিভাগ ও দফতর যেসব সেবা দিচ্ছে তা তাৎক্ষণিকভাবে এই মেলা থেকে পাওয়া যাবে। মেলার প্রথম দিন দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত সরকারী দফতরের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ওপর ভিডিও প্রদর্শনী তুলে ধরা হয়। এরপর বিকেল তিনটায় ডিজিটাল বাংলাদেশ ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মেলার দ্বিতীয় দিন আজ শুক্রবার সকাল নয়টা থেকে দশটা পর্যন্ত বিভিন্ন দফতরের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ওপর ভিডিও চিত্র জায়েন্ট স্ক্রিনে প্রদর্শন করা হবে। সকাল দশটা থেকে বেলা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে এমডিজি অর্জন ও এসডিজি অর্জনের পথে বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনার। এছাড়া মেলার শেষ দিন শনিবার সকাল নয়টা থেকে দশটা পর্যন্ত জেলা পর্যায়ের সব দফতরের বিভিন্ন সেবার তথ্য প্রদর্শন করা হবে। সকাল দশটায় থাকবে বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন ও আজকের বাংলাদেশ শিরোনামের আলোচনা সভা। এদিন বেলা বারোটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকল্পের প্রদর্শনী ও কুইজ প্রতিযোগিতা হবে। বিকেল তিনটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত হবে এ উন্নয়ন মেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ছয়টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তিন দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলা। এবারের মেলা উপলক্ষে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর অগ্রযাত্রার নয় বছর শীর্ষক একটি বুকলেট প্রকাশ করেছে। উন্নয়ন মেলায় অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ব্যাংক জনগণকে কি ধরনের সেবা দিচ্ছে তা জানাচ্ছে নগরবাসীকে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে আগামীতে কি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে তা জনগণের সামনে তুলে ধরছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডা বিনিয়োগ বাড়াতে কি ধরনের সেবা দিচ্ছে তা তুলে ধরছে। তাৎক্ষণিক যেসব সেবা পাওয়া যাচ্ছে ॥ ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ভূমি উন্নয়ন কর গ্রহণ করা হচ্ছে উন্নয়ন মেলায়। এছাড়া ভূমি নামজারির আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন অফিসের উদ্যোগে সরাসরি স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারছেন দর্শনার্থীরা। বেশ কয়েকজন মেডিক্যাল অফিসার, টেকনোলজিস্ট, নার্স এবং সংশ্লিষ্টরা এখানে কাজ করছেন। এ প্রসঙ্গে মেলা স্টলে নিয়োজিত ডাঃ আশফিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, মেলা শুরুর পর থেকে অনেক দর্শনার্থী তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছে। রক্তের গ্রুপ জানা, ডায়াবেটিস আছে কি না এবং নানাবিধ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া মেলায় জয়িতা ফাউন্ডেশনের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী নিয়ে মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রি করছেন। এতে অনেকেই কেনাকাটা করতে পারছেন। আবহাওয়া অফিস তাদের সেবা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। আগামীতে দেশের কোথায় কোন ফসলের উপযোগী আবহাওয়া বিদ্যমান থাকবে তার আগাম তথ্য দেবে আবহাওয়া অফিস। তাদের এই সেবা কর্মকা- দ্রুত জনগণকে দিতে ব্যাপকভিত্তিতে কাজ শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন থেকে কত ধরনের নাগরিক সেবা পাওয়া যায় সেসব তথ্য সরবরাহ করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া মহিলা বিষয়ক অধিদফতর বিভিন্ন সেবা ও সার্ভিস সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করছে।
×