ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাওলানা সাদ ফিরে যাচ্ছেন দিল্লীতে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১২ জানুয়ারি ২০১৮

মাওলানা সাদ ফিরে যাচ্ছেন দিল্লীতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারতের দিল্লীর তাবলিগ জামাতের আমির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভি বিশ্ব এজতেমায় যোগ দিচ্ছেন না। তিনি সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ থেকে চলে যাবেন। যতদিন বাংলাদেশে থাকবেন, ততদিন তিনি কাকরাইল মসজিদে থাকবেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। তবে বৈঠকে অংশ নেয়া নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে, শুক্রবারই মাওলানা সাদের দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে। ভারতের দিল্লীর তাবলিগ জামাতের আমির বিশ্ব এজতেমায় যোগ দিতে এ বুধবার দুপুরে ঢাকায় আসেন। তার ঢাকায় আসার খবরে বুধবার সকাল নয়টা থেকেই বিমানবন্দরসহ আশপাশের এলাকার রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করছিলেন তাবলিগ জামাতের একাংশ এবং হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভের কারণে সাড়ে ছয় ঘণ্টা বিমানবন্দর সড়কের সঙ্গে সংযোগ থাকা জেলার যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বিদেশগামী ও বিদেশ থেকে আসা দেশী-বিদেশীদের। পরবর্তীতে কড়া নিরাপত্তায় মাওলানা সাদকে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে রাখে পুলিশ। এই মসজিদ থেকেই বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। মাওলানা সাদ এজতেমায় যোগ দিচ্ছেন বলে বৃহস্পতিবার সকালে জানান ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তারপরেও বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন বিক্ষোভকারীরা। বৃহস্পতিবারও তারা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভ থেকে শুক্রবারের মধ্যে মাওলানা সাদকে দিল্লী না পাঠালে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর শাখার যুগ্ম সম্পাদক ফজলুল করিম কাশেমী। এ দিকে সকাল থেকেই কাকরাইল মসজিদের সামনে বিক্ষোভের চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জানান, মাওলানা সাদকে কাকরাইল মসজিদে রাখার পর থেকেই সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব ও ডিবি মোতায়েন রয়েছে। যে কোন ধরনের অরাজক পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে মসজিদের ভেতরে তল্লাশি শেষে মুসল্লি বা অন্যদের প্রবেশ করানো হচ্ছে। তাবলিগ জামাতের মুরুব্বীদের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে সর্বক্ষণ যোগাযোগ অব্যাহত আছে। বেলা তিনটার দিকে পরিস্থিতির বিষয়ে আলোচনা করতে তাবলিগ জামাত এবং হেফাজত নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান। দুপুর থেকেই পরিস্থিতি নিরসনে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তা ব্যক্তিসহ সংশ্লিষ্টরা। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে উপস্থিত হন বেফাকের মহাসচিব আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাওলানা আশরাফ আলী, যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা মাহফূজুল হক, গাজীপুরের কাপাসিয়ার দেওনা পীর সাহেব অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান ও মাওলানা সা’দের পক্ষে বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের শূরা সদস্য মাওলানা সৈয়দ ওয়াসিফ ইসলামের নেতৃত্বে তিনজন মুরব্বী। এ ছাড়া পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক, র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়াসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন। ধর্ম সচিব আনিছুর রহমানও বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি পৌঁনে চারটার দিকে বেরিয়ে যান। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, মাওলানা সাদ এজতেমা ময়দানে যাবেন না। সুবিধা মতো সময়ে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাবেন। তবে যতদিন বাংলাদেশে থাকবেন, ততদিন তিনি কাকরাইল মসজিদেই থাকবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, এজতেমায় আখেরি মোনাজাত কে পরিচালনা করবেন তা ঠিক করবেন তাবলিগ জামাতের মুরুব্বীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, মাওলানা সাদ কান্ধলভীর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের তাবলিগ জামাত এখন স্পষ্টত বিভক্ত। কওমী সমর্থিত একটি গ্রুপ বিশ্ব এজতেমায় তার যোগদানের পক্ষে। আরেকটি পক্ষ বিশ্ব ইজতেমায় তার যোগদানের বিপক্ষে। এ নিয়ে চরম বিরোধ চলছে। জানা গেছে, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে একটি উপদেষ্টা কমিটি করা হয়েছে। ওই উপদেষ্টা কমিটির সদস্য কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আল্লামা আব্দুল কুদ্দুছ। তিনি জানান, উপদেষ্টা কমিটির পাঁচ সদস্যই মনে করেন, মাওলানা সাদের চলে যাওয়াই উচিত। এই কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, মালিবাগ শারাইয়া মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী, যাত্রাবাড়ী জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা মাহমুদুল হাসান, শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ ও মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মালেক। মাওলানা সাদ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বে থাকা বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ জানান, তারাও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছেন এজতেমায় যাচ্ছেন না মাওলানা সাদ। মাওলানা সাদ পবিত্র কোরআনের অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন। রাসুল (স) সম্পর্কে বিষোদগার ছড়াচ্ছেন। মাওলানা সাদ গত কয়েক বছরও বাংলাদেশে এজতেমায় যোগ দিয়েছেন এবং ইমামতি করেছেন। তখন কোন আপত্তি না ওঠলেও এখন আপত্তি ওঠার বিষয়ে তিনি বলেন, আগে থেকেই এ নিয়ে সমালোচনা চলছিল। তাকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে যাতে তিনি কোরান সর্ম্পকে ভুল ব্যাখ্যা না করেন। দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকেও তাকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু উনি তার অবস্থানে অনড়। শান্তি ও সম্প্রীতির বাণী প্রচারের জন্য সুপরিচিত তাবলিগ জামাতের কর্মীদের অনেকটা নজিরবিহীনভাবে রাজপথে বিক্ষোভে নামার সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের ইন্ধন এবং সরাসরি অংশ নেয়ার বিষয়ে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ওলামায়ে কেরাম, যারা ইসলামী ধ্যান ধারণা ধারণ করেন, তারাই আন্দোলন করছেন। এর সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এ দিকে মাওলানা সা’দের পক্ষে থাকা তাবলিগের মুরুব্বী মাওলানা সৈয়দ ওয়াসিফ বলেন, যারা আন্দোলন করছেন, বিশৃঙ্খলা করছেন, হুজুরের বিরোধিতা করছেন, তাদের সঙ্গে পুলিশের মধ্যস্থতায় বৈঠক হয়েছে।
×