ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তাপমাত্রা বাড়লেও দাপট কমছে না শীতের

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১২ জানুয়ারি ২০১৮

তাপমাত্রা বাড়লেও দাপট কমছে না শীতের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও রয়ে গেছে শীতের দাপট। টানা শৈত্যপ্রবাহে চরে দুর্ভোগে দেশবাসী। আবহাওয়ার এমন অবস্থা আরও এক সপ্তাহ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তারা বলছেন, কিছুদিন পর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে, তবে চলতি মাসজুড়ে অনুভূত হতে পারে মাঝারি ধরনের শীত। বৃহস্পতিবারও তাপমাত্রা বাড়লেও মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকে। ঘন কুয়াশা ও ঠা-া বাতাসের কারণেই শীতের তীব্রতা হ্রাস পাচ্ছে না। শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আবার বেড়েছে। ঘন কুয়াশায় ইরি-রোরো ধানের চারাসহ শীতকালীন ফসল হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। তীব্র শীতে ছিন্নমূল ও গরিব মানুষের কষ্টের সীমা নেই। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হয় ব্যাহত। হাসি ফুটে ওঠে গরম কাপড় বিক্রেতাদের মুখে। গরম কাপড়ের দাম বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সকালের দিকে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক পথে যানবাহন চলাচল করছে হেড লাইট জ্বালিয়ে। ঘন কুয়াশায় শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ফেরি সার্ভিস ৮ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার দিনভর রাজধানীতে অনুভূত হয় মাঝারি ধরনের শীত। বয়ে যায় ঠা-া বাতাস। গত বছর শীত মৌসুমে রাজধানীতে তেমন শীত অনুভূত হয়নি। সারা শীত মৌসুমে মাত্র কয়েকদিন মাঝারি ধরনের শীতের দাপট ছিল। কিন্তু এ বছর রাজধানীবাসীরাও তীব্র শীতের কবলে পড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীতেও তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার কিছুক্ষণের জন্য সূর্যের আলোর দেখা পেলেও তেমন তেজ ছিল না। দিনভর মাঝারি ধরনের শীত অনুভূত হয়। নগরীর গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। চড়া দামে বিক্রি হয় গরম কাপড়। দিনের বেলাতেও প্রত্যেক মানুষের শরীর ছিল গরম কাপড়ে ঢাকা। মাঝে মধ্যেই বয়ে যায় ঠা-া বাতাস। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শীতের তীব্রতা যেন বাড়তে থাকে। কমতে থাকে পথচারীদের সংখ্যাও। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘন কুয়াশা, দিনের তাপমাত্রা হ্রাস এবং ঠা-া বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। ঘন কুয়াশায় উপরে উঠতে পারছে না জলীয়বাষ্প। শিশির ভেজা মাটির শুকিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকছে না। মাঝে মধ্যে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও উত্তাপ থাকে না। দিনের অধিকাংশ সময় কুয়াশার চাদরে মোড়ানো থাকে আকাশ। এমন অবস্থা জানুয়ারির বাকি দিনগুলোতেও চলতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা টেকনাফে ২৫.৮ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা যশোরে ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। আর রাজধানীর সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ২২ ও ১১.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ফেরি সার্ভিস বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। এতে উভয় তীরে সহস্রাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। মাঝ নদীতে যানবাহনসহ আটকা পড়ে তিনটি ফেরি। দীর্ঘ সময় পারপারের অপেক্ষায় থেকে যাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। কুয়াশা কেটে যাওয়ার পর আটকে থাকা ফেরি গন্তব্যে পৌঁছে এবং যানবাহনগুলো আবার পারাপার শুরু হয়েছে। কুয়াশার কারণে লঞ্চ ও স্পীড বোট বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে যাত্রীদের জন্য নির্মিত পেসেনজার সেটের ভেতরে যাত্রীরা কোন ক্রমেই বসতে পারেনি অবৈধ দোকানপাটের জন্য। আর এ সবের জন্য বিআইডব্লিউটির এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাকেই দায়ী করেন এ রুটে নিয়মিত চলাচলরত যাত্রীরা। এ বিষয়ে মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির টুআইসি এসআই জাকির হোসেন জানান, ৮ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা বিড়ম্বনায় পড়ে। আটকে পড়া যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের নৌ পুলিশের সদস্যরা বিরামহীন ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এখন যানজট কমতে শুরু করেছে। নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা থেকে জানান, গত দু’সপ্তাহ ধরে গাইবান্ধায় শৈত্যপ্রবাহ ও উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে দরিদ্র মানুষেরা অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। সেই সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঘন কুয়াশা পড়ছে। ফলে শস্যে ক্ষেতের শস্য ফুল ঝরে পড়ছে এবং শীতকালীন সবজিগুলোতে ছত্রাক রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এছাড়া প্রচ- ঠা-ার কারণে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে। দুপুর ১টার পর সূর্যের দেখা মিললেও ঠা-া কমে না। এতে করে জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এদিকে প্রচ- শীতের কারণে শহরের পুরনো কাপড়ের দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ফলে আসন্ন ইরি-বোরো চাষ পিছিয়ে ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্টাফ রিপোর্টার যশোর অফিস থেকে জানান, অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যশোরের জনজীবন। গত এক সপ্তাহ ধরে কনকনে শীতে জবুথবু সাধারণ মানুষসহ প্রাণীকূল। প্রতিদিনই ৫ থেকে ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে তাপমাত্রা। সাধারণ মানুষ জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে রাস্তায় বা বাড়ির আঙিনায় আগুন জ্বেলে ছোট-বড় সবার জড়ো হওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ছে। গ্রামাঞ্চলে গরু-ছাগলকে উলের কাপড় কিংবা মোটা বস্তা দিয়ে ঢেকে ঠা-া নিবারণের প্রচেষ্টা চলছে। নিজস্ব সংবাদদাতা মাগুরা থেকে জানান, শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় মাগুরায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতে জবুথবু অবস্থা। বৃহস্পতিবার হিমেল হাওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছে। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে। সংবাদদাতা মেহেরপুর থেকে জানান, মেহেরপুরে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও কমেনি শীতের তীব্রতা। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বাড়িয়েছে আরও কয়েকগুন। স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামে টানা শৈত্যপ্রবাহে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। গরম কাপড়ের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে অনেক দরিদ্র মানুষ।
×