ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী হয়ে এখন যা করতে পারি না

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১২ জানুয়ারি ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী হয়ে এখন যা করতে পারি না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বছর কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি মন্ত্রণালয়ে অফিস করতে সচিবালয়ে এসেছিলেন। কাজ শেষে প্রধানমন্ত্রী নেমে আসার ঠিক আগমুহূর্তে নিরাপত্তারক্ষীরা উপস্থিত সকলকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছিলেন। স্বাভাবিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার স্বার্থে সকলে দূরেই অবস্থান নিলেন। প্রধানমন্ত্রী নামলেন নিরাপত্তা বাহিনীর সাজসজ্জাকে উপেক্ষা করে খানিকটা এগিয়ে এসে সকলের উদ্দেশে হাত নাড়লেন, হাসলেন এরপর গাড়িতে চড়লেন। এই হচ্ছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তবে সবসময় কি আর এসব হয়ে ওঠে। মন চাইলেই তো আর দেশের প্রধানমন্ত্রী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতে পারেন না। চাইলেই তো নেমে পড়তে পারেন না লঞ্চ বা ফেরিঘাটে। নিশ্চয়ই মিস করেন লঞ্চঘাটের পিয়াজু ফেরিঘাটের মিষ্টি। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে প্রধানমন্ত্রীও আক্ষেপ করে বলেন ‘প্রধানমন্ত্রী হয়ে কপাল পুড়েছে’। টানা নয় বছর ধরে সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের বেঁধে দেয়া সীমা সবসময় অতিক্রম করা সম্ভব হয় না। গণভবনে বৃহস্পতিবার উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চাঁদপুর জেলায় ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী হাসতে হাসতে শোনান সেসব আক্ষেপের কথা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের অনেক ইচ্ছাকেও জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে। আগে সড়ক পথে বিভিন্ন জেলায় সফরে গেলেও এখন অধিকাংশ সময়েই তাকে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রী হয়ে তো কপাল পুড়ে গেছে। আগে যে রাস্তায় যেতাম, তাও নাই, আবার আকাশ দিয়ে উড়ে যেতে হয়। আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার ফলে রাস্তার মজাটাই পাওয়া যাচ্ছে না। এটাই হলো দুর্ভাগ্য। তিনি গণমানুষের নেত্রী। দেশের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত সবখানেই তার পায়ের ছাপ রয়েছে। জেলা তো দূরের কথা অনেক ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতাকেও বলতে শোনা যায় প্রধানমন্ত্রী তার নামটি জানেন। কোনদিন দেখা হলে নাম ধরেই ডাকেন। এই অর্জন নিশ্চয়ই একদিনের নয়। বহুদিন লঞ্চে ফেরিতে করে ঘুরতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এখনও তাই যাত্রাপথে ফেরি কিংবা লঞ্চঘাটে মিষ্টি, পেঁয়াজুর মতো মুখরোচক খাবারকেও তিনি মিস করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক ফেরিঘাটে থেমে থেমে সেখানে কোন ফেরি ঘাটে কোন মিষ্টি ভাল, কোন খাবারটা ভাল, কোথাকার কোন পেঁয়াজুটা ভাল, সে খবর পেতাম। এখন সেটা আর কপালে হয় না। সেটাই হলো দুর্ভাগ্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সময় দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ছয় বছর প্রবাসে থাকার পর প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে বাবার দল আওয়ামী লীগের হাল ধরেন শেখ হাসিনা। তারপর এখন তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন উন্নত দেশের মানুষ হয়ে ওঠার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ এখন বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। পদ্মা সেতু থেকে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, মেট্রো রেল থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, এলএনজি টার্মিনাল থেকে নতুন তেল শোধনাগার নির্মাণ হচ্ছে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সত্যিকার অর্থে বদলে যাবে বাংলাদেশ।
×