ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সেমিনারে তথ্যমন্ত্রী

গণমাধ্যম জনগণের কথা বলবে, জনগণকে প্রতারিত করবে না

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১২ জানুয়ারি ২০১৮

গণমাধ্যম জনগণের কথা বলবে, জনগণকে প্রতারিত করবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘সংবাদপত্র জনগণের কণ্ঠস্বরের পত্র। কখনই তা ভীতিপত্র, উস্কানিপত্র বা চরিত্রহননপত্র নয়। গণমাধ্যম জনগণের কথা বলবে, জনগণকে প্রতারিত করবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) সম্মেলন কক্ষে ম্যানেজম্যান্ট এ্যান্ড রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (এমআরডিআই) এবং পিআইবি’র যৌথ আয়োজনে ‘সংবাদবোধ ও পাঠকের ধারণা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। পিআইবি’র মহাপরিচালক মোঃ শাহ আলমগীরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। প্রধানবক্তা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক অনুষ্ঠানে মূলবক্তব্য উপস্থাপন করেন। একাত্তর টিভি’র বার্তা পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন এমআরডিআই-এর নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান। গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যম ও গণতন্ত্রের অধিকার আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে যে, সামরিক-সাম্প্রদায়িক চক্র রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছে, তাদেরকে ও পৃষ্ঠপোষকদের দমন করতে হবে। একইভাবে গণমাধ্যম থেকেও হলুদ সাংবাদিকতা নির্মূল করতে হবে। নীতি ও দায়িত্ববোধচর্চা করুন, শিশু ও নারীদের বিষয়টি বিবেচনায় রাখুন। গণমানুষের অধিকার খর্ব না করে গণমাধ্যমের অধিকার প্রয়োগ করুন। বস্তুনিষ্ঠ হোন, সঠিক সংবাদই বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ।’ ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য সরকার কাজ করছে- উল্লেখ করে ইনু বলেন, শেখ হাসিনার সরকার অবাধ গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ হিসেবে পত্র-পত্রিকার ডিক্লারেশন অব্যাহত রেখেছে। বেসরকারী টেলিভিশন, রেডিও চালু করেছে। সরকারকে উন্নয়মূলক কাজ করতে হচ্ছে, অন্যদিকে জঙ্গী দমন করতে হচ্ছে। অপরদিকে একটি বড় রাজনৈতিক দল যুদ্ধাপরাধীদের ডাকা হরতালে সমর্থন দিচ্ছে।’ সেমিনারে জানানো হয়, এমআরডিআই সম্প্রতি ইউনিসেফ বাংলাদেশ-এর সহায়তায় সংবাদবোধ এবং পাঠকের ধারণা বিষয়ক একটি গবেষণা সম্পন্ন করেছে। এই গবেষণায় সাংবাদিক, সিদ্ধান্তগ্রহীতা, নীতি নির্ধারক, রাজনীতিবিদ, একাডেমিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, অভিভাবক এবং তরুণ পাঠকের মতামত গ্রহণ করা হয়। গবেষণা পদ্ধতিতে ঢাকাসহ ৬টি বিভাগে প্রশ্নমালা জরিপে ১৪০ জন, ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় ৬৬ জন, বিশেষজ্ঞ সাক্ষাৎকারে ৩৫ জন এবং মতবিনিময়ে ৬০ জন অংশ নেন। প্রকাশিত ও প্রচারিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঠক বা দর্শকের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে মোটামুটি বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন ২৪ শতাংশ, কোন কোন ঘটনার বিবরণ মনে সন্দেহ তৈরি করে ৫৮ শতাংশের এবং পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য মনে করে ১৮ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে প্রতিবেদনের সূত্রের ব্যবহার সম্পর্কে গবেষণার তথ্য হল, নির্ভরযোগ্য বা বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা গেছে বলা হয় ৪৯ শতাংশ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সূত্রের উল্লেখ থাকে না, ঢালাওভাবে ঘটনার বিবরণ দেয়া হয় ২৭ শতাংশ এবং ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তির মতামত উপস্থাপন করা হয় ৪ শতাংশ। তবে গবেষণার ফলাফল ও পদ্ধতি নিয়ে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক রফিকুজ্জামান দ্বিমত পোষণ করে আরও বৃহৎ পরিসরে এই গবেষণা করলে ভাল হতো বলে মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবাদপত্রের চ্যালেঞ্জ নানামুখী। গণতন্ত্র যেমন বারবার হোঁচট খাচ্ছে, গণমাধ্যমও তাতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ রকম বৈরী পরিবেশে পাঠকদের চাহিদা অনুযায়ী পত্রিকা করা খুবই কঠিন কাজ। সেইসঙ্গে শিশুদের জন্য এবং শিশু সংক্রান্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে পাঠকদের ধারণা, তাদের প্রত্যাশা এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া মেনে কাজ করা গণমাধ্যমকর্মীদের দায় এবং দায়িত্ব।’ সেমিনারে প্রধানবক্তা হিসেবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘স্বাধীনতার পর আশির দশকে দেশে পত্র-পত্রিকার সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। বর্তমানে অনলাইন, রেডিও, টিভি মাধ্যমের দাপটে সংবাদপত্র চ্যালেঞ্জ পড়েছে। কারণ পত্র-পত্রিকার সংখ্যা বাড়ছে সেইসঙ্গে বাড়ছে প্রচারসংখ্যাও। কিন্তু সংখ্যা বাড়লেই যে পত্রিকার বা সংবাদের মান ভাল হচ্ছে তা কিন্তু নয়। সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিকতা রোধ করতে হবে। সামাজিক বিশাল দায় সংবাদপত্রসহ গণমাধ্যমের ওপর। দায়ের সঙ্গে দায়িত্বও। দায়-দায়িত্ব এবং পেশাদারিত্ব এ তিনটির সঙ্গে এসে গেছে নীতি-নৈতিকতার প্রশ্ন। যে কারণে নীতিমালার মধ্যেও আসতে হচ্ছে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীদের।’ এমআরডিআই এর নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান বলেন, ‘পাঠকদের সংবাদ-বোধ বাড়ানো এবং সংবাদসচেতন করার লক্ষ্যে এমআরডিআই ইউনিসেফ বাংলাদেশ-এর সহায়তায় সংবাদবোধ এবং পাঠকের ধারণাবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা কাজ করে যাচ্ছে। গণমাধ্যমকর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি পাঠক ও দর্শকদের মধ্যে অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে তাদের সংবাদবোধ বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। যদি পাঠক ও শ্রোতা বুঝতে পারেন যে কোন সংবাদ প্রতিবেদনে নীতি-নৈতিকতার লঙ্ঘন হয়েছে, তাহলে প্রতিবেদনের মান উৎকর্ষ হবে।’ সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আলী আল রাজী, দি ইন্ডিপেন্ডট-এর নির্বাহী সম্পাদক শামীম জাহেদী, এটিএন বাংলার জ.ই মামুন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির আশিষ সৈকত, ইউএনবি’র নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, যশোর থেকে প্রকাশিত গ্রামের কাগজের সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন বক্তব্য দেন।
×