ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চীন সফরে ম্যাক্রোঁ তুলে ধরলেন ট্রাম্পের সম্পূর্ণ বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি

নতুন সম্পর্কের যুগে চীন-ফ্রান্স

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১১ জানুয়ারি ২০১৮

নতুন সম্পর্কের যুগে চীন-ফ্রান্স

চীনের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এখন চীন সফর করছেন। সফরকালে তিনি চীনের জন্য উপঢৌকন নিয়ে যান। যার মধ্যে ভিসুভিয়াস নামে খয়েরি রংয়ের একটি ঘোড়াও রয়েছে। ঘোড়াটি বাছাই করা হয়েছে প্রেসিডেন্টের জন্য ঘোড়ার বিশেষ সংগ্রহশালা থেকে। চীনের সঙ্গে তিনি নতুন সম্পর্ক গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে এ সফর করছে। নিউইয়র্ক টাইমস। তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে গিয়ে ম্যাক্রোঁ চীনা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করেন। এ কথা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ধরনের নেতা তিনি সেরকম নন। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে তার চিন্তাধারা ভিন্ন। ম্যাক্রোঁ এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চলতি সপ্তাহে যে আলোচনায় বসেন। এই আলোচনায় বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দুই নেতা যে দৃষ্টিভঙ্গী প্রকাশ করেন সেটি ট্রাম্পের চেয়ে স্পষ্টতই আলাদা ছিল। তারা মুক্ত বাণিজ্য এবং সংরক্ষণবাদের বিপক্ষে কথা বলেন। তারা বহু পাক্ষিকতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং জাতিসংঘের মতো প্রতিষ্ঠানের প্রশংসা করেন। যুক্তরাষ্ট্র যখন কার্বন বা গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থেকে পিঠটান দিয়েছে তখন চীনা ও ফরাসী নেতৃবৃন্দ জলবায়ু পরিবর্তন প্রশ্নে একযোগে কাজ করে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ম্যাক্রোঁ সোমবার কিছু সময় চীনের মান্ডারিন ভাষায় কথা বলেন। তিনি ট্রাম্পের প্রিয় উক্তি ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইনের’ অনুকরণে ‘মেক আওয়ার প্ল্যানেট গ্রেট এগেইন’ মান্ডারিন ভাষায় বলেন। ম্যাক্রোঁ শি’র নেতৃত্বে চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ নামে নতুন বাণিজ্য পথ নির্মাণের উদ্যোগকে সমর্থন করেছেন। ১ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিশ্ব বাণিজ্যের গতিপথ পাল্টে যাবে। প্রাচীন বাণিজ্যপথ সিল্করোডের অনুকরণে আধুনিক বাণিজ্য পথটি এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপ ও আফ্রিকাকে সংযুক্ত করবে। শি মঙ্গলবার বেজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে বক্তৃতাকালে ‘বহু পাক্ষিকতা সংরক্ষণ’ এবং মুক্ত বিশ্ব বাণিজ্য রক্ষার ওপর জোর দেন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যখন থেকে চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতার অভিযোগ আনতে শুরু করেছেন তখন থেকেই শি এ কথার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে যাচ্ছেন। সাংহাই ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান স্টাডিজের পরিচালক ডিং চুন বলেন, চীন ও ফ্রান্সের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন তৈরি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কারণ দুদেশের নেতৃবৃন্দই একই রকম দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করেন। ধ্যান ধারণার দিক থেকে তারা উভয়ই ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ দর্শনের বিপরীতে অবস্থান করছেন। উভয়ই মুক্ত বাণিজ্যের সমর্থক। বিশ্লেষকরা বলছেন, ম্যাক্রোঁ নিজেকে চীনের একজন নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। তিনি এমন এক সময় এ উদ্যোগ নিয়েছেন যখন পশ্চিমের অধিকাংশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্ঙ্খৃলা বিরাজ করছে। ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকা এখন বিশ্বমঞ্চ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে। অন্যদিকে ব্রিটেন ও জার্মানি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সঙ্কট নিরোসনে ব্যস্ত রয়েছে। এ অবস্থায় ম্যাক্রোঁ যেন চীনের কাছে পশ্চিমা বিশ্বকে তুলে ধরছেন। তিনি চান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চীনকে এক গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে, প্যারিস ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা প্যারিস পো’র সিনিয়র গবেষক জ্যঁ ফিলিপে বেজা এই মন্তব্য করেছেন। তবে ম্যাক্রোঁ যে রকম দ্রুততার সঙ্গে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে এর সফলতা নিয়ে বেজার সংশয় রয়েছে। কারণ চীন সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক অন্যান্য ইস্যু নিয়ে ম্যাক্রোঁ কিছু বলেননি। দক্ষিণ চীন সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি সামরিক স্থাপনা বসিয়ে চীন প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছে। এছাড়া চীনের মানবাধিকার রেকর্ড নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সফরকালে ম্যাক্রোঁ এসব বিষয় উত্থাপন করেননি।
×