ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশের জবাবদিহি

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১১ জানুয়ারি ২০১৮

পুলিশের জবাবদিহি

পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, পুরস্কৃত হওয়ার পাশাপাশি জবাবদিহি করতে হবে পুলিশকে। এর পাশাপাশি জঙ্গী, সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের সক্রিয় ভূমিকাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। পুলিশ বাহিনীকে সর্বদাই মানবাধিকার ও আইনের রক্ষক এবং জনবান্ধব হয়ে কাজ করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। ওদিকে রাষ্ট্রপতিও সর্বস্তরের জনসাধারণকে হয়রানিমুক্ত সেবা প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের দায়িত্ব ও ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বলার অবকাশ নেই। এও সত্যি যে, বিপুল জনসংখ্যার একটি দেশে সীমিত জনবল ও সীমাবদ্ধ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কাজটি কঠিন। এরপরও পুলিশ-র‌্যাব ও গোয়েন্দা বাহিনী যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে ভাল তাতে সন্দেহ নেই। রাজনৈতিকভাবে পরিস্থিতি স্থিতিশীল বলেই হয়ত তা সম্ভব হচ্ছে। তবে আগামীতে জাতীয় ও আঞ্চলিক নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত জোটসহ অপশক্তির ইন্ধনে তা যে আবারও জ্বালাও-পোড়াওসহ অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। ইদানীং রাজধানীতে চুরি, ছিনতাই-রাহাজানি যে বেড়েছে তাও সত্য। এসব ক্ষেত্রে পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীকে আরও তৎপর ও নজরদারি বাড়াতে হবে। সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়েছে বহুলাংশে। পুলিশের এক্ষেত্রে সবিশেষ করণীয় রয়েছে। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধসহ জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তা প্রশংসিত হয়েছে। এর জন্য প্রাপ্তিও মিলেছে বৈকি। সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশের দুজন চৌকস অফিসারকে নিয়োগ দিয়েছে ইন্টারপোল, জঙ্গী দমনের স্বীকৃতি হিসেবে। এর জন্য দেড় শতাধিক পুলিশকেও পুরস্কৃত করা হয়েছে। তাই বলে পুলিশের নেতিবাচক ভূমিকাও কিছু কম নেই। সম্প্রতি ডিআইজি লেবেলের একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারীঘটিত কেলেঙ্কারির সচিত্র অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে কতিপয় পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যাপক চাঁদাবাজিসহ ছিনতাই রাহাজানির অভিযোগও আছে। জনসাধারণকে নানা কারণে অহেতুক হয়রানির অভিযোগটি তো প্রায় ওপেনসিক্রেট। গণমাধ্যমে প্রচার প্রচারণা হলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ যে সময় সময় ব্যবস্থা গ্রহণ করে না তা নয়। গত বছর সাঁওতালপল্লীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তদন্তে পুলিশের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। তবে এসব ক্ষেত্রেই শাস্তি প্রধানত প্রত্যাহার ও ক্লোজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। নকল ও ভুয়া ডিবি পুলিশের খবরও আছে। অনেকটা এই প্রেক্ষাপটেই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি প্রশংসিত হয়ে উঠেছে। মোট কথা জনসাধারণকে হয়রানিমুক্ত সেবার পাশাপাশি সর্বস্তরে পুলিশের জবাবদিহির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থাসহ সব রকম জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্র মতবাদের কোন স্থান নেই। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের হাত ধরে দেশে ধর্মীয় রাজনীতি ও জঙ্গীবাদের উদ্ভব ঘটে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে কুখ্যাত জামায়াত-শিবির হানাদার পাকিস্তান সেনাবহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মাধ্যমে প্রসার ঘটায় সন্ত্রাসী কার্যক্রমের। একাত্তরে পরাজিত হলেও পঁচাত্তরপরবর্তী সামরিক শাসনপুষ্ট সরকারগুলোর সহায়তায় দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী কার্যক্রমের বিকাশ ঘটতে থাকে। তবে আশার কথা এই যে, এ দেশের মাটিতে তা কখনোই শিকড় গেঁড়ে বসতে পারেনি এবং জনসমর্থন পায়নি। ফলে দেশী-বিদেশী গডফাদারসহ আন্তর্জাতিক সহায়তায় সময়ে সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ব্যর্থ হয়েছে চূড়ান্তভাবে। গুলশান, শোলাকিয়া ও অন্যান্য স্থানে ছোটবড় কয়েকটি হামলার পর এদেশীয় জঙ্গীদের সঙ্গে কুখ্যাত আইএস, আল কায়েদা, আল শামস, জইশ-ই-মোহাম্মদ, তালেবান ইত্যাদির সঙ্গে যোগাযোগ ও মদদের কথা দেশে-বিদেশে উচ্চারিত হলেও সেসব কখনোই প্রমাণিত হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। তবু এতে আত্মপ্রসাদের কিছু নেই। দেশীয় জঙ্গীদের অস্ত্র ও অর্থের উৎসসহ উৎসাহদাতা, মদদদাতাসহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বিষয়টি সর্বদাই নজরদারির দাবি রাখে। অর্থাৎ এটি একটি নিরন্তর ও অব্যাহত প্রক্রিয়া। জঙ্গী সন্ত্রাসীরা শুধু অস্ত্র ও বোমাই নয়, বরং প্রযুক্তি ব্যবহারেও অত্যন্ত দক্ষ। সে ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে টেক্কা দিতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সর্বদাই সতর্ক ও তৎপর হতে হবে। সর্বোপরি সর্বস্তরে সর্বপর্যায়ে তৈরি করতে হবে জনসচেতনতা। টঙ্গী ও কুমিল্লায় জনপ্রতিরোধের বিষয়টি লক্ষণীয়। জঙ্গী ও সন্ত্রাসী তৎপরতা দমনে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যের আহত ও নিহত হওয়ার খবরও আছে। সে অবস্থায় র‌্যাব-পুলিশ- গোয়েন্দা বাহিনীকে জনজীবন ও দেশ সুরক্ষায় সর্বদা তৎপর ও সক্রিয় থাকতে হবে। সপ্তাহ পালন উপলক্ষে পুলিশের প্রতি এই হোক জনপ্রত্যাশা।
×