ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

‘অচলায়তনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়াই করেছেন হুমায়ুন আজাদ’

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১১ জানুয়ারি ২০১৮

‘অচলায়তনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়াই করেছেন হুমায়ুন আজাদ’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘অচলায়তনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়াই করেছেন হুমায়ুন আজাদ। এ কারণেই মাত্র ৫৭ বছর বয়সে তার জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে। অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী লেখক ছিলেন তিনি। যার শুরু ‘অলৌকিক ইস্টিমার’ কবিতা দিয়ে। এরপর থেকে ‘পেরোনোর কিছু নেই’ পর্যন্ত এক চেতনার জগত তিনি সৃষ্টি করেছেন। দুঃসাহসী-অকুতোভয় এক মানুষ ছিলেন তিনি। এ কারণেই তার মৃত্য হয়’-কবি ও লেখক হুমায়ুন আজাদ স্মরণে সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে প্রথাবিরোধী কবি ও লেখক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ স্মরণে সেমিনারের আয়োজন করা হয় বুধবার বিকেলে। অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন লেখক কন্যা মৌলি আজাদ, কবি মারুফুল ইসলাম, কবি তুষার দাশ ও প্রকাশক ওসমান গনি। সভাপতিত্ব করেন কবি স্থপতি রবিউল হুসাইন। জাদুঘর আয়োজিত এ সেমিনারে ‘হুমায়ুন আজাদ এবং বাঙালীর প্রগতি মনস্কতার প্রতিকৃতি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি চঞ্চল আশরাফ। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, হুমায়ুন আজাদের সাহিত্যকর্ম পড়ে এটা নিশ্চিত হওয়া সহজ যে, তার জীবনদৃষ্টি ও সৌন্দর্যবোধ পারস্পরিক সাযুজ্য ও ভারসাম্যকে মান্য করেনি। ‘অলৌকিক ইস্টিমার’ থেকে শুরু করে যে চেতনার জগত তিনি সৃষ্টি করেছেন ‘পেরোনোর কিছু নেই’ পর্যন্ত, তাতে পরিভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয় তারই এ উচ্চারণ: ‘কিছুই অপবিত্র নয়, যেমন কিছুই পবিত্র নয়; কিন্তু সবকিছুই সুন্দর, সবচেয়ে সুন্দর এই তাৎপর্যহীন জীবন। তিনি বাংলাদেশের প্রধান প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারবিরোধিতা, নিরাবরণ যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতি বিষয়ে নির্মম সমালোচনামূলক বক্তব্যের জন্য ১৯৮০-র দশক থেকে ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি সৌন্দর্য আর সত্যকে সমার্থক ও একাকার করে দেখেছেন। হুমায়ুন আজাদের গভীর-তীব্র অনুরাগ সুন্দরের দিকে, জীবনের প্রতি। কিন্তু সমাজে প্রচলিত সেই সব ধারণা ও বিশ্বাসে তিনি আঘাত হেনেছেন, যেগুলো মানুষের অগ্রগমনের প্রবল প্রতিপক্ষ। এমনকি সামজিক সম্পর্কের প্রচলিত ছকের অন্তঃসারশূন্যতাও হয়েছে তার আক্রমণের বিষয়। এভাবে যদি আমরা রচনাগুলো পড়ে চেনার চেষ্টা করি তার সংবেদনশীলতা বা চেতনার চেহারা-তাতেই পেয়ে যাব বিশ শতকের শেষার্ধের এই মননশীল লেখকের সাহিত্যের রূপ। যিনি সভ্যতা, মানবতার অগ্রগমনের পথে লড়াই করতে গিয়ে নিজের প্রাণ পর্যন্ত উৎসর্গ করেছেন। লেখক কন্যা মৌলি আজাদ বলেন, গদ্যের জন্য বেশি জনপ্রিয় হলেও হুমায়ুন আজাদ আমৃত্যু কাব্যচর্চা করে গেছেন। সমসাময়িক কালের পরিব্যাপ্ত হতাশা, দ্রোহ, ঘৃণা, বিবমিষা, প্রেম ইত্যাদি তার কবিসত্তার প্রধান নিয়ামক। কবি তুষার দাশ বলেন, হুমায়ুন আজাদ তার বাসায় প্রিয় বেড়ালের মৃত্যুতে পর্যন্ত কেঁদেছেন এটা হয়ত অনেকে জানেন না। প্রচ- আত্মবিশ্বাসী এক লেখক ছিলেন তিনি। আমৃত্যু অচলায়তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা ছিল তার উদ্দেশ্য। এ কারণেই মৌলবাদীদের হাতে তার মরতে হলো। প্রকাশক ওসমান গনি বলেন, হুমায়ুন আজাদের লেখা বিশ বছর আগের বই নিয়েও এখন কথা হয়। তিনি বেঁচে থাকলে আরও কতকিছু লিখতেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার লেখা সোচ্চার থাকত। তার সব কিছু জেনে-শুনেই মৌলবাদীরা তাকে হত্যা করেছে। সভাপতির বক্তব্যে কবি রবিউল হুসাইন বলেন, নাটক বাদে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় হুমায়ুন আজাদের কাজ রয়েছে। তার কথাগুলো সত্যের নির্যাস ছিল। কখনও মিথ্যার আশ্রয় নিতেন না। ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে আগামীকাল শুরু হচ্ছে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ॥ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে আগামীকাল শুক্রবার শুরু হচ্ছে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বুধবার বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিং করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেন, বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি সহস্রাব্দ প্রাচীন। এ সমৃদ্ধ সংস্কৃতি দেশব্যাপী আরও প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে এবং বর্তমান সরকারের বিগত ৪ বছরের উন্নয়ন ও সাফল্যগাথাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে এ আয়োজন করা হয়েছে। এ আয়োজনের প্রতিপাদ্য ‘পিতার স¦প্নে কন্যার আহ্বানে কোটি মানুষের মিছিল চলেছে মুক্তির অভিযানে’। বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়ে চলবে রাত ১১টা পর্যন্ত। আজ থেকে িি.িভড়ঁৎঃযুবধৎপবষবনৎধঃরড়হ.পড়স-এ ঢুকে যে কেউ বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করা ত্রিশ হাজার জন উক্ত অনুষ্ঠান উপভোগের সুযোগ পাবেন। অনুষ্ঠানের দিন দুপুর ২টায় আর্মি স্টেডিয়ামের প্রবেশ গেটসমূহ খোলা হবে এবং সন্ধ্যা ৭টার পর প্রবেশ গেটসমূহ বন্ধ করে দেয়া হবে। বর্তমান সরকারের ৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বিটিভি ও দেশটিভির মাধ্যমে সরাসরি অনুষ্ঠানস্থলে বড় পর্দায় প্রদর্শন করা হবে। তাছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালার ফাঁকে ফাঁকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর ও সংস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রামাণ্যচিত্র বড় পর্দায় প্রদর্শন করা হবে।
×