ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

টবে আমড়া চাষ

খেতে সুস্বাদু- ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগ প্রতিরোধ করে

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১১ জানুয়ারি ২০১৮

খেতে সুস্বাদু- ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগ প্রতিরোধ করে

ডি. এম তালেবুন নবী ॥ টক-মিষ্টির মিশেল, খেতে সুস্বাদু। অনেকে একে বিলেতি আমড়া বলেও চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন। ভেষজ গুণসমৃদ্ধ এই আমড়া লবণ মাখিয়ে খেতে বেশ লাগে। যদিও আমাদের দেশে এটিই ‘বরিশালের আমড়া’ বলে পরিচিতি পেয়েছে। সব মিলিয়ে ১২ প্রজাতির আমড়া রয়েছে। আমড়া মাঝারি আকারের পত্রছরা বৃক্ষে ধরে। সেই আমড়াকে গবেষণাগারে ফেলে কৃষি বিজ্ঞানীরা ২৫/৩০ মিটার লম্বা গাছকে নিয়ে এসেছে একেবারে টবে। প্রচ- চাহিদা সামনে রেখে ছোট ছোট গাছে কিভাবে এই মিষ্টি আমড়া নিয়ে আসা সম্ভব তার উপর গবেষণা করতে গিয়ে বিশাল সাফল্য নিয়ে এসেছেন এই বিজ্ঞানীরা। এখন ৪/৫ ফুট লম্বা গাছে আমড়া আসছে। এমনকি যারা ছাদ কৃষিতে আকৃষ্ট হয়েছেন বা টবে গাছ করার অভ্যাস রয়েছে তারাও দারুণভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েছেন এই আমড়া গাছের প্রতি। কৃষিবিদ ড. সাইফুর রহমান জানান, এ ধরনের ছোট ছোট গাছে আমড়া ধরা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার পর সফলতা নিয়ে এনেছেন। প্রতি গাছে শতাধিক আমড়া ধরে। দাঁড়িয়ে থেকে তা উঠানো বা ভাঙ্গা যায়। এ ধরনের গাছ রয়েছে বিশের অধিক কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টারে। প্রচ- চাহিদার কারণে এখন পর্যন্ত বীজ আহরণ করে চারা করা হচ্ছে। সাধারণত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরি করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সহ¯্রাধিক চারা বিক্রি ও বিতরণ করা হয়েছে আগ্রহী চাষীদের মধ্যে। তার অভিমত আগামী এক যুগের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঘরে ঘরে এই আমড়ার গাছ দেখতে পাওয়া যাবে। বনসাই স্টাইলে নিয়ে আসার পেছনে কাজ করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের মুখ্য কর্মকর্তা উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. সাইফুর রহমান। তাকে সহযোগিতা দিয়েছেন কেন্দ্রের সহকারী কৃষিবিজ্ঞানী জোহরুল সাহেব। এই ফলের বৈজ্ঞানিক নাম স্পনডিয়াস পিনেট কার্জ। ইংরেজি নাম গ্লেকপ্লাম, পারিবার এ্যানকারডিয়াসিএই। প্রচ- শীত শেষ হওয়া মাত্র, কিছুটা উষ্ণতা আসামাত্র গাছে গাছে সবুজের আভাযুক্ত শ্বেত বর্ণের ফুল ধরে। সাধারণত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহেই ফুল এসে পড়ে। একটি পরিপক্ব আমড়ার গুদ্দা বা রসালো অংশ ছাড়িয়ে ধুয়ে ছায়াতে শুকাতে হবে। সপ্তাহ খানেক পরে এই বীজ ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ৩০/৩৫ দিনের মধ্যে অঙ্কুরোদগম হয়ে থাকে। কলম পদ্ধতিতে চারা তৈরি করা যায়। বীজ থেকে চারায় ফল আসতে ৫/৭ বছর অপেক্ষা করতে হলেও কলম গাছে ফল পেতে অপেক্ষা করতে হয় মাত্র ৩ বছর। আমড়া শিশুদের কাছে খুব প্রিয় ফল হলেও এর ঔষধিগুণ আকাশ চুঙ্গী। স্কার্ভি রোগে বিশেষ উপকারী এবং রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। রক্তের বিশুদ্ধতার সঙ্গে সঙ্গে দাঁত ও হাড়ের পুষ্টিসাধন করে বলে আর্থাইড রোগীদের কাছে খুব প্রিয়। ক্যারোটিনে ভরপুর বলে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রকম রোগজীবাণুর হাত থেকে দেহকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। চামড়ার কমনীয়তা রক্ষা করে। আমড়ার ছাল উত্তাপনাশক, রক্ত আমাশয়ে উপকারী। পানির সঙ্গে বেটে খেয়ে শিরাগত ও মাংসগত বাতের উপশম হয়। এছাড়া, ফলের শাস পেটের পীড়ায় কাজ করে। এর পাতার রস কানের ব্যথায় উপকারী। আমড়া রন্ধন করলে মুখরোচক হয়। সেই আমড়া এখন হাতের নাগালে আশা শুরু হয়েছে। মাটিতে দাঁড়িয়ে হাত বাড়ালেই আমড়াপাড়া যায়। সেই পাকা আমড়া মধুর ও অম্লস্বাদযুক্ত হবার কারণে বাড়ির মালিকরা পরিপক্ব না হলে কিংবা পাকা দেখা না দিলে গাছ থেকে পাড়ে না এখন আমড়া।
×