ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতা

কক্সবাজার-ঘুমধুমরেললাইন প্রকল্পে অবৈধদের আখড়া

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১১ জানুয়ারি ২০১৮

কক্সবাজার-ঘুমধুমরেললাইন প্রকল্পে অবৈধদের  আখড়া

মাকসুদ আহমদ, দোহাজারি থেকে ফিরে ॥ কক্সবাজার-রামু-দোহাজারি পর্যন্ত ১৪০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়নে অবৈধদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে পূর্বাঞ্চলীয় ভূ-সম্পত্তি বিভাগ। তবে চট্টগ্রামে রেলের জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও প্রকৌশল বিভাগের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতার কারণে আবারও তা গড়ে উঠছে। অপরদিকে, প্রভাবশালী চক্র একদিকে যেমন রেলের আবাসিক এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে, অন্যদিকে রেল লাইনের আশপাশের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণেও পিছিয়ে নেই। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে চট্টগ্রামে রেল উন্নয়নের প্রথম প্রকল্প হিসেবে খ্যাত কক্সবাজার-রামু-দোহাজারি পর্যন্ত ১৪০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি পর্যন্ত অবৈধ স্থাপনার অভাব নেই। অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের আওতায় থাকা চট্টগ্রাম পুরাতন রেল স্টেশন, কদমতলী, ঝাউতলা, ষোলশহর, জানালীহাট, পটিয়া, কাঞ্চননগর ও দোহাজারি স্টেশন এলাকায় রেললাইন ঘেঁষে অবৈধ দখলদাররা তৎপর রয়েছে অবৈধ স্থাপনা গড়তে। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি পর্যন্ত বেশিরভাগ এলাকায় বিভিন্ন ইউনিয়ন ও বাজারকে ঘিরে রেললাইনকে কেন্দ্র করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে গুদাম ঘর, বিভিন্ন রাজনৈতিক সাইনবোর্ড সর্বস্ব সংগঠনের দফতর ও দোকানঘর। তবে চট্টগ্রাম- দোহাজারি রেললাইনের আশপাশ এলাকায় এ ধরনের অনিয়ম বন্ধে ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নেমেছে পূর্বাঞ্চলীয় এস্টেট বিভাগ। এদিকে, বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকা এই প্রকল্পের অধীনে চন্দনাইশের দোহাজারি এলাকায় সম্প্রতি অভিযান চালিয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের নির্দেশে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট ইশরাত রেজা। কিন্তু প্রকৌশল বিভাগের অব্যবস্থাপনার কারণে রাতের আঁধারে দিনের পর দিন রেলের জায়গা গিলে খাচ্ছে ভূমিদস্যুরা। অথচ, রেললাইনের উভয়দিকে ১০ ফুটের মধ্যে কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ হলেও বন্ধ নেই অবৈধ দখলদারদের কালো হাত। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ৪ জানুয়ারি কক্সবাজার-রামু-দোহাজারি পর্যন্ত ১৪০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের আওতায় থাকা চন্দনাইশের দোহাজারিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এই অভিযানে চট্টগ্রাম-দোহাজারি রেললাইনের পাশে থাকা প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের দেড় একর জায়গা থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করেছেন রেলওয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ইশরাত রেজার নেতৃতে থাকা প্রায় ৫০ সদস্যের একটি টিম। বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে প্রায় ২শ’ কাঁচা-পাকা স্থাপনা। এ সময় কিছু অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রশাসনের চাপের মুখে তাদের অপচেষ্টা ভেস্তে যায়। এর আগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর নগরীর কদমতলী লেভেল ক্রসিং এলাকায় রেলের জায়গায় ভিত্তিপ্রস্তর দিয়ে পাঁচতলা ভবন নির্মাণের সময় গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জানালীহাট স্টেশন এলাকায় রেললাইনকে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রায় আড়াই শ’ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। অভিযানে প্রায় ৮০ কোটি টাকা মূল্যের দেড় একর জায়গা উদ্ধার করেছে। কিন্তু প্রকৌশল বিভাগ কোন উদ্যোগ না নেয়ায় আবারও বেদখল হয়ে যাচ্ছে এই মূল্যবান ভূমি। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর দোহাজারি রুটের জানালীহাট স্টেশন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার কথা ছিল। এ ব্যাপারে রেলের ম্যাজিস্ট্রেট ও ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা ইসরাত রেজা জনকণ্ঠকে জানান, কক্সবাজার-রামু-দোহাজারি পর্যন্ত ১৪০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পকে প্রধান্য দিয়ে এই রুটে দফায় দফায় অভিযান পরিচালিত হচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি স্টেশন পর্যন্ত অবৈধদের বিরুদ্ধে। রেললাইনের উভয় দিকের গুরুত্বের ওপর ভিত্তি করে ১০ ফুটের মধ্যে যে কোন স্থাপনা তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু ঐ এলাকায় অনেকটা রেললাইন ঘেঁষেই তৈরি করা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। ফলে আমাদের বুলডোজারেরও অনেক সময় লেগেছে। রেলের পূর্বাঞ্চলীয় প্রকল্প পরিচালকের দফতর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের পর্যটকদের জন্য রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিকল্পনা করা হয় ২০১০ সালের জুলাই মাসে। যেহেতু চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি পর্যন্ত আগে থেকেই রেললাইন রয়েছে। দোহাজারি থেকে ১৪০ কিলোমিটার রেললাইন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। দোহাজারি থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটারসহ ১৪০ কিমি. রেললাইন নির্মাণ করা হবে। প্রায় ৮ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এই প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ২০১৩ সালে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক প্রকল্প যাচাই ও পরীক্ষা নিরীক্ষাও চালায়। ১৪০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ৪৩টি ছোট বড় সেতু ও ১৪৪টি লেবেল ক্রসিংও নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ১ হাজার ৪১১ দশমিক ৫১ একর ভূমি অধিগ্রহণে ৩১২ কোটি টাকা বরাদ্দের হিসেব-নিকেশ রয়েছে। ২০২০ সাল নাগাদ কক্সবাজার-রামু-দোহাজারি পর্যন্ত ১৪০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা।
×