ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যমুনার নাব্য সঙ্কট

বাঘাবাড়ী বন্দরের সঙ্গে নৌ-যোগাযোগ বন্ধ

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১১ জানুয়ারি ২০১৮

বাঘাবাড়ী বন্দরের সঙ্গে  নৌ-যোগাযোগ বন্ধ

কৃষ্ণ ভৌমিক, পাবনা ॥ যমুনার নাব্য সঙ্কটে বাঘাবাড়ী বন্দরের সঙ্গে নৌযোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। শনিবার থেকে জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য পণ্যবাহী জাহাজ বাঘাবাড়ী বন্দরে যেতে পারছে না। বাঘাবাড়ী বন্দরের ৩০ কিলোমিটার ভাটিতে নগরবাড়ীর উজানে ৪৯ লাখ লিটার জ্বালানি তেল ও ৩৫ হাজার বস্তা রাসায়নিক সারভর্তি ৮টি কার্গোজাহাজ আটকা পড়েছে। চিটাগাং থেকে জ্বালানি তেল ও রাসায়নিক সার নিয়ে এ জাহাজগুলো বাঘাবাড়ী বন্দরে যাচ্ছিল। বাঘাবাড়ী-আরিচা নৌরুটে নগরবাড়ীর উজানে নাব্যতা সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করায় জাহাজগুলো বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দরে পৌঁছাতে পারছে না। আবার বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজগুলো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। এদিকে বিআইডাব্লিউটিএ যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজিং করে পলি মাটি নদীতেই ফেলায় স্রোতের টানে পলিমাটি ভাটিতে গিয়ে ডুবোচরের সৃষ্টি হচ্ছে।জানা যায়, বাঘাবাড়ী অয়েল ডিপো’র পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি কোম্পানির বিপণন কেন্দ্রে প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ লিটার জ্বালানি তেল আপদকালীন মজুদ আছে। বাঘাবাড়ী থেকে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় সেচ মৌসুমে প্রতিদিন ৩৬ লাখ লিটার জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। নাব্যতা সঙ্কটে গত শনিবার থেকে জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য পণ্যবাহী জাহাজ বাঘাবাড়ী বন্দরে পৌঁছাতে পারছে না। ফলে আপদকালীন মজুদ থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। ওই পরিমাণ মজুদ দিয়ে মাত্র ১৬ দিনের জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। নাব্যতা সঙ্কট দ্রুত নিরসন না হলে এ অঞ্চলে সেচ ও সারনির্ভর বোরো আবাদ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে বলে কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন । সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সার ও পণ্যবাহী কার্গো চলাচলের জন্য ১০ থেকে ১১ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন। বাঘাবাড়ী বন্দরের ৩০ কিলোমিটার ভাটিতে নগরবাড়ীর উজানে আধা কিলোমিটার এলাকায় পানির গভীরতা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬ থেকে ৭ ফুট। গত শনিবার থেকে নগরবাড়ীর উজানে ৩৫ হাজার বস্তা টি এসপি, এমওপি, ডিওপি ও ইউরিয়া সার এবং ৪৯ লাখ লিটার জ্বালানি তেল বোঝাই এমভি সাদিয়, এম ভি অনিক, এম ভি সিলিং বিজয়, এম ভি আছরসহ ১২টি জাহাজ যমুনা নদীতে আটকা পড়েছে। আটকা পড়া জাহাজের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। নবেম্বর মাসে ১০ লাখ লিটার জ্বালানি তেল নিয়ে বাঘাবাড়ী বন্দরে এসেছে। ডিসেম্বরে কমে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ লিটারে। এখন জাহাজ চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। এই বন্দরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কর্মরত ৫ হাজার শ্রমিক পরিবারে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বিসিআইসি’র বাঘাবাড়ী ট্রানজিট বাফার গুদাম সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ১৪টি বাফার গুদামে রাসায়নিক সার চাহিদার ৯০ ভাগ বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে যোগান দেয়া হয়। এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা রাসায়নিক সার সড়ক পথে বাফার গুদামগুলোতে সরবরাহ করা হয়। যমুনা নদীর নাব্যতা সঙ্কটে বাফার গুদামগুলোতে আপদকালীন সারের মজুদ গড়ে তোলার কাজ চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে। বিসিআইসি’র বগুড়া আঞ্চলিক অফিসের একটি সূত্র জানান, ইরি-বোরো আবাদ মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে ১২ লাখ টন রাসায়নিক সারের প্রয়োজন। ১৪টি বাফার গুদামে আপদকালীন মজুদ আছে দুই লাখ ৮০ হাজার টন। নয় লাখ টন সার বিভিন্ন পথে আমদানি করা হচ্ছে। তবে প্রয়োজনের বেশির ভাগ সার বাঘাবাড়ী বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়। যমুনা নৌরুটে নাব্যতা সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় আপদকালীন সার মজুদের কাজ বিঘিœত হচ্ছে। এ নৌপথের ১০টি পয়েন্টে নাব্যতা সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সময় মতো বিআইডাব্লিউটিএ ড্রেজিং না করায় নদীতে নাব্যতা না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
×